সুমন রায়, নরসিংদী

  ২৩ জুন, ২০২২

নরসিংদীতে সাবেক ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

নরসিংদী সদর উপজেলার হাজীপুরে সুজিত সূত্রধর (৫৫) নামে এক সাবেক ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন তার ছেলে সুজন সূত্রধর (২৭) ও ঘটনাস্থলে থাকা দ্বীন ইসলাম (৫০) নামের আরও দুইজন।

বুধবার (২২ জুন) রাতে হাজীপুর ইউনিয়নের বেঙ্গল এলাকার কাঠবাজারে নিহতের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

নিহত সুজিত সূত্রধর হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ছিলেন। তিনি হাজীপুরের বেঙ্গল এলাকার কাঠবাজারের একজন প্রতিষ্ঠিত কাঠ ও ফার্নিচার ব্যবসায়ী।

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, এই হত্যাকান্ডে সরাসরি ভূমিকা রয়েছে হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পিন্টুর। ইউপি সদস্য থাকাকালীন পিন্টু চেয়ারম্যান, তার ছোটভাই মনির ও ইউপি সদস্য বদুসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ একাধিক মামলা করেছিলেন সুজিত। এর জের ধরেই বুধবার রাতে পিন্টু চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার ছোটভাই মনিরের নেতৃত্বে ৭/৮ জন এই হত্যাকান্ডে অংশ নেন। তারা বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, হত্যাকান্ডের সময় নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে পেপার পড়ছিলেন সুজিত সূত্রধর ও তার ছেলে সুজন সূত্রধর। ঘটনার কিছুক্ষণ আগে পিন্টু চেয়ারম্যান, তার ভাই মনির ও ইউপি সদস্য বদু ওই এলাকা ঘুরে গিয়েছিলেন। তারা চলে যাওয়ার পর রাত ৮টার দিকে পিন্টু চেয়ারম্যানের ছোটভাই মনিরের নেতৃত্বে তানভীর, দেলো, নয়ন, রাকিব, তারেক, মামুন ও কানু ধারালো অস্ত্র নিয়ে ওই দোকানে ঢুকে পড়েন। এ সময় দোকানে বার্নিশের কাজ করা শ্রমিকদের সরিয়ে দিয়ে সুজিত সূত্রধরকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন তারা। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ সময় বাধা দিতে গেলে সুজন ও দ্বীন ইসলামকেও কুপিয়ে আহত করা হয়।

পরে হামলাকারীরা চলে গেলে উপস্থিত লোকজন ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের তিনজনকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুজিতকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর আহত দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন তিনি। পরে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ এসে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. লোপা চৌধুরী জানান, সুজিত সূত্রধরকে মৃত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার গলা ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাত করায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

নিহত সুজিত সূত্রধরের ছেলে আহত সুজন সূত্রধর বলেন, মামলার কারণে আমার বাবাকে প্রায়ই হুমকি-ধামকি দিতেন পিন্টু চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। আগেও বিভিন্ন সময়ে কয়েকদফা বাবাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন তারা। তাছাড়া হাজীপুরে ঘটে যাওয়া দুটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মামলার আসামিও তারা। এ সময় সুজন বলেন, আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই।

এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পিন্টু, তার ভাই মনির ও ইউপি সদস্য বদুর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করার পর তিনজনেরই ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানান, আমরা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের ছেলের সঙ্গে কথা বলে কারা কারা জড়িত তাদের নাম জেনেছি। পূর্বশত্রুতার জের ধরেও এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে ঠিক কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড, তা নিশ্চিত হতে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নরসিংদী,হাজীপুর,সদর উপজেলা,সাবেক ইউপি সদস্য,ফার্নিচার ব্যবসায়ী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close