এনামুল হক বাদশা, সিংড়া (নাটোর)

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

চলনবিলে মধু সংগ্রহে স্বাবলম্বী বাবুল 

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

আজ থেকে সাত বছর আগের কথা। তখন বাবুল নামের ৫৫ বছর বয়সী এই মৌচাষী ছিলেন পেশায় একজন গ্রাম্য চিকিৎসক। সবাই ডাকতেন বাবুল ডাক্তার নামে। মাত্র সাত বছরে তার নাম পদবীর এই পরিবর্তন এনে দিয়েছে মৌচাষ করে। মেধা শ্রম আর সময় কাজে লাগিয়ে বাবুল এখন সফল মৌচাষী হিসাবে এলাকায় পরিচিত হয়েছেন। এলাকার এখন আর কেউ বাবুল ডাক্তার নামে ডাকেন না। সবাই মধু বাবুল নামে ডাকেন ও চেনেন।

সরিষার মৌসুমসহ বছরের সাত মাসে ১০০ মণ থেকে ১১০ মণ মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষী বাবুল। এর মধ্যে সরিষা থেকে মধু সংগ্রহ হয় ৪০মণ থেকে ৪২মণ। এতে খরচ বাদে বছরে তার আয় হয় সাত লাখ থেকে আট লাখ টাকা।

এক সময়ের গ্রাম্য চিকিৎসা করে কোন রকম সংসার চালানো সেই বাবুল আজ স্বাবলম্বী একজন মানুষ। মৌচাষী এই বাবুলের বাড়ি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশভাত গ্রামে। সিংড়া উপজেলার ডাকমুন্ড বাজারে আছে তার মৌ খামার। খামারে আছে ৬০টি মৌবাক্স। খামারে কাজ করেন চারজন কর্মচারী। চলনবিল অধ্যুষিত এ অঞ্চলের দিগন্ত মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে হলুদ সরিষা।

মৌচাষী বাবুল জানান, বছরে সাত মাস মধু সংগ্রহ করা গেলেও অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ এই তিন মাস সরিষা থেকে তার সবচেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ হয়। সরিষার মৌসুম শেষে বাকি চার মাস তিনি ধনিয়া, কালোজিরা ও লিচু থেকে মধু সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত এই মধু অনলাইনের মাধ্যমে আটশ থেকে এক হাজার টাকা মণ হিসাবে ঢাকা, খুলনাসহ বিভিন্ন পাইকারী বাজারে বিক্রয় করেন তিনি।

এছাড়া তার খামার থেকে খুচরা সাড়ে তিনশ থেকে চারশ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হয়। তবে মধুর পাইকারী বাজারে অনেক সিন্ডিকেটের কথা জানালেন মৌচাষী বাবুল। সরকারিভাবে ন্যায্য মুল্যে মধু সংগ্রহের দাবি তার।

শুরুটা কীভাবে হয়েছিল জানতে চাইলে মৌচাষী বাবুল বলেন, ২০১৪ সালে নাটোর কৃষি মেলায় গিয়ে মৌচাষ প্রশিক্ষণের উপর নাটোর বিসিকের একটি নিয়োগ দেখি। এরপর যোগাযোগ করে সেখানে ১৫ দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করি মৌচাষ। পরে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ নেই। এখন আমি মৌচাষের পাশাপাশি বিসিকের একজন ট্রেইনার হিসাবেও কাজ করছি।

মাত্র সাত বছরে মৌচাষে একজন সফল মানুষ বাবুল। তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নাটোর শহরে জায়গা কিনেছেন। গ্রামের বাড়িতে কিনেছেন ধানী জমি। সবমিলে স্বচ্ছল সংসার মৌচাষী বাবুলের। বাবুলের এমন সফলতার সুনাম দেখে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে অনেকেই এগিয়ে আসছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সেলিম রেজা বলেন, সিংড়া উপজেলায় সরিষা ক্ষেতে ২৪৯টি মৌবাক্স স্থাপন করে মৌচাষীরা মধু সংগ্রহ করছেন। এবছর প্রথমবারের মত কৃষি অফিস থেকে আমরা ১০জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষককে আধুনিক মৌবাক্স দিয়েছি। সরিষার এই সময়ে মধু সংগ্রহ করে কৃষকরা বাড়তি আয় করছেন। আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি। আশা করছি আগামীতে এই এলাকায় সরিষা আবাদের পাশাপাশি মৌচাষীর সংখ্যাও বাড়বে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চলনবিল,মধু সংগ্রহ,স্বাবলম্বী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close