সবুজ হোসেন, নওগাঁ

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২১

শিশুটি জানে না বাবার পরিচয়, মা চায় অধিকার

মায়ের কোলে বসে আছে চার বছরের অবুঝ শিশু। বার বার বাবা বলে ডাকছে। কিন্তু জানে না কে তার বাবা। মাকে বলছে কখন তার বাবা বাড়ি ফিরবে। অসহায় মায়ের চোখেমুখে একরাশ হতাশা ও অশ্রু। কি উত্তর দেবেন মা, তা যে জানা নেই। মায়ের গর্ভে ১০ মাস ১০ দিন ধারণ করে জন্ম দেয়া সন্তান যে পিতৃত্ব পরিচয়হীন। বাবা কাজে বাইরে গেছেন, ফিরে আসবেন খুব তাড়াতাড়ি—এই বলে দিনের পর দিন অবুঝ শিশুটিকে শান্ত্বÍনা দিয়ে যাচ্ছেন অসহায় মা।

শিশুটি আর কিছুদিন পর স্কুলে যাবে। পরিচয় হিসেবে মা’র নামের সঙ্গে জুড়ে দিতে হবে বাবার নামটাও। সে বড় হচ্ছে। কিন্তু জানে না কে তার বাবা। আর বাবার পরিচয় ছাড়াই মায়ের কাছে গত চার বছর থেকে লালন পালন হয়ে আসছে। ভুক্তভোগীর পরিবার আদিবাসী সম্প্রদায় এবং ছেলের পরিবার হিন্দু হওয়ায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। এমন এক অসহায় আদিবাসী পরিবার নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বাসিন্দা। আর যুবক চন্দন কুমার হিরো (২৬) একই উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের লক্ষিকোলা গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিতোষ চন্দ্র মন্ডলের ছেলে। এদিকে ধীরগতির কারণে থমকে আছে মামলার রায়ও। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হয়ে শিশুটি তার বাবার পরিচয় এবং মা তার স্বামীর অধিকার ফিরে পাক।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় কিশোরী মেয়েকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতেন চন্দন কুমার হিরো। একসময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর গড়ায় শারীরিক সম্পর্কে। বিয়ের প্রলোভনে দিয়ে একাধিকবার তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। এক পর্যায়ে কিশোরী মেয়েটি অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়েন। এরপর মেয়েটি বার বার হিরোকে বিয়ের জন্য বললেও কোনো কর্ণপাত করেননি। একসময় দূরত্ব বাড়তে থাকে। মেয়েটি যখন চার মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা, তখন বিষয়টি তার পরিবারকে জানান। এরপর যুবক হিরো বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

গত ১২/০৪/২০১৬ তারিখে স্থানীয়ভাবে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রামের মোড়লরা সমাধানের চেষ্টা করেন। হিরো বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ায় সালিসে তার বাবা পরিতোষ চন্দ্র মন্ডল উপস্থিত থাকেন এবং মেয়েটিকে পুত্রবধূর স্বীকৃতি দেবেন মর্মে অঙ্গীকার করে বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর থেকে মেয়ের ওপর বিভিন্নভাবে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। থানা পুলিশের সহযোগিতায় ১২ দিন পর মেয়েকে উদ্ধার করেন তারা বাবা-মা। পরে মেয়ের বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চন্দন কুমার হিরোর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। মামলায় তাকে আটক করে জেল হাজতে পাঠায়। প্রায় তিনমাস কারাভোগ করেন হিরো।

আদালতে মামলা চলমান। এদিকে কিশোরী মেয়েটি এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। বর্তমানে ছেলের বয়স চার বছর। কিশোরী থেকে মেয়েটি এখন যুবতী। শিশুটি তার পিতৃপরিচয় ও মেয়েটি স্বামীর অধিকার পেতে দুঃশ্চিন্তায় আছেন। দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি করে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হোক।

ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, হিরো তাদের মেয়েকে প্রলোভন দিয়ে সর্বনাশ করেছে। যে শিশুটির জন্ম হয়েছে তার পিতৃপরিচয় প্রয়োজন। কয়েকদিন পর জন্মনিবন্ধনে বাবার নাম দিতে হবে।

মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করে চন্দন কুমার হিরো বলেন, ওই বাচ্চার বাবা আমি না। বাচ্চাটা সে তার পেটে ধরেছে। তার সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও কোনো ধরণের শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। তারা দাবি করতেই পারে। যদি তারা প্রমাণ করতে পারে আমার ঔরশে বাচ্চা, তাহলে বাবার স্বীকৃতি দেবো। মামলা চলমান, আদালতে বোঝাপড়া হবে।

ছেলের বাবা পরিতোষ চন্দ্র মন্ডল বলেন, আমাদের ফাঁসানোর জন্য মেয়েটিকে আমার ছেলের সঙ্গে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। সালিসে জোর করে মেয়েটি আমার বাড়িতে উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় ছেলে বাড়ি ছিল না। আর মেয়েকে নির্যাতনও করা হয়নি।

নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর স্পেশাল অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ওই আদালতে বিচারক না থাকায় মামলা ঝুলে আছে। স্যার যোগদান করলে এবং সাক্ষী হলে মামলাটি দ্রুত শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘ডিএনএ’ নমুনা সংগ্রহের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শারীরিক সম্পর্ক,শিশু,নওগাঁ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close