সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৩ জুলাই, ২০১৯

বন্যা প্রতিরোধী ভাসমান উভচর বাড়ি

ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের নিত্যসঙ্গী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এসব দুর্যোগ আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। এসব দুর্যোগ থেকে বাঁচার কৌশল বের করার প্রয়োজনীয়তাও দেখা দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে যমুনা বিধৌত সিরাজগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকায় নির্মিত হচ্ছে ভাসমান উভচর বাড়ি। যতই ভয়াবহ বন্যা হোক, বন্যার পানি যতই বাড়ুক, কোনো সমস্যা নেই, বাড়িটি সবসময় পানির ওপর ভাসমান থাকবে, আর শুষ্ক মৌসুমে তো থাকবে স্বাভাবিক বাড়ির মতোই।

বর্ষা মৌসুমে সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা কবলিত এলাকায় বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আর এই দুর্ভোগের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে নির্মিত হচ্ছে ভাসমান উভচর বাড়ি। এই বাড়ি নিয়ে এলাকায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতুহল ও আশার সঞ্চার তৈরি হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বিশেষভাবে নির্মিত এই বাড়ি বন্যার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠবে আবার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যথাস্থানে বসে যাবে।

সিরাজগঞ্জ শহরের রানীগ্রাম এলাকায় নির্মিত এই ভাসমান বাড়ি দেখতে এরই মধ্যে উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন। বন্যা কবলিত এলাকার অনেক মানুষ এই বাড়ি নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

এই ধরনের প্রযুক্তি বাংলাদেশে এই প্রথম। আরবানাইজিং ডেল্টাস অব দ্য ওয়ার্ল্ড প্রকল্পের আওতায় বাড়িটি নির্মাণে কাজ করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর বাংলাদেশ প্রজেক্ট এবং নেদারল্যান্ডসের আইএইচই ডেলক্ট। এদের সহযোগিতায় সিরাজগঞ্জে বেসরকারি সংস্থা সার্প প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। এই বাড়ি তৈরিতে নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। বাড়িটি নির্মাণের খরচ বহন করেছে নেদারল্যান্ডসের আইএইচই ডেলক্ট।

এই বাড়ি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নেদারল্যান্ডস থেকে আনা বিশেষ ধরনের ভাসমান শিট, স্থানীয় কক শিট, কাঠ ও টিন। বাড়িটি নির্মাণ খরচ পড়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা জানায়, স্থানীয় প্রযুক্তিতে এই বাড়ি নির্মাণে খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে।

বাড়ির মালিক আছিয়া বেগম জানান, প্রতি বছরই আমাদের এলাকায় বন্যা হয়। এই সময় গবাদি পশু ও পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়। জান-মালের অনেক ক্ষতি হয়। সে সময় দুর্ভোগের সীমা-পরিসীমা থাকে না। সার্প আমাদের এই বাড়ি করে দেওয়ায়, আমরা সে দুর্ভোগ থেকে এবার রেহাই পেয়েছি। তিনি জানান, এলাকার আরো মানুষ এই ধরনের বাড়ি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সার্পের নির্বাহী প্রধান মো. শওকত আলী জানান, সরকারের অনুমতিক্রমে আমরা বন্যা প্রবন এলাকায় প্রতি বছরই বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হয়।

যমুনার ভাঙনকৃত সিরাজগঞ্জ জেলার মানুষকে বন্যার সময় মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এই কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শাহ আলম খান নেদারল্যান্ডসের প্রফেসর ক্রিস্টিয়ান জেভেনবার্গেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তাদের প্রযুক্তি ও আর্থিক সহযোগিতায় এই বাড়ি নির্মাণ করা হয়।

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শাহ আলম খান বলেন, এই বাড়ির স্থায়িত্ব হবে প্রায় ৫০ বছর। তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছরই বন্যা হয়। এতে বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। যদি সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানরা এই বাড়ি নির্মাণের প্রকল্পে এগিয়ে আসেন, তাহলে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ অনেকাংশেই লাঘব হবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উভচর বাড়ি,বন্যা,সিরাজগঞ্জ,বন্যা প্রতিরোধ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close