অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

  ১৪ জুন, ২০২৩

আয়কর আইন ২০২৩

ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক কর হ্রাস চায় ফিকি

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে করপোরেট খাতে ন্যূনতম করসীমা হ্রাস, উৎসাহ বোনাসের উপর কর প্রত্যাহার এবং কর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমানোসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে ফরেন ইনভেস্টরস’ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)।

বুধবার (১৪ জুন) জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ এবং আয়কর আইন-২০২৩ এর খসড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। এছাড়া খসড়া আয়কর আইনটি কার্যকর হলে তা দেশের ব্যবসাখাত ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের উপর প্রভাব ফেলবে বলেও সতর্ক করে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় বরাদ্দের জন্য প্রশংসা করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, কৃষি এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দের অপ্রতুলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

অন্যদিকে, খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর কিছু বিধান আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর বিবেচনায় অযৌক্তিক বিবেচনায় এগুলো গভীর ও বিস্তৃত পর্যালোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করে সংগঠনটি।

সংগঠনটির পক্ষে বলা হয়, ফিকি আশা করেছিল নতুন আইনে ন্যূনতম কর বিধানগুলো ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হবে। তার পরিবর্তে সেগুলো উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে কার্বোনেটেড পানীয় শিল্পের (বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি) ন্যূনতম কর দশমিক ছয় শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মোট প্রাপ্তির পাঁচ শতাংশ (৮ গুণ) বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যার ফলে কোমল পানীয়ের দাম ৩০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।

ফিকি জানায়, এই খাতে ইতোমধ্যে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি পরোক্ষ কর (এসডি + ভ্যাট) ৪৩.৭৫ শতাংশ দিতে হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর ফলে পণ্যের ভোগ কমে যাবে এবং পরবর্তীতে সরকারি কর আদায় হ্রাস পাবে, যা শেষ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং এই খাতে কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এই শিল্পের বিকাশে সরকারকে ন্যূনতম কর এক শতাংশ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের বিষয় হলো ধার্য করের বিধান থেকে একটি অনুবিধি বাদ দেওয়া। এই অনুবিধির অনুপস্থিতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে এবং বিধানটি তার কার্যকারিতা হারাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর মতো একই বিধান প্রস্তাবিত আইনে বা বিধিতে অব্যাহত না থাকলে আধুনিক বাণিজ্যে ডিস্ট্রিবিউটরদের সরবরাহের উপর করের বোঝা, আমদানিকৃত পণ্যের সরবরাহ, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

এছাড়া প্রস্তাবিত আইনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রণোদনা বোনাসকে অতিরিক্ত লভ্যাংশ দেখিয়ে তার উপর কর ধার্য করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিকি। সংগঠনটির পর্যালোচনায়, এটি কোম্পানির উপর আরও করের বোঝা চাপিয়ে দেবে এবং পরবর্তীতে কর্মচারীদের উপার্জনের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যবসায়িক ক্ষতির বিপরীতে অন্য আয় সচল রাখার অনুমতি না দেওয়া করের চেতনার বিরুদ্ধে যায়। পাশাপাশি, বিদেশি ঋণের সুদের উপর করের বিধান এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ দিতে ব্যর্থতায় তার সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক অননুমোদন করার বিধানটিও বাদ দেওয়া উচিত বলে মনে করে ফিকি।

করপোরেট এবং সংস্থাগুলোর জন্য নগদ লেনদেন সীমিত করা দেশের উন্নয়নকে সীমাবদ্ধ করবে, কারণ বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি নগদহীন লেনদেন করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। সরকারের উচিত কোম্পানিগুলোর নগদ লেনদেনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ না করে তার খরচের ন্যূনতম শতাংশ ব্যয় করার অনুমতি দেওয়া। যেন পরবর্তী পাঁচ বছরে ধীরে ধীরে তারা শতভাগ নগদহীন লেনদেনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।

এদিকে সম্পত্তির উপর বর্ধিত কর জনগণকে সরকারি দলিলে প্রকৃত সম্পত্তির মূল্য উল্লেখ না করে মৌজা রেট উল্লেখ করতে প্রণোদিত করবে বলে মনে করে সংগঠনটি। এটি সরকারকে করের বিশাল একটি উৎস থেকে বঞ্চিত করতে পারে। যে কারণে সম্পত্তি কর লেনদেনের খরচ বৃদ্ধি করার পরিবর্তে তা যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে আনা উচিত এবং বাজার মূল্য প্রতিফলিত করার জন্য মৌজা মূল্যকে পর্যায়ক্রমে আপডেট করতে হবে।

আবার কর পদ্ধতিতে কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা হ্রাসের প্রস্তাব করেছে ফিকি। নিরবিচ্ছিন্ন লেনদেনের জন্য এনবিআরের তিনটি শাখা এবং বাইরে থেকে সংযুক্ত সিস্টেমগুলোর ডিজিটালাইজেশন করার পরামর্শ দিয়েছে।

খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩ অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীগণ এখন থেকে ডব্লিওপিপিএফ, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ডিভিডেন্ড থেকে আয়ের উপর আর কোনো ছাড় পাবেন না। লিভ ফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্স (এলএফএ) এখন থেকে করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা কি আদৌ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে কি না এবং সেটা থেকে করে কর ছাড় পাওয়া যাবে কি না সে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা নেই। মিউচুয়াল ফান্ড/ইউনিট তহবিল এবং সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। বেসরকারি স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে কর আরোপ করা কর্মীদের আয় হ্রাস করবে এবং সরকারি ভবিষ্যৎ তহবিলকে করমুক্ত হিসাবে রাখার বিষয়টি বৈষম্য সৃষ্টি করবে। ফিকি সরকারকে এই বিধানটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করে কারণ এটি ব্যক্তির মোট আয়ের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট এবং খসড়া আয়কর আইন ২০২৩ নিয়ে ফিকি’র সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “আমাদের সরকার যে প্রগতিশীল পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নের দিকে নজর দিচ্ছে তা প্রশংসনীয়। তবে, কিছু বিধান বাস্তবায়ন হলে ব্যবসা এবং ব্যক্তির প্রবৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত ভ্যাট এবং লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর ওপর করের বোঝা বাড়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সম্ভাব্য প্রতিকূল পরিস্থিতি এড়াতে পারে এমন সমাধানের বিষয়ে আমাদের কিছু সুপারিশ রয়েছে। আমরা আশা করি যে সুপারিশগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং চেম্বারকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অব্যাহত সমর্থন রেখে কর-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে একসাথে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে ফিকি থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দীপাল আবেইউক্রেমা, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশীদ, ট্যারিফ-ট্যাক্সেশন ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির কো-অর্ডিনেটর সাজ্জাদ রহিম চৌধুরী, ট্যারিফ-ট্যাক্সেশন ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য দেবব্রত রায় চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির এবং কনসালট্যান্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আয়কর আইন,ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক কর,ফিকি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close