নিজস্ব প্রতিবেদক
স্কুল শিক্ষার্থীরা জমিয়েছে ১৪৪১ কোটি টাকা
দেশের স্কুল শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ব্যাংকে ১ হাজার ৪৪১ কোটি জমিয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকে লেনদেন করছে প্রায় ১৪ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ জন শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, গ্রাম অঞ্চলের ব্যাংক শাখার মাধ্যমে খোলা স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের তুলনায় শহরাঞ্চলে স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা প্রায় ৫৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলের ব্যাংকে জমার পরিমাণও প্রায় ২২০ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৭৯০ জন স্কুলছাত্র তাদের ব্যাংক হিসাবে ৭৮৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা জমিয়েছে। আর ৬ লাখ ১৪ হাজার ৭০ জন স্কুলছাত্রী জমিয়েছে ৬৫২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। মার্চ পর্যন্ত গ্রামের ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৩১১ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ব্যাংকে ৩৪৩ কোটি টাকা জমা রেখেছে। শহরের ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৯ জন শিক্ষার্থী জমা করেছে ১ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ৯ লাখ ৯৩৬ জন স্কুল শিক্ষার্থী জমা করেছে ১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ৩৯ হাজার ৮৪১টি হিসাব খোলা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ৪ লাখ ২৮ হাজার শিক্ষার্থী জমিয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা।
মার্চ পর্যন্ত সময়ের তথ্য নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকে লেনদেন করছে প্রায় ১৪ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ জন শিক্ষার্থী। তবে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের হিসাব ও টাকা জমার পরিমাণ অনেক কম। ব্যাংক লেনদেনে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ২০১০ সালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের উদ্যোগ নেন। অবশ্য স্কুলের শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বছরে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয় ২৯ হাজার ৮০টি। ওই বছর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা দেশের ব্যাংকগুলোতে ৩০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আমানত রাখে। শুরুতে ১০ টাকা দিয়ে হিসাব খোলা হলেও পরে হিসাব খুলতে ১০০ টাকা জমা রাখতে বলা হয়। এসব হিসাব সাধারণ চলতি হিসাবে রূপান্তরের সুযোগও আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে ১৪ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ জন স্কুলের ছেলেমেয়ে ব্যাংকে জমিয়েছে ১ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৩০ জুন ৫৬টি ব্যাংকে খোলা হিসাব ছিল প্রায় ১৩ লাখ ৩৪ হাজারটি। সেই হিসাবে ৯ মাসের ব্যবধানে ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫২২টি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালের ২ নভেম্বর স্কুল ব্যাংকিং বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করে। এরপর থেকেই স্কুল পড়ুয়াদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় মুনাফার নানা স্কিম চালু করে।
জানা যায়, স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংককে সঙ্গে নিয়ে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্স সম্পন্ন করেছে। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ বাড়ছে ব্যাপকভাবে।
জানা যায়, ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সী অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির আগ্রহী ছাত্রছাত্রীরা তাদের বাবা-মা অথবা বৈধ অভিভাবকের সঙ্গে যৌথ নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। মাত্র ১০০ টাকা প্রাথমিক জমা দিয়ে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাংকের শাখায় এই হিসাব খোলা যায়। এই হিসাবে কোনো ফি বা চার্জ আরোপ করা হয় না। এমনকি ন্যূনতম স্থিতি রাখার বাধ্যবাধকতাও নেই।
"