আনোয়ারা আজাদ

  ৩০ জুন, ২০১৭

জানালার বাইরে

সন্ধ্যে কেবল আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মৃদুমন্দ বাতাস শুরু হয়ে গেছে। তার ভেতর দিয়েই জিসান হন হন করে টিএসসির দিকে হেঁটে আসছে, দেখতে পেল রিফাত। সে ১০ মিনিট আগে এসে পৌঁছেছে, এখন বসে বসে বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করছে আর বাতাসের কত্থক নাচ দেখছে। সেদিন যেমন টিএসসির ভেতরে একটা অনুষ্ঠানে আইরিনের নাচ দেখেছিল। স্টেজে ওঠার আগে ঘোষক বলেছিল নাচটা কত্থক, তা না হলে রিফাতের জানা সম্ভব ছিল না নাচটা আসলে কী নাচ। নাচের ওপরে তার কোনো জ্ঞান নেই, গানের ওপরেও নেই। সে কিছুটা কবিতা নিয়ে নাচানাচি করে বটে, মানে ভালোমন্দ কিছুটা বোঝে; কিন্তু নাচ, গান সম্পর্কে একেবারেই জিরো। রিফাত, জিসান আর পার্থ তিনজনে ক্লাস নাইন থেকে বন্ধু। তিনজনে একসঙ্গে সিগারেট ধরা থেকে শুরু করে পর্ন ছবি দেখাসহ খুঁটিনাটি সব বিষয় তারা একে অপরেরটা জানে। কোনো মেয়ের প্রতি কখন কার দুর্বলতা জন্ম নিতে চাচ্ছে, সেসব তো আছেই। ইউনিভার্সিটি শেষ করে তিনজনই পাঁচ বছর ধরে চাকরিতে এখন। তিনজনেরই দুটো করে মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরে চলে যাওয়ার মতো সম্পর্ক গড়ে ওঠে আবার ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়ার পর তারা দিব্বি করেছে, আর কোনো মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াবে না। মেয়েগুলো একেবারে যাচ্ছেতাই, কিচ্ছু বুঝতে চায় না! জিসান আর পার্থ এ রকম সব যাচ্ছেতাই মেয়ের সঙ্গে না মেশার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ছয় মাসের মধ্যে যথাক্রমে শাওন ও লিসার সঙ্গে সম্পর্ক করে বিয়ে করে ফেলেছে আর রিফাত এখনো মনের মতো একজনকে খুঁজছে। মাঝে মধ্যেই একে ওকে নিয়ে ভাবনা শুরু হয়ে যাওয়ার আগেই তার দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এখন তাই সামান্য নিরাশ সে। টিএসসিতে আইরিনের নাচ দেখে ভালো লেগে যাওয়াতে ভেবেছিল একটা সুযোগ নেওয়া যায় কি না। খোঁজ নিয়ে দেখে আইরিন আগেই রাকিব নামে একজনের সঙ্গে ঘর বিছানা ভাগাভাগি করে কত্থক নেচে বেড়াচ্ছে। সংবাদটা পেয়ে রিফাত বিমর্ষ হয়নি, এমন হতেই পারে! আইরিনই তো আর একা কত্থক নাচে না! যেহেতু নাচ বিষয়টা তার ভালো লেগেছে, তাই মনে মনে নাচের মেয়েকেই সে খুঁজছে, শোনে জিসান আর পার্থ ওকে একটা লণ্ঠন কিনে দেওয়ার কথা ভাবছে।

জিসান কাছে এগিয়ে আসতেই রিফাত ওর মুখের মাংসপেশির দিকে তাকিয়ে ভুরু জোড়া করে। বিষয় কী! কেউ কি ফোনে চাঁদা চাইছে? কিংবা অফিশিয়াল ট্রান্সফার! সম্ভাব্য এ দুটো বিষয়ই চট্ করে মাথায় আসে রিফাতের। তারা তিন বন্ধু মাঝে মধ্যেই টিএসসিতে আড্ডা দিতে আসে। সপ্তাহে অন্তত দুদিন। ইউনিভার্সিটি ছেড়ে গেলেও টিএসসির মায়া কাটানো যাচ্ছে না, তাই এখানেই আড্ডা। ছুটির দিনে অবশ্য বাড়িতেই হয় আড্ডাটা, সবাই মিলে। শাওন, লিসা, পার্থ, জিসান ও রিফাত। পাঁচজনে মিলে চুটিয়ে আড্ডা দেয়। শাওন ও লিসা দুজনেই চাকরি করে, তাই ছুটির দিনটা তারাও উপভোগ করে সবাই মিলে। মাঝে মধ্যেই আবার এখানে-ওখানে চলে যায় পাঁচজনে মিলে।

বৃষ্টি শুরুর আগমুহূর্তেই জিসান ছাদের নিচে চলে এলে দুজনে ভেতরের দিকে এগিয়ে যায়। পার্থ আসতে পারবে কি না, সন্দেহ প্রকাশ করলে জিসান কোনো কথা বলে না। রিফাত জিসানকে নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় বসে। আগে চা খাওয়া দরকার।

জিসান তাদের তিন বন্ধুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। লম্বায় ছয় ফুটের কাছাকাছি, গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা, চোখ-নাক-মুখ সবকিছুই এ প্লাস পাওয়ার মতো, সঙ্গে চমৎকার ঘন কুচকুচে এক ফালি মোচ। এ মুহূর্তে মুখের মাংসপেশি ফুলে থাকার কারণে তাকে কিছুটা অন্যরকম লাগলেও ভালোই দেখাচ্ছে। জিসানের গায়ে ফুলশার্ট, গরমের কারণে হাত দুটো গুটানো। চেহারার জন্য রিফাত তাকে হিংসে করে না, কিন্তু হায় আফসোস তো একটু হয়ই। সে মাঝামাঝি, চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো কিছু নেই তার।

-তোর কী হয়েছে, চোখ মুখ এমন কেন?

চা খেতে খেতে রিফাত প্রশ্নবোধক চিহ্ন রাখে।

-শোন রিফাত এখন কিচ্ছু জিজ্ঞাসা করবি না, বৃষ্টি থামলেই আমরা পার্থর বাড়িতে যাব। ওখানেই কথা হবে। এখন আমাকে চা খেতে দে।

চা খাওয়া শেষ হওয়ার পর আরো মিনিট পাঁচেক চুপচাপ বসে থাকার পর তারা দুজনে পার্থর বাড়িতে এলে লিসা দরজা খুলে ভেতরে বসতে বলে। রাস্তায় একটা কথাও বলেনি জিসান, একেবারে চুপচাপ। রিফাতও ইচ্ছে করেই কোনো প্রশ্ন করেনি, দেখাই যাক না এ রকম মৌনতার পরে নতুন কী চমক আসে! তাদের দেখে লিসার কোনো উত্তাপ দেখতে না পেয়ে রিফাত আহত হয়। তার দুই বন্ধুর স্ত্রীরা খুবই উচ্ছল প্রকৃতির মেয়ে। মাঝে মধ্যেই সে কারণে রিফাত বলে বসে, এ রকম বউই তার পছন্দ। শুনে জিসান আর পার্থ চোখ পাকিয়ে রিফাতের দিকে তাকালে সে চোখ টিপে তাদের আশ্বস্ত করে, ভয়ের কোনো কারণ নেই! কিন্তু লিসার আজকের ব্যবহার বেশ রহস্যময়, রিফাত কিছুই বুঝতে না পেরে জিসানের দিকে চোখ ইশারা করে সোফায় বসে পার্থকে খোঁজে। লিসা একটা দোলনা মতো চেয়ারে বসে দুলতে থাকে। দুলুনি চেয়ার, এই চেয়ারটাতেই সব সময় বসে লিসা। আজ লিসা অফিসে যায়নি বলে জানাল ওদের। এতক্ষণে রিফাত লিসার চোখ-মুখের দিকে তাকায়। পরনে মানানসই একটা সালোয়ার-কামিজ, তবে চোখ দুটো ফোলা ফোলা, কিন্তু তাতেই বেশ লাগছে। কেঁদেছে নাকি? মেয়েদের কান্না মাখানো চেহারাতেও একটা মাধুর্য থাকে! সে কারণেই বোধহয় ঘন ঘন কাঁদে মেয়েরা। যে বিষয়গুলোতে না কাঁদলেও চলে, সেসব বিষয়েও তারা চোখ ফুলিয়ে লাল করে বসে থাকে। বাড়িতে মাকেও দেখেছে বাবার সঙ্গে সামান্য কথাকাটাকাটি করে ঘরে দরজা লাগিয়ে দিতে। অথচ বাবা কথাকাটাকাটির পর দিব্যি ব্যাগ হাতে অফিসে রওনা হয়ে যান। সন্ধ্যায় এসে মায়ের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকাডাকি করে থাকেন। মা মুখ ফুলিয়ে চায়ের কাপ হাতে এগিয়ে ধরলে বাবা জিজ্ঞেস করেন, আরে কী হয়েছে, মাথা ধরেছে? প্যারাসিটামল খেয়ে নাও।

লিসা।

হঠাৎ জিসানের নরম স্বর রিফাতের কান স্পর্শ করলে সে হাত গুটিয়ে বসে, এতক্ষণ তার হাত দুটো সোফার মাথায় মেলে দেওয়া ছিল। সে জিসানের দিকে একবার, একবার লিসার দিকে তাকায়। এবার লিসার চোখে অনেক রকম কথা ফুটতে দেখে রিফাত, অনেক কথা বলতে চাইছে লিসা কিন্তু শুরু করতে দ্বিধা করছে যেন। ‘অনেক কথা যাও যে বলে কোনো কথা না বলি’ গানের লাইনটা রিফাতের মনে আসে, সে গুনগুন করে ওঠার আগেই থামতে হয় জিসানের অদ্ভুত স্বরে।

-লিসা তুমি টের পাওনি?

-না, কিছুই বুঝতে পারিনি। আপনারাও তো কিছুই বোঝেননি। এটুকু বলেই লিসা মুখ ঢাকে।

জিসান করুণ চোখে লিসার দিকে তাকিয়ে থাকলে রিফাত আবার দুজনের দিকে বোকার মতো তাকায়। এবার সে উঠে দাঁড়ায়। নাহ্, কিছু একটা বিষয় আছে যেটা সে জানে না কিন্তু এরা দুজনে জানে। এটা একটা কথা হলো! তাকে বলা হচ্ছে না কেন?

-আমাকে কিছু বলছিস না কেন! হয়েছেটা কী!

জিসানের সামনাসামনি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায় রিফাত। জিসান আর পার্থ অনেক সময়ই রিফাতের সঙ্গে দুষ্টামি করে, তোকে নিয়ে আমরা চিন্তায় থাকি, যতদিন না বিয়ে করছিস, ততদিন একটা রিস্ক থেকেই যায় আমাদের বউদের সঙ্গে তোর মেলামেশায়। কোন দিন যে কার প্রেমে পড়ে যাবি, আমাদের না এতিম হতে হয় আবার! তোর বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমাদের স্বস্তি নেই!

-যা হয়েছে তা সহ্য করা মুশকিল রিফাত ভাই। লিসা মাথা তোলে হাতের ভেতর থেকে।

-পার্থ কই? বলছো না কেন লিসা, কোথায় গেছে ও, কিছুই তো জানায়নি, আমি টিএসসিতে বসে ওদের দুজনের জন্য অপেক্ষা করছি, ওর কোনো খবর নেই, এখানে এসেও দেখছি নেই। হলোটা কী! তখন থেকে তোমরা এমন ভাব করছো যেন কেউ মারা গেছে!

-রিফাত ভাই আপনি বসেন, আমি চা করে আনছি, চা খান আগে।

-না চা খাব না, তুমি আগে বল হয়েছেটা কী। ওই শালা পার্থর কিছু হয়েছে নাকি? কোনো হাসপাতালে আছে?

-না ও চিটাগাং গেছে। অফিসের কাজে। গতকাল রাতে গেছে। যাওয়ার সময় ওর দুটো ফোনের একটা ভুল করে ফেলে গেছে, তাতেই আমি জানতে পারি সবকিছু।

লিসা এটুকু বলেই ফোঁপাচ্ছে। ওর গলায় কান্না আটকে যাওয়াতে আর কথা বলতে পারছে না। ভীষণ অভিমান হয় রিফাতের। পার্থ একবার ফোনে জানাবে না তাকে যে, সে চিটাগাং যাচ্ছে। জিসান জানে, তার মানেই হলো জিসানকে জানিয়েছে, কিন্তু রিফাতকে জানায়নি। তিনজনে একজন আরেকজনের কোন ঘটনাটা না জানে! সেই যেবার একটা ফাঁকা বাড়িতে তারা তিনজন আর যাদের বাড়ি সে, চারজনে মিলে তাদের ক্লাসের মিতুর সঙ্গে জবরদস্তি করেছিল। মিতু খুব বিশ্বাস করে তাদের সঙ্গে গিয়েছিল ওখানে আড্ডা দিতে, কিন্তু তারা চারজনই ওর সঙ্গে অন্যায় করেছিল। এরপর বহুদিন এই প্রসঙ্গটা নিয়ে তারা তিনজনই কথা বলেছে এবং অনুশোচনায় ভুগেছে। কিন্তু যা ঘটেছিল তাতো ফেরত নেওয়ার মতো ছিল না! ফোনে বারবার মিতুর কাছে মাফ চেয়েছে, কিন্তু তাদের মাফ করেনি মিতু। শুধু বলেছে, এক দিন তোমাদেরও মেয়ে সন্তান জন্ম নেবে এবং তারও ছেলে বন্ধু থাকবে যাদেরকে সে বিশ্বাস করবে, মনে রেখো কথাটা।

এই কথাটা শোনার পর থেকেই যেন তারা বেশি অনুশোচনায় ভুগেছে। রিফাত এমনও বলেছে সে সময়, দোস্ত, আমি বিয়ের পর কোনো বাচ্চাই নেব না। কিছুইতো বলা যায় না, আমার যদি মেয়ে সন্তানই হয়, আর তার সঙ্গে যদি ঠিক ওই বিষয়টাই ঘটে, জানতে পেলে তখন কেমন লাগবে আমার! মনে হবে আত্মহত্যা করি! লাগবে কি না বল! তাই যদি কোনো মেয়ে সন্তান নেবে না-এই শর্তে রাজি থাকে বিয়ে করতে, তাহলেই বিয়ে করব, নয়তো করব না। শুনে পার্থ বলেছিল, এখন মনে হচ্ছে ওরকম, দেখবি সব ভুলে যাবি একসময়। তা না হলে দুনিয়ায় যত অপরাধ ঘটে থাকে, সেসব মনে রাখলে তো দুনিয়াতেই বেহেশতখানা দেখতে পেতি। সব ভুলে যায় সবাই।

-ফোনটা দাওতো দেখি লিসা। সব আছে তো মেসেজে, নাকি মুছে ফেলেছ?

-না মুছিনি, আনছি দাঁড়ান। ভাষা পড়ে দেখেন শুধু।

-লিসা দুলুনি চেয়ার ছেড়ে উঠে ভেতরের ঘরে যায়। যথেষ্ট স্মার্ট মেয়ে লিসা, ফ্যাশন সচেতন তো বটেই। ওর চাকরির তিন ভাগের দুই ভাগ টাকাই খরচ করে নিজেদের কাপড়-চোপড় ইত্যাদি ফ্যাশনে। বাকি এক ভাগ টাকা জমা করে। পার্থর টাকায় অন্যান্য খরচ। এ রকম প্রতিটি খুঁটিনাটি কথাও তারা একজন আরেকজনেরটা জানে। চেয়ার ছেড়ে উঠে যাওয়ার মুহূর্তে লিসাকে দেখে খুব সাধারণ একজন মেয়ে মনে হয়, মনে হয় তার সব স্মার্টনেস কোনো একটা সুটকেসের ভেতর গুটিয়ে রেখেছে, এখন আর এসবের কোনো প্রয়োজনই নেই।

-এই যে নিন, ফোন।

লিসা ফোন হাতে ফিরে এসে জিসানের হাতে দিয়ে বলে, জিসান ভাই, আপনিও যে এ রকম দায়িত্বহীন, খেয়ালি, তাতো বুঝতে পারিনি আগে। আপনি একটু সচেতন হলে হয়তো এতটা গড়াত না।

-আমি দায়িত্বহীন হলে, তুমি কী লিসা! শুনেছি মেয়েরা বেশি কনসাস স্বামী সম্পর্কে। আর তুমি কিছুই বুঝতে পারনি এতদিন, সেটা বুঝি দোষের না। সারাক্ষণ অফিস আর ফ্যাশন নিয়েই ব্যস্ত থাকো। অন্যদিকেও যদি নজর দিতে তাহলে আর এমনটা হতে পারত না।

জিসান মনে মনে এসব ভাবলেও এ মুহূর্তে তা বলে না। আরো অনেক কথাই বলার আছে বা বলতে মন চাইছে বা বলা যেতে পারে, কিন্তু লিসার মেকআপহীন ও ঝুলে পড়া চেহারা তাকে বিরত করে। লিসাকে বাসি ফুলের মতো দেখাচ্ছে। ‘আমাকে আর আঘাত দিও না’ এমন ভাব ফুটে উঠেছে তার চোখে-মুখে।

জিসান লিসার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ফোন সেটের মেসেজ অপশনে প্রেস করে। রিফাত জিসানের আরো কাছে এসে ঝুঁকে ফোন দেখে, সে এখনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। লিসাকে এখন আরো একটু অন্যরকম লাগছে, জিসানের প্রতি অভিযোগের অভিব্যক্তিও তার অবয়ব ও কথাবার্তায়। তাকে কিছুই বলছে না অথচ জিসানকে অনেক কিছুই যেন বলছে। তবে কি বিয়ে হয়নি বলে তার সঙ্গে এদের দূরত্ব আছে! ধুৎ, এটা একটা কথা হলো! বন্ধুরা সব কথাই বলে তাকে!

বেশখানিকটা সময় নিয়ে জিসান মেসেজের সবকটা সেন্ট আইটেম ও ইনবক্স দেখে। তাহলে এই ব্যাপার!

পার্থর সঙ্গে লিসার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকেই সে জিসান আর রিফাতের বিয়ের জন্য তাগাদা দিতে থাকে। বলে, দোস্ত এটাই সঠিক সময় বিয়ের। সবকিছুর জন্যই সময় নির্ধারণ করা আছে। সময় চলে গেলে অসময়ের ফলে যেমন কোনো টেস্ট নেই, এই বিষয়টাও সে রকম। সঠিক সময়ে করতে হয়। এতে ঘর-সংসার বাচ্চা-কাচ্চা সবকিছুই সময়মতো হয়। বুড়ো বয়সে ছেলের এএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট শোনাতে লজ্জা পাবি। সেই বয়সে সবাই নাতিপুতির গল্প শোনায়, অতএব সময় নষ্ট করিস না। তো, পার্থর অফিসেই জিসানের সঙ্গে পরিচয় হয় শাওনের। শাওন কেবল নতুন ঢুকেছে সেই অফিসে, পার্থই পরিচয় করিয়ে দেয়। যদিও পরিচয়ের পরেই শাওন অন্য শাখায় বদলি হয়ে চলে যায়, তার পরও জিসানের সঙ্গে তার বিয়ে হতে বেশি সময় লাগে না।

কি সাংঘাতিক কথা! কবে থেকে চলছিল এসব, এই জিসান, আমরা এত বোকা! কেউ বুঝতেই পারিনি! এত বড় গাদ্দারি করল ওরা! এত বড় ধোঁকা! একসঙ্গে আড্ডা দিলাম, ঘুরলাম অথচ কিছুই বুঝতে পারলাম না।

রিফাত এতক্ষণ জিসানের সঙ্গে পার্থর ফেলে যাওয়া মোবাইলের মেসেজগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ে তার পর চিৎকার করে ওঠে।

পার্থর ফেলে যাওয়া মোবাইলে মেসেজগুলো পড়ার পর লিসা পার্থকে ফোন করলে সে পরিষ্কার উচ্চারণে জানায় শাওন আর সে এখন চিটাগাংয়েই পোস্টিং নিয়েছে এবং তারা দুজনে একসঙ্গেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। শাওন পার্থর এক দিন আগেই অফিস ট্যুরের কথা বলে চিটাগাং গেছে। প্রায়ই তাকে অফিসের কাজে এখানে ওখানে ট্যুরে যেতে হয়, জিসান কখনোই কোনোরকম সন্দেহ করেনি তার যাওয়া নিয়ে। বরং অনেক সময়ই এটা ওটা গুছিয়ে দিয়েছে, সঠিক সময়ে ট্রেন বা বাসস্ট্যান্ডেও পৌঁছে দিয়েছে।

পার্থ কি ইচ্ছে করেই ফোনটা ফেলে রেখে গিয়েছে?

রিফাতের চিৎকার জিসানকে স্পর্শ করতে পারে কি না বোঝা যায় না। সে মেসেজ পড়া শেষ করে খুব আস্তে যেন খুট করেও শব্দ না হয় সেভাবে ফোনটা টেবিলের ওপর রেখে দিয়ে ঘরের কোনায় রাখা একুশ ইঞ্চি টিভিতে চোখ রাখে। টিভির পাশেই রাখা ফ্লাওয়ারভাসটার ফুলগুলো খুব বেশি আগের নয় দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অন্যদিন হলে ফুলগুলোতেই তার চোখ স্থির হতো কিন্তু আজ হয় না।

রিফাত সোফা থেকে উঠে একটু হাঁটে তারপরে অসহায়ের মতো বসে থাকা জিসানের দিকে তাকায়। তার ঠোঁটে একটা বাঁকা হাসি এসে জড়ো হয়। মুখে প্রকাশ না করলেও জিসানের একটা চাপা অহংকার ছিল নিজের চেহারা ও ব্যক্তিত্বের জন্য, অনেক সময়ই তা ভাবে প্রকাশ পেত। ছোটবেলার বন্ধু বলে এ নিয়ে কখনোই সম্পর্ক খারাপ হয়নি তাদের। মেনে নিয়েছে। এবার জিসানের মেনে নেওয়ার পালা তাহলে!

মুখের বাঁকা হাসিটা লুকিয়ে ফেলে রিফাত এবার লিসার অসহায় মুখের দিকে তাকায় তারপর জানালার বাইরে চোখ রাখে। আবার বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে, এখুনি ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist