আরিফ মঈনুদ্দীন

  ১০ মে, ২০২৪

উপন্যাস (পর্ব ১৫)

তাহারা ফিরিয়া আসিলেন

শিউলি বেরিয়ে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আজিম সাহেব ও মিসেস আজিম ড্রইংরুমে এলেন। বোঝা গেল তারাও মেয়েটির প্রস্থানের অপেক্ষায় ছিলেন।

লীরা অবাক না-হয়েই বলল, তোমরা নিশ্চয় এই সময়ের অপেক্ষায় ছিলে।

রাশেদা বললেন, তোর কী মনে হয় মা?

সঙ্গে সঙ্গে রাশেদার কথার ওপর সমর্থন ধরে রেখে আজিম সাহেবও বললেন, হ্যাঁ, বলো তো তোমার কী মনে হয়?

লীরা সপ্রতিভভাবেই বলল, আমি অনুমান করেছিলাম। এখন দেখছি আমার ধারণা ঠিক। তবে মনে হয়, তোমাদের নিয়ে আর ভাবতে হবে না। কারণ আপদের যদি লজ্জার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট থাকে, সে আর আমাদের ফ্ল্যাটের ছায়া মাড়াবে না। একটা বিষয়ে তোমাদের বোঝা উচিত- আমি একে কোনো প্রকার আপ্যায়নের পর্বেই আহ্বান করিনি।

মেয়ের ইতিবাচক আচরণে প্রীত হয়ে আজিম সাহেব বললেন, আমরা কিন্তু দুজনেই তোমার এরকম আচরণই আশা করেছিলাম। মেয়েটি তো উচ্ছন্নে গেছে রে! প্রফেসর সাহেব কেমন মানুষ? তার স্ত্রীও তো বাইরে কোনো কাজ করে না। মেয়েকে দেখে রাখতে পারেন না?

রাশেদা বেগম বললেন, আর দেখে রাখা! ওই মহিলা তো রাজ্যের অলস। গাবদাগুবদা লেডি। কেমন যেন চলাফেরা? প্রফেসর সাহেব তো সুদর্শন মানুষ। কোথা থেকে এই জিনিস ম্যানেজ করল কে জানে?

লীরা মধুর শাসনের সুরে বলল, আম্মু ঠিক হচ্ছে না কিন্তু, তোমরা গিবত করে ফেলছ। বুঝতেই তো পারছ, তোমার মতো মা হলে কি আর এই অবস্থা হয়। থাক ওসব, আমরা ভালো আছি এটাই শান্তি।

আজিম সাহেব বললেন, মামণি ঠিকই বলেছ। তবে এই মেয়ের সঙ্গে তোমার খাতির না-থাকাই ভালো।

আব্বু যে কী বলো না! খাতির আবার! আমি তো ওকে একরকম ঝেঁটিয়েই বিদায় করেছি। ওই যে বললাম না সামান্য পরিমাণও যদি শরম থাকে, আর আসবে না। আসলে আব্বু কথায় আছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিল না-থাকলে সখ্য হয় না। আমার তো ওর সঙ্গে চৌদ্দ আনাই মিল নেই।

রাশেদা বেগম রসিকতা করে বললেন, তাহলে মা বল তো দুই আনা যে মিল আছে ওটা কী কী?

আজিম সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, আমি বলছি দ্যাখ তো মা মিলে কি না...

তিনি একটু থামলেন, লীরা তাগাদা দিয়ে বলল, বলো আব্বু তোমার একটি পরীক্ষা হয়ে যাক।

রাশেদা বেগম হাসিহাসি মুখ করে বললেন, হ্যাঁ তাই তো! বলো তোমার পরীক্ষার নম্বরটা কিন্তু আমিই দেব।

যথারীতি একটি হাসিখুশি টাইপ উষ্ণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই আবহটা উপভোগ করতে করতে আজিম সাহেব বললেন, এক নম্বর হলো ওরা দুজনই মেয়ে এবং দুই নম্বর হলো দুজনই সমবয়সি।

লীরা বলল, আব্বু তুমি পাস, খালি পাস না। একেবারে সিজিপিএ চারের মধ্যে চার।

রাশেদা বললেন, আচ্ছা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ। তোমরা বাপ-মেয়ে কথা বলো। আমি কিচেনে যাচ্ছি। দেখি কিছু নাস্তা তৈরি করি। প্রফেসর সাহেবের মেয়েটি এসে তো আমার সময় নষ্ট করে গেল!

বাসায় ফিরে শিউলি নামটা নিয়ে আরেকবার চিন্তা করছে। নিজের রুমে ঢুকে গুগল সার্চ দিয়ে বসেছে। সেলিব্রেটিদের বিস্তর নাম ঝাঁকে ঝাঁকে এসে গেছে। কিছুক্ষণ দেখেটেখে যেই কপাল সেই মাথা। ওই নামটাই ভালো লাগার গণ্ডিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ইভানকা। এটাই ফাইনাল। মনের অবস্থা একটু একটু করে ভালো হচ্ছে। সে নিজের রুম থেকে বের হয়ে মায়ের রুমে ঢুকেছে। মিসেস শফিক ইউটিউবে বাংলা নাটক দেখছিলেন। মোবাইল ফোনের ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন। কয়েক মুহূর্ত তিনি কোনো কথা বললেন না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close