ফারুক সুমন

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

হৃৎকলমের কবি সৈয়দ হক

সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫-২০১৬) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অত্যাশ্চর্য প্রতিভা। শিল্পের বিভিন্ন শাখায় নিজস্ব স্বর-সন্ধানী শিল্পী। কবিতা-গল্প-উপন্যাস-কাব্যনাট্য-শিশুসাহিত্য-অনুবাদ-প্রবন্ধ-গান-চলচ্চিত্র এবং চিত্রশিল্পসহ নানা শিল্পাঙ্গিকে তার প্রতিভার স্ফূর্তি ঘটেছে। সমকালে এমন সমগ্রতাস্পর্শী শিল্পপ্রতিভা কমই দেখা যায়। কবিতায় তিনি পাঠকের ‘পরাণের গহীন ভিতর’ ছুঁয়েছেন। গল্প-উপন্যাসে আখ্যান-উপযোগী চরিত্রনির্মাণে অনন্যতার পরিচয় দিয়েছেন। আধুনিক বাংলাসাহিত্যে কাব্যনাট্যের কিংবদন্তি স্রষ্টা। শিল্পবোধ ও সমকালীন ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছেন প্রবন্ধ-নিবন্ধ। এভাবে শিল্পের বহুমাত্রিকতার প্রতি নিবিড়তম অনুরাগ থেকে তিনি প্রচুর লিখেছেন। তার সব রকম লেখা পাঠকনন্দিত হয়েছে এমন নয়। তবে এটা সত্য, তার হাতে ছিল যুগপৎ হৃৎকলমের শক্তি ও গভীর মনোনিবেশ। বর্তমান লেখায় সৈয়দ হকের সমগ্রতাস্পর্শী শিল্পপ্রতিভা নিয়ে আলোচনার প্রয়াস রাখছি।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে বিশশতকের পঞ্চাশের দশকে সৈয়দ শামসুল হকের আবির্ভাব। ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায় ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। গল্পের নাম ‘উদয়াস্ত’। যদিও অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন তিনি প্রথম মুখে-মুখে পঙক্তি বানিয়ে আনন্দ পেতেন। শৈশবে একটা লালপাখি দেখে লিখেছিলেন- ‘আমার জানালার পাশে একটি গাছ রহিয়াছে, তাহার উপরে দুটি লাল পাখি বসিয়াছে।’ এমন নবসৃষ্টির আনন্দে সেদিন পুলকিত হয়েছিলেন শৈশবের কবি। এভাবেই তার শিল্পযাত্রা। বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। তিনি হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে সাতটি গ্রন্থ লিখেছেন। সৈয়দ হক লেখক হওয়ার নেপথ্যে পিতার প্রণোদনা পেয়েছিলেন।

সৈয়দ হকের প্রথম প্রকাশিত লেখা গল্প হলেও কবিসত্তার উন্মেষ ঘটেছে সেই শৈশবে। ‘একদা এক রাজ্যে’ (১৯৬১) শিরোনামের কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে বাংলাসাহিত্যে কবি হিসেবে তার অভিষেক। সবমিলে তার কবিতাবইয়ের সংখ্যা ২০টির কাছাকাছি। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো- ‘একদা এক রাজ্যে’ (১৯৬১), ‘বিরতিহীন উৎসব’ (১৯৬৯), ‘বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা’ (১৯৭০), ‘প্রতিধ্বনিগণ’ (১৯৭৩), ‘পরাণের গহীন ভিতর’ (১৯৮০), ‘এক আশ্চর্য সংগমের স্মৃতি’ (১৯৮৯) এবং ‘অগ্নি ও জলের কবিতা’ (১৯৮৯)।

সৈয়দ হকের লোকজ অনুষঙ্গনির্ভর কালজয়ী গ্রন্থ ‘পরাণের গহীন ভিতর’ (১৯৮০)। এখানে বাঙালি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি তার অনুরক্তি দেখা যায়। বিষয় ও আঙ্গিকের অভিনবত্বের অনন্যতায় এই গ্রন্থ কালোত্তীর্ণ হয়েছে। প্রেমনির্ভর পঙক্তির ভাঁজে বুনে দিয়েছেন সবুজ-শ্যামল গ্রামবাংলার রূপসৌন্দর্য। গ্রন্থভুক্ত ৩৩টি সনেট ১৮ মাত্রার অক্ষরবৃত্তে ছন্দবন্ধ। এই গ্রন্থে লোকজভাষার নিবিড় নিরীক্ষা চোখে পড়ে। নাট্যগুণ-আরোপিত কবিতাগুলো এখনো পাঠকের মনে সংবেদনা জাগায়। প্রায় প্রতিটি কবিতায় অসংখ্য উদ্ধৃতিযোগ্য পঙক্তি রয়েছে।

‘বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা’ (১৯৭০) কাব্যগ্রন্থটি সৈয়দ হকের কাব্যপ্রতিভার বিশেষ বাঁক। এই গ্রন্থে কালসচেতন কবির চেতনালোক স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কবিতা যে কেবল ব্যক্তির অনুভূতিরঞ্জিত বায়বীয় ব্যাপার নয়, এটা গ্রন্থপাঠে অনুভূত হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে প্রকাশিত এই গ্রন্থে রয়েছে রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের উত্তাপ। আত্মমগ্ন কবি সমকালীন এমন উত্তাপ এড়িয়ে যেতে পারেননি। ফলে গ্রন্থভুক্ত কবিতায় সমকালীন বাস্তবতার প্রতিফলন দেখা যায়। মাত্র ১টি দীর্ঘ কবিতা নিয়ে ‘বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা’য় মনজাগতিক প্রবাহ বিদ্যমান। সমকালীনতায় উচ্চকিত হলেও কবিতায় রয়েছে স্বতন্ত্র সুর।

সৈয়দ হকের কবিতায় প্রেম, প্রকৃতি, নগরচিত্র, আত্মপরিচয়, রাজনীতি, ব্যক্তিগত দুঃখবোধসহ অসংখ্য বিষয় রেখায়িত হয়েছে। হাজার বছরের পরিক্রমায় বাঙালি জাতির যে আত্মপরিচয়, তার কবিতায় সেটা বাঙ্ময় হয়েছে। ইতিহাসের বাঁকে-বাঁকে বাংলা ও বাঙালির যে চিরায়ত পরম্পরা, কবিতার ক্যানভাসে সেসবের সুনিপুণ বিস্তার পরিলক্ষিত হয়।

কাব্যচর্চার শুরুর দিকে ব্যক্তিগত ভাবকল্পনায় আচ্ছন্ন থেকে কাব্যচর্চা করলেও সময়ের সঙ্গে কবির অন্তর্মুখী মনোভঙ্গির উন্মীলন ঘটে। সমকালীন দেশ-কাল-সমাজ তার কবিতায় নিবিড় মমতায় উপস্থাপিত হয়েছে। বিশেষ করে ভাষা-আন্দোলন, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলন, স্বাধীনতা-উত্তর রাজনৈতিক প্রবাহের নানা আন্দোলন-সংগ্রামের রক্তাক্ত ক্ষত তার কবিচৈতন্যে প্রভাব ফেলে। দেশের মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্দীপিত করেছে তার কাব্যনাট্য ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ (১৯৭৬) ‘গণনায়ক’ (১৯৭৬) এবং ‘নুরলদীনের সারাজীবন’ (১৯৮২)। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ সৈয়দ হকের স্বতন্ত্র শিল্পপ্রতিভা চিহ্নিত করার মতো এক উজ্জ্বল সৃষ্টি। ফকির বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে লেখা ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ গ্রন্থটি প্রেরণাসঞ্চারী কালজয়ী রচনা। তার ‘নারীগণ’, ‘যুদ্ধ এবং যোদ্ধা’, ও ‘ঈর্ষা’ কাব্যনাট্যগুলো পাঠকমহলে বেশ সমাদৃত হয়েছে।

নূরলদীনের কণ্ঠে উচ্চারিত উদাত্ত আহ্বান যেন আমাদের বঞ্চিত-লাঞ্ছিত মানুষের নিজকণ্ঠের প্রতিধ্বনি।

কথাশিল্পী হিসেবেও সৈয়দ হক গুরুত্বপূর্ণ। যদিও সমকালে তার শিল্পপ্রতিভা বিভাজনসূত্রে কিছুটা অবমূল্যায়ন হয়েছে। কবিসম্প্রদায় তাকে কথাসাহিত্যিক হিসেবে যতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, কবি হিসেবে ততটা নয়। আবার কথাসাহিত্যিক সম্প্রদায় তাকে কবি কিংবা নাট্যকার হিসেবে যতটা এগিয়ে রাখেন, কথাসাহিত্যিক হিসেবে ততটা নয়। যদিও সৈয়দ হক এসব নিয়ে কখনো চিন্তিত ছিলেন বলে মনে হয়নি। প্রতিটি সাহিত্য-শাখায় তিনি সমান মনোযোগ নিয়ে কাজ করেছেন।

প্রথম প্রকাশিত গল্পের মতো সৈয়দ হকের প্রথম প্রকাশিত বইও গল্পের। ১৯৫৪ সালে ‘তাস’ গল্পগ্রন্থের পর পর্যায়ক্রমে প্রকাশ পেয়েছে ‘শীত বিকেল’ (১৯৫৯), ‘রক্তগোলাপ’ (১৯৬৪), ‘আনন্দের মৃত্যু’ (১৯৬৭), ‘প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তান’ (১৯৮২), ‘সৈয়দ শামসুল হকের প্রেমের গল্প’ (১৯৯০), ‘জলেশ্বরীর গল্পগুলো’ (১৯৯০) ও ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ (১৯৯০)। সৈয়দ হকের গল্পে মূলত নাগরিক জীবনের অনুষঙ্গ ও ব্যক্তিসংকট রূপায়িত হয়েছে। ফ্ল্যাটবন্দি মধ্যবিত্ত মানুষের অন্তঃসারশূন্য সম্পর্কের জটিল মনস্তত্ত্ব গল্পের আখ্যান ও চরিত্রে বিশেষ হয়ে ধরা দেয়। কবিতায় শামসুর রাহমান যেমন নাগরিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ, অনুরূপভাবে সৈয়দ হকও গল্পের ভূভাগে নাগরিক জীবনের ছবি আঁকতে চেয়েছেন। তবে ভিন্ন আঙ্গিকের গ্রামীণ আবহের গল্পও লিখেছেন। ‘জলেশ্বরীর গল্প’ যার উজ্জ্বল উদাহরণ।

সৈয়দ হকের উপন্যাসের সংখ্যা ৩৮টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় মাত্র ২১ বছর বয়সে তার প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’ প্রকাশিত হয়। প্রথাবদ্ধ ঔপন্যাসিকদের চোখে তিনি হয়তো ঔপন্যাসিক হিসেবে অতটা উচ্চমান ছুঁতে পারেননি। কিন্তু উপন্যাসের নতুন কাঠামো নিয়ে তিনি নিজেও নতুন বার্তা দিতে চেয়েছেন। ‘খেলারাম খেলে যা’ উপন্যাসের পরিমার্জিত সংস্করণের ভূমিকায় সে-সম্পর্কে তার মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য- ‘গল্প-উপন্যাসের জন্ম হয় আকাশে নয়, মাটিতে, এই মাটিতেই। উপন্যাস তো সেই রচনা- আমাদের যাপিত জীবনে যা হতে পারত। এভাবেই লেখকের কল্পিত কাহিনি তার অক্ষরে অক্ষরে হয়ে ওঠে জীবনের বাস্তবতার বিবরণ।’

সৈয়দ হক উপর্যুক্ত বক্তব্যকে মান্য করে তার উপন্যাসের বিষয় ও আঙ্গিকে কথা বসিয়েছেন। উপন্যাস কেবল রূপকথা কিংবা কল্পকাহিনি নয়। মানবজীবনের বিশ্বস্ত বুনন আধুনিক উপন্যাসের প্রধান দাবি। সৈয়দ হক জীবনের রূঢ় বাস্তবকে অস্বীকার কিংবা এড়িয়ে যাননি বলে উপন্যাস লিখে বিতর্কিত হয়েছেন। তবে বাংলা উপন্যাসের আলোচনায় তার লেখা ‘দ্বিতীয় দিনের কাহিনী’, ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘আয়না বিবির পালা’, ‘বালিকার চন্দ্রযান’, ‘মহাশূন্যে পরান মাস্টার’, ‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’, ও ‘এক মুঠো জন্মভূমি’সহ প্রভৃতি উপন্যাস গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। ‘খেলারাম খেলে যা’ প্রকাশের পর তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। অশ্লীলতার অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও এখনো বইটির প্রতি পাঠকের আগ্রহের কমতি নেই।

সৈয়দ হকের ব্যক্তিগত গদ্যগ্রন্থ ‘হৃৎকলমের টানে’, ‘মার্জিনে মন্তব্য’ কিংবা ‘কথা সামান্যই’। এই কলামধর্মী লেখাগুলো যখন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় তখন পাঠকমহলে সাড়া পড়ে যায়। এগুলো প্রথাগত প্রবন্ধের ভাষাকাঠিন্য নয়, বরং কবির হাতের সাবলীল গদ্য। ‘হৃৎকলমের টানে’ কিংবা ‘কথাসামান্যই’-এর মতো অসাধারণ রচনায় সৈয়দ হকের শিল্পবোধ আভাসিত হয়। শিল্পসাহিত্যের বাতাবরণে ভাষা-সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতি ও স্বদেশচিন্তা এসেছে। ‘হৃৎকলমের টানে’ গ্রন্থের ভূমিকায় সৈয়দ হক লিখেছেন- ‘মনোযোগী পাঠকের কাছে ধরা পড়বে- এ আমার প্রতিদিনের ভাবনা ও অভিজ্ঞতার সংকলন; সব ভাবনা, সব অভিজ্ঞতাই এখানে আছে এমন নয়, বরং এ যেন হিমশিলার মতো, আট ভাগের এক ভাগই কেবল দৃশ্যমান। আরো ধরা পড়বে- একই বিষয় নিয়ে আমি বহুবার ভেবেছি, টুকেছি, এবং কখনো নিজেকে যেমন শুধরে দিয়েছি, আগের মতো পরিবর্তন করেছি, আবার পরস্পরবিরোধিতাও রেখে দিয়েছি। এর সবটা মিলিয়েই আমি এবং আমার।’ উপর্যুক্ত মন্তব্যে লেখকের আত্মিক অনুভূতি স্পষ্ট হয়।

সৈয়দ হক চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন। এমনকি চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে সংলাপ ও গান লিখেছেন। ‘বড় ভালো লোক ছিল’ (১৯৮২) চলচ্চিত্রে অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। যেসব চলচ্চিত্রের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল সেগুলো হলো- ‘মাটির পাহাড়’ (১৯৫৯), ‘তোমার আমার’ (১৯৬১), ‘শীত বিকেল’ (১৯৬৪), ‘ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো’ (১৯৬৬), ‘নয়নতারা’ (১৯৬৭), ‘ময়নামতি’ (১৯৬৯), ‘মধুমিলন’ (১৯৭০), ‘কাঁচ কাটা হীরে’ (১৯৭০), ‘অবুঝ মন’ (১৯৭২), ‘মাটির মায়া’ (১৯৭৬) এবং ‘বড় ভালো লোক ছিল’ (১৯৮২)। সর্বশেষ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমা ‘গেরিলা’ (২০১১)। এটি তার ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাসের চিত্রনাট্যরূপ।

সৈয়দ শামসুল হক প্রথম ‘সুতরাং’ (১৯৬৪) চলচ্চিত্রে গীতিকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এই ছবির চিত্রনাট্য, সংলাপ এবং সবগুলো গান তার লেখা। প্রথম গান লেখা প্রসঙ্গে গীতিকার কবির বকুলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে (আমি কখনো গান লিখতে চাইনি, সাক্ষাৎকার কবির বকুল, প্রথম আলো, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫) তিনি বলেছেন- ‘আমি কখনো গান লিখতে চাইনি। প্রথম গান লিখতে হয়েছিল প্রোডাকশনের খরচ বাঁচাতে এবং সুরকার সত্য সাহাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। সে গল্প আমি আগেও করেছি। সত্যিকার অর্থে একজন লিখছেন, একজন সুর করছেন। এটা আমার পছন্দ নয়। এতে সুর ও কথার বিচ্যুতি ঘটে। একজনই এই দুটো কাজ করলে অসাধারণ কিছু সৃষ্টি হয় বলেই আমার বিশ^াস। এ কারণে আমি গানটা লিখেছি বটে, কিন্তু মন কখনো সায় দেয়নি।’

প্রসঙ্গক্রমে সৈয়দ হকের কিছু শ্রোতাপ্রিয় গানের উল্লেখ করছি- ‘তুমি আসবে বলে, কাছে ডাকবে বলে, ভালোবাসবে বলে শুধু মোরে’ ‘যার ছায়া পড়েছে মনেরও আয়নাতে’ ‘ফুলের মালা পড়িয়ে দিলে আমায় আপন হাতে’ ‘কেহ করে বেচাকেনা কেহ কান্দে’ ‘তোরা দেখ তোরা দেখ দেখরে চাহিয়া’ ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস’ ‘আমি চক্ষু দিয়া দেখতেছিলাম জগৎ রঙ্গিলা’ ‘অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়’ এবং ‘চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার তুল না’। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি ‘বাঙালির জয়! জয় বাংলার ধ্বনিতে একাত্তর’ গানটি লিখেছেন। যেটি লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন অনুষ্ঠানে থিম-সঙ হিসেবে বেজেছে।

সর্বোপরি, সৈয়দ শামসুল হকের কর্মপরিধি তথা শিল্পভুবন ব্যাপক ও বিস্তৃত। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা বুদ্ধদেব বসুর পরে এমন সমগ্রতাস্পর্শী শিল্পপ্রতিভার আবির্ভাব খুব অল্পই চোখে পড়ে। তার অনুবাদ, চিত্রশিল্প, কিশোর-সাহিত্য কিংবা আত্মজীবনী পাঠেও আমরা ঋদ্ধ হই। তিনি আধুনিক বাংলাসাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক। হৃৎকলমের কবি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close