অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

  ২১ জানুয়ারি, ২০২৪

ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের মতবিনিময়

জ্বালানি সংকট নিয়ে সতর্কতা

বিদ্যমান জ্বালানি সংকটের কারণে শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়ায় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে সতর্ক করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নতুন সভাপতি আশরাফ আহমেদ। এজন্য দ্রুততম সময়ে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। গতকাল শনিবার ডিসিসিআই মিলনায়তনে দেশের সমসাময়িক অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ওই মতবিনিময় সভায় ডিসিসিআই সভাপতি অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ বিষয়ে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি বেসরকারি খাতসহ সরকারি খাতও সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। চলতি বছরে দেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির গতিধারা ফিরিয়ে আনতে বেসরকারি খাতকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ভবিষ্যৎ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিনিময় এবং ডিজিটাল কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য দিন কটেজ, মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম ইন্টারপ্রাইজ বা সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি খুবই জরুরি বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।

এছাড়া দেশের আমদানি বিকল্প শিল্পের উন্নয়নে সিএমএসএমইসহ স্ট্যার্ট উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তির সুবিধা সম্প্রসারণ এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন এ ডিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, এক্সপোর্ট ফ্যাক্টরিং, আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় এবং রেমিট্যান্স আহরণে আরো প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এছাড়া পুঁজিবাজারে লেনদেন অবকাঠামো (ট্রেডিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার) এবং অংশগ্রহণ বাড়াতে অল্টারনেটিভ ট্রেড বোর্ডের (এটিবি) ব্যবহার বাড়াতে তিনি প্রস্তাব করেন।

প্রশ্নোত্তর পর্বে আশরাফ আহমেদ আরো বলেন, আমাদের অর্থনীতি বর্তমানে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, খেলাপি ঋণ, পুঁজিবাজারে অস্থিতিশীলতা, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট এবং টাকার অবমূল্যায়ন প্রভৃতি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের এ ধরনের সমস্যাগুলো বেশ সফলতার সঙ্গেই মোকাবিলার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং আশা করছি, পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা বেশ সফলতার সঙ্গেই মোকাবিলা করে অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছব। এ সময় তিনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত তথ্যের স্বচ্ছতা উন্নয়নে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।

সম্প্রতি ঘোষিত মুদ্রানীতি সঠিক বাস্তবায়নে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্টের স্থিতিশীলতা আনতে সহয়াক হবে। এতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা ফিরে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, রপ্তানির বহুমুখীকরণ এবং প্রবৃদ্ধি সহায়ক নীতি প্রণয়নের ওপর আমাদের আরো বেশি হারে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। এছাড়া ট্যাক্স কোড ব্যবহারের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টিং ও রিপোর্টি প্রক্রিয়ার মধ্যকার সমন্বয় আরো বাড়ানো প্রয়োজন। দেশের কৃষি, ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স, হালকা প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি এবং তৈরি পোশাক খাতগুলোয় বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য একটি সুনির্দিষ্ট দীর্ঘমেয়াদি খাতভিত্তিক জাতীয় বিনিয়োগ কর্মকৌশল প্রণয়ন করা জরুরি বলেও তিনি মত দেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ সমসাময়িক অর্থনীতিবিষয়ক ১২টি বিষয়বস্তুর ওপর বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ২০২৪ সালে ডিসিসিআইর কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, এ বছর ঢাকা চেম্বার সিএমএসএমই, আমদানি বিকল্প শিল্প খাত, আর্থিক খাত, পুঁজিবাজার, ট্যাক্সেশন, বেসরকারি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক কূটনীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, কর্মসংস্থান ও মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, এলডিসি উত্তরণ এবং স্মার্ট অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ের ওপর অধিকহারে গুরুত্বারোপ করবে। মতবিনিময় সভায় ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহসভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close