নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪

উঠে গেল ফ্লোর প্রাইস থাকবে ৩৫ প্রতিষ্ঠানে

* ফোর্সড সেল বন্ধের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের যে ক্ষতি করা হয় গত ১১-১২ বছরে, তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি * দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফ্লোর প্রাইস নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে

অবশেষে ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন সীমা) তুলে নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে ৩৫ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস থাকবে। আগামী সপ্তাহ থেকে ৩৫টি ছাড়া বাকিগুলোর ওপর ফ্লোর প্রাইস থাকবে না। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রতিদিনের সংবাদকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কমিশন ৩৫টি প্রতিষ্ঠান বাদে বাকিগুলোর ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়েছে। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকার কার্যকর হবে। আর ফ্লোর প্রাইসের আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, কমিশন আশা করছে, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কারণে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বাজারে গতি ফিরে আসবে।

যে ৩৫ প্রতিষ্ঠানে ফ্লোর প্রাইস থাকবে : শেয়ারবাজারের স্বার্থে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলেও ৩৫টি প্রতিষ্ঠানে ফ্লোর প্রাইস রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এ ৩৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বারাকা পাওয়ার, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বেক্সিমকো, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস, বিএসআরএম স্টিল, বিএসআরএম লিমিটেড, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ডিবিএইচ, ডরিন পাওয়ার, এনভয় টেক্সটাইল, গ্রামীণফোন, এইচআর টেক্সটাইল, আইডিএলসি, ইনডেক্স এগ্রো, ইসলামী ব্যাংক, কেডিএস লিমিটেড, কেপিসিএল, কেটিএল, মালেক স্পিনিং, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল পলিমার, ওরিয়ন ফার্মা, পদ্মা অয়েল, রেনেটা, রবি, সায়হাম কটন, শাসা ডেনিমস, সোনালি পেপার, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, শাইনপুকুর সিরামিকস, শাহজিবাজার পাওয়ার, সামিট পাওয়ার এবং ইউনাইটেড পাওয়ার।

শেয়ারবাজারে লাগাতার পতন ঠেকাতে না পেরে গত ৪ বছরে কয়েক দফায় শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। প্রথমবার ২০২০ সালের মার্চে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করলেও তুলে নেওয়া হয় ২০২১ সালের জুলাইয়ে। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সালের জুলাইয়ে আবারও ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। এ পর্যায়ে শেয়ার লেনদেন ব্যাপক কমে গেলে সমালোচনায় পড়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

সম্প্রতি ফ্লোর প্রাইস নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ফ্লোর প্রাইস কীভাবে শেয়ারবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতার ভিত্তিতে জাতীয় দৈনিকে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারবাজারের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাজারের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে ফ্লোর প্রাইসের কারণে। ২ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হওয়া বাজারে ৩০০-৪০০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। শেয়ারবাজারের গতি ফেরার জন্য ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ফ্লোর প্রাইস আমাদের শেয়ারবাজারের বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। অবশ্যই ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারবাজারের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে, এটা বলা যায়। দুটি জিনিস আমাদের শেয়ারবাজারের বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। এর একটা হলো ২০১০ সালে ফোর্সড সেল বন্ধ করা, আর একটা হলো এখনকার ফ্লোর প্রাইস। তিনি বলেন, ফোর্সড সেল বন্ধ করার কারণে যেসব মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস মার্জিন ঋণ দিয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের পোর্টফোলিও ঋণাত্মক হয়ে যায়। ফোর্সড সেল বন্ধের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের যে ক্ষতি করা হয় গত ১১-১২ বছরে, তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এখন ফ্লোর প্রাইস দিয়ে আবার বাজারের বড় ক্ষতি করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close