যশোর প্রতিনিধি
যশোরের হরিণার বিল
জলাবদ্ধতায় ২৭২ হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত
* ঘের ও আবাসন ব্যবসায়ের আগ্রাসনে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত * ২ হাজার ৫০০ বিঘা জমির চারা নষ্ট
অবিরাম জলাবদ্ধতায় যশোর সদর উপজেলার হরিণার বিলের তিন ফসলি জমিতে এখন একবারও ফসলও মিলছে না। এবারের আমন মৌসুমেও অসময়ের ভারী বর্ষণে বিলটি জলমগ্ন হয়ে প্রায় দুই হাজার ৫০০ বিঘা জমির চারা নষ্টে চাষিদের লগ্নিকৃত টাকা লোকসান হয়েছে।
যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ও রামনগর ইউনিয়ন এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হরিণার বিল। ইউনিয়ন পরিষদ দুটির দেওয়া তথ্যমতে, বিলটি কমবেশি প্রায় ১৭ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। ঘের ও আবাসন ব্যবসায়ের আগ্রাসনে পানি নিষ্কাশন বাঁধাগ্রস্ত হয়ে বিলটি প্রায় বছরজুড়েই জলাবদ্ধ থাকছে।
সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র বলছে, এই বিলের আয়তন প্রায় ৫০৭ হেক্টর। আবাদি জমি প্রায় ৪৮৫ হেক্টর। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানিয়েছেন, হরিণার বিল মূলত ধান আবাদ অঞ্চল। জলাবদ্ধতায় ২৭২ হেক্টর (২০৩১ বিঘা) জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ওই পরিমাণ জমির ফসল নষ্টে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি তিনি।
তবে কৃষকদের ভাষ্য, কৃষি বিভাগ যে পরিমাণ জমির চারা নষ্টের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে; বাস্তবে ক্ষতির পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিলের ভাতুড়িয়া, সাড়াঘুটো ও বকুল নগরসহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রামে আবাদি জমিতে ৩০টিরও বেশি মাছের ঘের গড়ে উঠেছে। বিলে ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য গ্রাম-মোবারককাটি, খড়িঞ্চাডাঙ্গা, বলাডাঙ্গা ও কাজীপুরেও বহু সংখ্যক মাছের ঘের রয়েছে। সবমিলিয়ে ঘেরের সংখ্যা শতাধিক।
যশোর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান জানান, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের নীতি অনুসরণ করে সেটি পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি দেন।
ফলে অনেকের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষি সেটি বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে দিনযাপন করছে বহু কৃষক পরিবার।
‘আমাগের সব শেষ, আর কিচ্ছু নেই। পানি জইমে বিলির তিন বিঘে জমির ধানে চারা পইচে গেছে।’ আক্ষেপ করে বলছিলেন শেফালি রানী। বিলে পাড়ের সব গ্রামের কৃষকের বক্তব্য এমনই।
শাহীন গাজী নামে আরেক চাষি জানান, জলাবদ্ধতায় এ বছর তার নিজেরসহ লিজ নেওয়া ২০ বিঘা জমির রোপা আমনের চারা পচে গেছে।
বকুলনগর গ্রামের বাসিন্দা আমন চাষি নারায়ণ বিশ্বাস ক্ষোভের সুরে বলেন, ৯ বিঘা জমিতে আমন চাষে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকার ওপর খরচ হয়েছে। সব খরচ এবার ‘জলেই গেছে’।
স্থানীয় বাসিন্দা নকুল সরকার, রসিক রায়, অনিমেষ রায়সহ আরও কয়েকজন জানান এমন কথা। তাদের দেওয়া হিসেব মতে, একেক বিঘা জমি চাষে এক হাজার ৬০০ টাকা খরচ হয়েছে।
এদিকে, বিলের রূপদিয়া ও মাহিদিয়া অংশে শত শত বিঘা আমন খেত পানিতে তলিয়ে আছে। মাহিদিয়ার বাসিন্দা তপন কুমার সরকার জানান, কোমরসমান উঁচু পানি জমে আছে খেতে। পানি ‘একচুল’ পরিমাণ কমেনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালন ড. সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, ক্ষয়-ক্ষতির একটি তথ্য পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতির শিকার চাষিরা যাতে লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারেন সেরকম প্রস্তাব সম্বলিত একটি চিঠিও ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণের সঙ্গে পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের আগাম রবি ফসল উৎপাদনে সার ও বীজসহ অন্যান্য উপকরণ প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
"