সুমন ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জের চারা সারা দেশে বছরে বিক্রি ৪ কোটি টাকা
মুন্সীগঞ্জে ব্যাপকভাবে শীতকালিন সবজি চারা উৎপাদন ও বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এই চারা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও। কাঙ্ক্ষিত দামের পাশাপাশি চাহিদা থাকায় খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন চারা উৎপাদনকারী কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে একেকটি বীজতলায় ৩-৪ বার চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে প্রতি মৌসুম প্রায় আড়াই থেকে ৩ কোটি চারা উৎপাদন হয়। শীতকালিন সবজি চারা প্রতিবছর সাড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা বিক্রি হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর মুন্সীগঞ্জে ৪ হাজার ৯০৭ হেক্টর জমিতে শীতকালিন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৩ মেট্রিকটন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, শীতকালিন সবজি চারা উৎপাদনে মুন্সীগঞ্জ দেশের মধ্যে প্রসিদ্ধ। এখানকার চারা অন্যান্য জেলার চেয়ে বেশি উৎকৃষ্ট মানের। মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার অনন্ত ৪০ জন কৃষক শীতকালিন লাউ, কুমড়া, মরিচ, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাধাকপি, ব্রোকলি চারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এই চারা প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কর্মকর্তা রনি দাস বলেন, কয়েকটি এলাকার কৃষক চারা উৎপাদনকে প্রধান পেশা হিসেবে নিয়েছেন। চারা উৎপাদনে জৈবসার ও খৈল ব্যবহার করা হয়। এ কারণে চারার গুণগত মান ভালো। বেশি ফলন ও লাভের জন্য সাভার, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাদপুর ,বরিশাল,শরিয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক ও ব্যবসায়িরা চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে সবচেয়ে ৭৭৭, সিরাযুথি, হিমাযুথি , ফ্রেস, স্নো হায়াইট, মারবেল, কার্তিকা, ষাইটশা, চালানি ষাইটশা জাতের কপি চারা নিচ্ছেন কৃষকরা।
জেলার সদর উপজেলার পঞ্চসার, রামপাল, বণিক্যপাড়া, রামশিং, বজ্রযোগিনী, দেওয়ান বাজার, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আব্দুলাহপুর বেকতা, সোনা রং গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার উঁচু জমিগুলোতে বীজতলা বানিয়ে সবজির চারা আবাদ করা হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষায় এসব চারার ওপরে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঢেকে রাখা রাখা হয়েছে। এসব বীজতলার কোনটিতে চারাগুলোর মধ্যে দুয়েকটিতে পাতা গজিয়েছে। কোনটায় বিক্রির উপযোগী হয়েছে, কোনোটায় নতুন চাষ করা হচ্ছে। আবার কোনো বীজতলার বিক্রি উপযোগী চারা থেকে আগাছা বাছাই করে বিক্রির জন্য উঠানোর কাজ করছিলেন কৃষক ও শ্রমিকরা।
সরেজমিন পঞ্চসার ইউনিয়নের বণিক্যপাড়া এলাকায় ঘুরে কথা হয় সবজি চারা উৎপাদনকারীদের সঙ্গে। হারুন মিয়া নামে এক চাষি বলেন, ‘২৫ বছর ধরে চারার চাষ করি। আমাদের চারার চাহিদা খুব বেশি, মানও ভালো। তাই কখনো চারা চাষে লোকসান হয়নি।’
ভট্টাচার্যেরবাগ এলাকার সোহেল বলেন, ‘সবজি চারা চাষ পরিশ্রম বেশি হলেও লাভ ভালো। ১০ বছর অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করছি। সবজির চেয়ে চারা উৎপাদনে প্রচুর লাভ। এ বছর ৩০ শতাংশ জমিতে চারার আবাদ করছি।’
সবজি চারা উৎপাদনকারীরা জানান, প্রতিবছর আগস্টের মাঝামাঝি চারা উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়। ডিসেম্বর পর্যন্ত চারা উৎপাদন হয়। বীজ বোনা থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা বিক্রি করা হয়। প্রতি হাজার চারা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পঞ্চসারের আমির হোসেন বলেন, আগস্টের মধ্যভাগে ৫০ শতাংশ জমিতে তিনি ফুলকপি, বাঁধাকপি চারা চাষ করেন। এতে তার ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। এই চারা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে তার। আরো তিনবার তার জমিতে চারা চাষ করা হবে। এতো সব খরচবাদে তার ৫ লাখ টাকার মতো আয় হবে।
রামপাল ইউনিয়নের জোড়ারদেউল গ্রামের কৃষক হুমায়ন মিয়া জানান, প্রতিবছর তিনি ১৫-২০ লাখ টাকার ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা বিক্রি করেন। এতে সব খরচের পরও প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা লাভ হয় তার। প্রতি বছর কৃষকরা চারা উৎপাদন পেশায় যুক্ত হচ্ছে। অনেকেই বংশপরম্পরায় কয়েক যুগ ধরে এ সবজি চারা উৎপাদন পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলেন তিনি।
চারা উৎপাদন সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, শীতকালিন সবজি চাষ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এর প্রাথমিক পযার্য়ে হিসাবে ব্যাপক চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এসব চারা জেলার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। চারা বিক্রির সঙ্গে জড়িত কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এসব চারার গুণগত মানও ভালো। যে সব কৃষক ভালো ফলন চান, তারা দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে এই সবজির চারা নিয়ে আবাদ করতে পারেন।
"