উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪

উলিপুরে অভিযোগ

খাল খননে অনিয়ম সাত সেতু ঝুঁকিতে

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতা এবং অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন করায় ৯টি সেতুর মধ্যে ৭টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে একটি সেতু ধসে গেছে, আরেকটির উইং ওয়ালের মাটি সরে গিয়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। পাউবোর তদারকির অভাবে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। ফলে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছোট নদী খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ব্রহ্মপুত্র নদের সংযোগস্থল উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের বাগুয়া অনন্তপুর বাজার হতে পান্ডুল বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৭ কিলোমিটার বামনী নদী খননের কাজ পায় রংপুরের এইচ জে বি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের ব্যয় ধরা ৩৭ লাখ ৬ হাজার ৩৫০ টাকা।

জানা গেছে, বামনী নদীটি বাগুয়া অনন্তপুর থেকে হিজলী গোফপাড়া হয়ে ধরনীবাড়ির মাঝবিল বাজার ঘেঁষে জানজায়গীর, কামালখামার এবং গিদারি নদী পান্ডুলের কাগজীপাড়া, কাতস্ত পাড়া, চাকলিরপাড়ায় হয়ে পান্ডুল বাজারে গিয়ে শেষ হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন করায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার বামনী নদীর ওপর নির্মিত প্রায় ৯টি নতুন ও পুরাতন সেতুর ৭টি ঝুকিপূর্ণ হয়ে যায়।

এতে করে সরকারের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৬৯ সালে কাগজিপাড়া গ্রামে গিদারী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। পুরনো হলেও সেতুটি অনেক মজবুত ছিল। এই সেতু দিয়ে পান্ডুল ইউনিয়নের কাগজিপাড়া, আমভদ্রপাড়া, চাকলিরপাড়, জটিয়াপাড়াসহ আশপাশের ৬টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করতেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে গিদারী নদীর খননকাজ শুরু করে পাউবো। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে খনন করায় বর্ষা মৌসুমে সেতুর তলের (অ্যাবাটমেন্ট ওয়াল) মাটি সরে গিয়ে পানি প্রবাহ শুরু হয়। এর কয়েকদিনের মাথায় সেতুটি ধসে যায়।

এছাড়া, মিনাবাজার থেকে মাঝবিলগামী রাস্তায় গাঙ্গারাম নদীর ওপর ৩৪ মিটার সেতু নির্মাণ করে ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর। ২০১১-১২ অর্থ বছরে ব্রিজটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। সম্প্রতি গাঙ্গারাম নদী খনন করলে ওই সেতুটির সংযোগ সড়কের মাথায় উইংওয়ালের মাটি সরে গিয়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে সেতুর তলেদেশ দিয়ে পানি প্রবাহ শুরু হলে পাউবো নামকাওয়াস্তে কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। সম্প্রতি ওই এলাকার হানিফ আলী ওনার স্ত্রী মোটরসাইকেলসহ গর্তে দুর্ঘটনায় পরেন। পরে স্থানীয় লোকজন এবং ফায়ার সার্ভিসের সহযোগীতায় তারা প্রাণে রক্ষা পায় বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল, রাফিয়াল, আব্দুস সালাম, শাহিনুর ইসলামসহ অনেকে জানান, ঠিকাদারের লোকজন তাদের ইচ্ছামতো নদী খনন করায় এই নদী ওপর নির্মিত ৯টি সেতুর বেশিরভাগ সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। খনন কাজে ব্যবহৃত ভেকুচালকরা খেয়াল খুশিমতো নদী খনন করায় নদীর স্বাভাবিক গতিপথ অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে।

এদিকে এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ঠিকাদার রোকন মিয়া। তবে সাব ঠিকাদার আবু তালেব টিয়া বলেন, ‘সেতুগুলো যখন তৈরি করা হয়েছে, তখন নিয়মানুযায়ী করা হয়নি। নিচের ঢালাই এবং নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে এটি নির্মাণ করায় এমন হয়েছে।’

পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল কাদের বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নদী খনন করা হয়েছে। সেতুগুলো পুরনো হওয়ায় হয়তো এমনটা হয়েছে। গিদারী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি অতি পুরনো। তাছাড়া ওই এলাকার কিছু লোক সেতুর কাছ থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় সেতু নিচের মাটি সরে গিয়ে ধসে যায়। জিও ব্যাগ ফেলেও তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

উলিপুর উপজেলা প্রকৌশলী কে কে এম সাদেকুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সেতুগুলোর এই পরিস্থিতি হয়েছে। একটি সরকারি সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে আরেকটি সরকারি সম্পদ নষ্ট করা মোটেও কাম্য নয়। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close