মো.মাইনুদ্দিন রুবেল, বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

  ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯

নালার মুখে বাঁধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ হাজার একর জমির চাষ বন্ধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের বরিশল গ্রামে নালার মুখে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাঁধের কারণে নালার আশপাশের প্রায় এক হাজার একর জমি চাষ করতে পারছেন না কৃষকরা।

মাস খানেক আগে বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে বরিশল গ্রামের প্রায় ৯৩ জন কৃষক স্বাক্ষর করে সদর উপজেলা সহকারি কমিশনারের (ভূমি) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এদিকে কৃষকদের দাবি, পানির নিচে থাকা জমিগুলো থেকে দ্রুত পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা না করা হলে লোকসানের মুখে পড়বেন তারা।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামের হুমায়ূন কবির নামের এক ব্যক্তি ওই এলাকার কিছু জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন। বন্দোবস্ত পাওয়া ওই জমি ভরাটের উদ্দেশ্যে হুমায়ূন কবির ও তাঁর লোকজন নালার মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন। যে কারণে ওই এলাকার জমিগুলো পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। পানি জমে থাকায় জমিতে চাষ করা যাচ্ছে না। বাঁধ দিয়ে নালার মুখ বন্ধ করে রাখার কারণে জমিতে থাকা পানি পাশের তিতাস নদীতে সরতে পারছে না। বর্ষায় এসব জমিতে পানি উঠলে মাছ চাষ করা হয়। কিন্তু এই বাঁধের কারণে তিতাস নদী থেকে পানি আসবে বলে সেটাও তখন সম্ভব হবে না। নালার মুখের বাঁধের পশ্চিমপাশে বরিশল গ্রামের কৃষকদের প্রায় এক হাজার একর জমি রয়েছে বলে তাঁরা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা উপজেলা সহকারি কমিশনারের কাছে বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন করেছেন। বর্ষায় তিতাস নদীর পানি এই নালা দিয়ে ওই বিলে প্রবেশ করে। আর শুকনো মৌসুমে বিলের পানি তিতাস নদীতে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার পৌর এলাকার বড় বাজার হয়ে সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের বরিশল গ্রাম শুরু। জমিগুলোর মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া সরু খালের মুখে বাঁধ দেওয়ায় কৃষকদের ফসলি জমিতে পানি জমে রয়েছে। নালাটি যেখানে গিয়ে তিতাস নদীতে মিশেছে সেখানেই বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধের পশ্চিম দিকের বিলে কৃষকদের প্রায় এক হাজার একর ফসলি জমি রয়েছে। আর বাধের পূর্ব দিকে তিতাস নদী। এই নালা দিয়ে তিতাস নদীর পানি ওই বিলে প্রবেশ করে আবার বিলের পানি তিতাস নদীতে যায়। কিন্তু এই বাঁধের কারণে পানিতে তলিয়ে যাওয়া কৃষকদের ফসলি জমি থেকে পানি তিতাস নদীতে সরতে পারছে না। প্রায় এক মাস ধরেই কৃষকদের জমিগুলো এই অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

বরিশল গ্রামীন বাংলা মৎস্য সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি বিল্লাল হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ওই বিলে প্রায় পাঁচ হাজার একর জমি রয়েছে। শ্যামনগর গ্রামের হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যক্তি নালার মুখে ওই বাঁধ দিয়েছেন। যদি এই নালার মুখের বাঁধ তুলে দেওয়া না হয় তাহলে আমাদের জমিতে কোনো ধান লাগানো যাবে না। ওই বিলে থাকা তাঁর ২০ কানি জমির ১০ কানিই পানির নিচে রয়েছে বলে জানান তিনি। বাসুদেব ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রমজান আলী গন্দু মিয়া বলেন, ‘ওই এলাকায় আমারও জমি আছে। আমরা এখানে চাষ করতে পারছি না। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাই’।

আলমগীর হোসেন নামে একজন বলেন, এই নালা ছাড়া আমাদের বিকল্প কোনো উপায় নেই। এই নালা দিয়ে বর্ষাকালে পানি বিলে আসে এবং বিল থেকে পানি তিতাস নদীতে যায়। তিনি জানান, তাঁর ৬৫ কানি জমির মধ্যে রোপন করা বোরো ধানের ২৬ কানি জমি পানির নিচে রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পাশের কিছু জমি বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। বালুর সাথে মিশ্রিত পানি যেন অন্য জমিতে না যেতে পারে সে কারণে এখানে বাঁধ দেওয়া হয়েছে।’ তবে জমি ভরাটের পর বাঁধ খুলে দেওয়া হবে কি না এ বিষয়ে তিনি কোনো সদোত্তর দিতে পারেন নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, এই মুহুর্তে এ ধরণের অভিযোগের বিষয়টি মনে করতে পারছি না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুক্তভোগীদের যোগাযোগ করার পরামর্শও দেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close