ক্রীড়া ডেস্ক
রূপকথার জয়
বাংলাদেশ ৪ : ভারত ৩
অবিশ্বাস্য, অভুতপূর্ব, অভাবনীয়, অকল্পনীয়, অনুনোমেয় কিংবা অতুলনীয়। কাল সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ যেভাবে ভারতকে হারালো সেটার বিশেষণ হতে পারে এ রকম অনেককিছুই। তিন গোলে পিছিয়ে থাকার পরও প্রতিবেশিদের ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে রূপকথার এক জয়ই তুলে নিয়েছে বাংলাদেশের কিশোররা। সাফ ফুটবলে এরচেয়ে দারুণভাবে শুরু করতে পারত না লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের জন্য একটা দুঃস্বপ্ন হয়েছিল ভারত। যে কোনো খেলাতেই ভারতে এতে স্বপ্নের তরী ডুবেছিল বাংলাদেশের। কাল একটা প্রতিশোধও নেওয়া হলো। ভারতের (জয়) মুখের খাবারটাই যেন কেড়ে নিলেন দেশের কিশোররা।
কাল থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে যেন জড়ো হয়েছিল পৃথিবীর সব রোমাঞ্চ। যার শেষ হয়েছে বাংলাদেশের জয়ে। তিন গোল হজম করা জ্বলে ওঠে বিরতির পর। প্রথমে গুণে গুণে তিন গোল শোধ করে। কিন্তু তাতেও শেষ হয়নি প্রত্যাবর্তনের এই রূপকথা। ম্যাচের যোগ করা সময়ে কর্নার থেকে হেড করে ছিনিয়ে নেয় জয়সূচক গোল।
বিরতিতে বাংলাদেশ কোচ মাহবুব হোসেন রক্সি তার খেলোয়াড়দের কী টোটকা দিয়েছিলেন? ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল সব। দ্বিতীয়ার্ধের ৪৫ মিনিট হবে শুধু তাদের, এই পণ নিয়েই যেন মাঠে প্রবেশ করলেন জাফর ইকবাল, রহমত মিয়ারা। দগদগে ক্ষতের ওপরে যেভাবে প্রলেপ দেওয়া হয়, সেভাবে একের পর এক গোল শোধ করে তিন গোলের ক্ষতে প্রলেপ দিল তারা। সবশেষে শেষ বাঁশি বাজার আগে জাফর ইকবালের হেডে কাক্সিক্ষত জয়সূচক গোল। অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ ফুটবলের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৪-৩ গোলে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় জয়।
রক্ষণভাগের ভুলে লালপুজার গোলে ১৯ মিনিটেই পিছিয়ে পরে বাংলাদেশ। ১২ মিনিট পরেই ভারতীয়দের আবার পেনাল্টি উপহার দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক টুটুল হোসেন বাদশা। স্পটকিক থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেছে ভারতীয়রা। আর বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে ফ্রি কিক থেকে দর্শনীয় গোলে ৩-০। মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের গলায় কাল গোলের মালা পরিয়ে দেবে ভারত। কিন্তু রোমাঞ্চ তো তখনো শুরুই হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই জ্বলে ওঠে বাংলাদেশের যুবারা। লিখেছে প্রত্যাবর্তনের রূপকথা।
বাংলাদেশের এই রূপকথার নায়ক উইঙ্গার জাফর ইকবাল। নিজে জোড়া গোল করেছে, করিয়েছে আরও একটি। ৫৫ মিনিটে কর্নার থেকে হেডে গোল করে গোলের খাতা খুলে ৩-১ করে জাফর। ৯১ মিনিটে জয়সূচক গোলটিও এসেছে তার হেড থেকে। মাঝের দুটি গোল রহমত মিয়া ও সুফিলের।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ভারতীয়দের চেপে ধরে বাংলাদেশ। ফুল প্রেসিং করে ভারতীয় ডিফেন্ডারদের ভুল করতে বাধ্য করে জাফর, সুফিলরা। এমনই এক ভুলে ইনডিরেক্ট ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। ৬০ মিনিটে সে কিক থেকে ৩-২ করে রহমত। সমতায় ফিরতে তখনো এক গোল বাকি। আক্রমণে আরও মরিয়া হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ৭৪ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে জাফরের ক্রসে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে হেডে গোল করে সুফিল। ৩-৩ গোলে সমতা, প্রথমার্ধ বিবেচনা করলে এটাই বা কম কিসের। কিন্তু জাফর যে পণ করেই মাঠে নেমেছিলেন কাল। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে কর্ণার থেকে গোল করে বাংলাদেশকে উপহার দেন মহাকাব্যিক এক জয়।
"