আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৫ আগস্ট, ২০২০

‘ভাইরাসের চেয়ে স্কুলে না যাওয়া বেশি ক্ষতিকর’

শিশুরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হবে স্কুলে না গেলে। ইংল্যান্ডের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি এমনটাই মনে করেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে শিশুদের মারা যাওয়ার আশঙ্কা অবিশ্বাস্য রকম কম। কিন্তু স্কুলে না যাওয়ার কারণে দীর্ঘমেয়াদে তারা শরীরিক ও মানসিক ক্ষতির শিকার হবে। করোনাভাইরাস মহামারিতে ইউরোপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের একটি যুক্তরাজ্য। সেখানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন প্রায় ৪৭ হাজার জন। ভাইরাসের বিস্তার রোধে অন্যান্য দেশের মতো সেখানেও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের লাখ লাখ শিশু সেপ্টেম্বরে স্কুলে ফেরার অপেক্ষায় আছে। অধ্যাপক হুইটি বলেন, আরো অন্তত ৯ মাস আমাদের কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, সম্ভবত ২০২০ সালের মধ্যে কোনো টিকা পাওয়া যাবে না। যদিও আগামী শীতের আগে (২০২১-২২) একটি কার্যকর টিকা পাওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে। বিবিসি জানায়, ইংল্যান্ডে সেপ্টেম্বর থেকে সব বয়সের, সব বর্ষের এবং সব গ্রুপের শিক্ষার্থীদের ‘ফুল-টাইম’ ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্কটল্যান্ডে এরই মধ্যে স্কুল খুলে গেছে। চিকিৎসা উপদেষ্টা অধ্যাপক হুইটি বলেন, অনেক শিশু স্কুলে যাওয়ার চেয়ে স্কুলে না যাওয়ার কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যসহ সারা বিশ্বেই এখন একটি বিষয় স্পষ্ট। তা হলো শিশুরা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলেও গুরুতর অসুস্থ হচ্ছে না বা তাদের খুব একটা হাসপাতালে যেতে হচ্ছে না। যেহেতু কোভিড-১৯ এর কোনো কার্যকর টিকা এখনো হাতে পাওয়া যায়নি তাই এখন পর্যন্ত ‘ঝুঁকিমুক্ত কোনো পথ’ নেই। যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা কর্মকর্তারা তাই অভিভাবক ও শিক্ষকদের স্কুল খোলার ঝুঁকি এবং লাভ উভয়ের গুরুত্ব বোঝার পরামর্শ দিয়েছেন।

নানা গবেষণায় দেখা গেছে, দিনের পর দিন স্কুলে না যাওয়ায় শিশুদের দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় ভোগার ঝুঁকি অনেক বেশি। অধ্যাপক হুইটি বলেন, সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে যে কয়টি শিশু মারা গেছে তাদের প্রায় সবাই আগে থেকে কোনো না কোনো জটিল রোগে ভুগছিল। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ১৯ বছরের কম বয়সের ১০ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ২০ বা তার অধিক বয়সে মোট মৃত্যু ৪৬ হাজার ৭২৫। ইংল্যান্ডে ১০ লাখের বেশি শিশু জুন মাস থেকে প্রি-স্কুল বা স্কুলে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৭০টি শিশু এবং ১২৮ জন কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৩০ জায়গায় স্কুলের কর্মীদের মাধ্যমে শিক্ষার্থী বা অন্য কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। মাত্র দুই জায়গায় শিক্ষার্থীর মাধ্যমে স্কুলে অন্যরা আক্রান্ত হন। গত রোববার প্রকাশিত পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের (পিএইচই) নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এবং ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও সেন্ট জর্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরিচালিত এ গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, শিশুদের স্কুলের চেয়ে বাড়িতেই ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে সব প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তার পক্ষ থেকে কথা বলেছেন অধ্যাপক হুইটি। নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে সামনের দিনগুলোতে ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কাও সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেছেন তিনি।

শিশুরা স্কুলে যেতে শুরু করলে আরো বেশি অভিভাবক কাজে ফিরতে শুরু করবেন। সেক্ষেত্রে ভাইরাস বিস্তারের ঝুঁকিও বাড়বে। এ প্রসঙ্গে হুইটি বলেন, আসছে শরৎ ও শীতে ভাইরাস সংক্রমণ আবার বাড়বে। বিষয়টা জনগণের মেনে নেওয়া উচিত। তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়লে তা বৃদ্ধ এবং অন্যান্য বয়সের আরো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যেতে পারে। হুইটির মতে, অন্তত আরো ৯ মাস মানুষকে এই গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বরং স্কুল খুললে অভিভাবকরা স্কুলের ফটকে দেখাসাক্ষাৎ করবে, অথবা হয়তো একজন আরেকজনের বাচ্চাকে স্কুলে আনা নেওয়া করবে। তার অর্থ, সরাসরি না হলেও স্কুল খোলার কারণে সংক্রমণ কিছুটা বাড়বে। তিনি বলেন, সম্ভবত শিক্ষার্থীদের থেকে কর্মীদের ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার চেয়ে কর্মীদের থেকে অন্য কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বেশির ভাগ কাজের জায়গায় দেখা গেছে কর্মীরাই নিজেদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রেখে ভাইরাস ছড়িয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close