আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯

ভেনিজুয়েলায় আলোচনার প্রস্তাব মাদুরোর, গুইদোর ‘না’

চলমান রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ভেনিজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুইদোর সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েও সাড়া পাননি দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। গত শুক্রবার ইউনাইটেড সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান মাদুরো জানান, তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ‘কথা বলতে প্রস্তুত’।

তাৎক্ষণিকভাবে গুইদো এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। বলেন, তিনি ‘নকল সংলাপ’-এ অংশ নেবেন না। গত বুধবার এ বিরোধীদলীয় নেতা নিজেকে ‘ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট’ ঘোষণা করার পরপরই দেশটিতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পায়, জানিয়েছে বিবিসি।

গুইদো নিজেকে ভেনিজুয়েলার শীর্ষকর্তা ঘোষণা দেওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ তাতে সমর্থন জানায়। এর প্রতিক্রিয়ায় মাদুরো তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কারাকাসের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

মার্কিন কূটনীতিকদের ভেনিজুয়েলা ছাড়তে ৭২ ঘণ্টা সময়ও বেধে দেন তিনি। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে তার দেশের দূতাবাস ও সব কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দেন।

ওয়াশিংটনের মদদে গুইদো ‘অভ্যুত্থান ঘটানোর’ চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন সোশ্যালিস্ট ঘরানার এ নেতা। নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণার পর গুইদো ভেনিজুয়েলার সেনাবাহিনীকে মাদুরোর পাশ থেকে সরে আসার আহ্বান জানালেও দেশটির সেনাপ্রধান বলেছেন, তার বাহিনী সরকারের সঙ্গেই আছে, থাকবে।

বিরোধীরা চলতি সপ্তাহে কারাকাসসহ বিভিন্ন শহরে মাদুরোবিরোধী বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে বলেও জানিয়েছে বিবিসি। পশ্চিমারা গুইদোর পক্ষে থাকলেও মাদুরো রাশিয়া, চীনের মতো বিশ্বশক্তির সক্রিয় সমর্থন পেয়েছেন।

মস্কো গুইদোকে দেওয়া বিভিন্ন দেশের সমর্থনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও ‘রক্তপাতের পথে যাত্রা’ হিসেবেও অভিহিত করেছে তারা।

ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এরই মধ্যে রুশ সামরিক ঠিকাদাররা গোপনে ভেনিজুয়েলা পৌঁছেছেন বলে বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।

ইরান, মেক্সিকো, তুরস্ক, কিউবা, বলিভিয়া ও নিকারাগুয়ার মতো আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশও মাদুরো প্রশাসনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভেনিজুয়েলার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল শনিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক হওয়ারও কথা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সাবেক মার্কিন কূটনীতিক এলিয়ট আব্রামকে ভেনিজুয়েলার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নতুন দূত হিসেবে নিয়োগ করেছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো।

এলিয়ট গত শতকের ৮০-এর দশকে রোনাল্ড রিগান প্রশাসনে আন্তঃআমেরিকানবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ছিলেন।

ভেনিজুয়েলায় মার্কিন দূতাবাস বন্ধের নির্দেশ

ভেনিজুয়েলায় মার্কিন ষড়যন্ত্রে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ করার পর প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো আমেরিকায় তার দেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।

২৪ জানুয়ারি বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইডো নিজেকে ভেনিজুয়েলার অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করার পর আমেরিকা তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর মাদুরো এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট মাদুরো আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং তার দেশ থেকে আমেরিকার সব কূটনীতিককে দেশে ফেরার জন্য ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেধে দেন। গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া দীর্ঘ ভাষণে প্রেসিডেন্ট মাদুরো তার দেশে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালানোর জন্য মার্কিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে বিশ্বের নেতা মনে করেন এবং এ নীতির আওতায় তিনি ভেনিজুয়েলার ওপর তাদের পছন্দের একটি সরকার চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।

হুয়ান গুয়াইডো নিজেকে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করার পর দেশটিতে ব্যাপক রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয় এবং রাশিয়া, চীন, ইরান, তুরস্কসহ বিশ্বের অন্তত ১০টি দেশ মাদুরোর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close