সাভার (ঢাকা) ও কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
কমলগঞ্জে কর্মবিরতি
বকেয়া বেতন দাবিতে সাভারে সড়ক অবরোধ
বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকার সাভারে পোশাকশ্রমিকরা সড়ক অবরোধ ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে চা-শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করেছেন।
সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেনারেশন নেক্সট লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইলে অবস্থান নিয়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। এর আগে সকাল ৮টার দিকে আশুলিয়ার গোরাট এলাকায় কারখানার সামনে থেকে মিছিল নিয়ে বাইপাইলে এসে সড়ক অবরোধ করেন তারা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, গত তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না তারা। বেতন না দিয়ে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে কয়েকবার মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। বার বার আশ্বাস দিলেও তারা বেতন পরিশোধ করেনি। তিন মাস অতিবাহিত হলেও অধিকাংশ শ্রমিক বেতন বোনাস পায়নি। কারখানার স্টাফদের বেতন বকেয়া আছে চার থেকে পাঁচ মাসের। এরপর আমরা বিজিএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে গেলে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেয়। তবে এখন পর্যন্ত কারখানা খুলে দেয়নি, বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেনি। তাই বাধ্য হয়ে মহাসড়কে এসেছি। বেতন না পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে।
নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল ত্রিমোড়ে অবরোধ করায় বাইপাইল-আবদুল্লাপুর সড়কও বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে এই দুই সড়ক মহাসড়ক দিয়ে চলাচলরত মানুষজন।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, অবরোধের বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে এসেছি। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জেনারেশন নেক্সট লিমিটেড কারখানার শ্রমিক। কেউ দুই মাস, কেউ আরো বেশি মাসের বেতন বকেয়া। বিষয়টি সমাধানের জন্য মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
এদিকে বকেয়া মজুরির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন রাষ্ট্রমালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) চা-শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার সকাল থেকে দেশের এনটিসির ১৬টি চা-বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
গত রবিবার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে এনটিসির বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকনেতারা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আজ থেকে এই কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন। চা-শ্রমিকদের ভাষ্য, শ্রমিকদের পাঁচ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া আছে। মজুরি না পেয়ে অর্থকষ্ট নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা। মালিকপক্ষ বকেয়া মজুরি পরিশোধ না করলে তারা কাজে ফিরবেন না।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন জানিয়েছে, সারা দেশে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১৬টি চা-বাগান আছে। এসব বাগানে প্রায় ১৭ হাজার চা-শ্রমিক কাজ করেন। তাদের ওপর আরো ৩০ হাজার মানুষের ভরণপোষণ নির্ভর করে।
পদ্মছড়া চা-বাগানের বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি কৃষ্ণলাল দেশোয়ারা বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকদের ঘরে খাবার নেই। তারা অনেক কষ্ট করে চলছেন। এখন পেটে খিদা নিয়ে শ্রমিকেরা কাজ করবেন কীভাবে?’ চা-শ্রমিকদের কর্মবিরতির কর্মসূচিতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সমর্থন আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল।
এনটিসির মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক বলেন, শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন না হওয়ার কারণে কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি আশা করছেন শিগগিরই পরিচালনা পরিষদের পূর্ণাঙ্গ গঠন হবে এবং শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে পারবেন। তিনি বলেন, এখন চা-বাগানগুলোতে উৎপাদনের সময়। এই সময়ে শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে গেলে চা-বাগানের অনেক ক্ষতি হবে।
"