নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

ভোজ্যতেলের দাম কমাতে করছাড়

আমদানিতে মওকুফ ১০% বিক্রিতে মওকুফ ১৫%

দাম নিয়ন্ত্রণে সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর আরোপিত ভ্যাট ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভোজ্যতেল আমদানি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কেনাবেচার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমিয়েছে সরকার। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন কিংবা পাম তেলের উৎপাদন এবং ব্যবসায়িক পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১৫ শতাংশ মওকুফ করা হয়েছে। আর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন কিংবা পাম তেল আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ মওকুফ করা হলো। গতকাল বৃহস্পতিবার এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানের সই করা এ সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপনে ভ্যাট কমানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর এ সিদ্ধান্ত নিলো। ১৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমানোর সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। এছাড়া উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহারেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে বুধবার সরকার পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ৯ অক্টোবর এনবিআর অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে। এ ছাড়া ডিমের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে সরকার ডিম আমদানির অনুমিত দিয়েছে। সেই সঙ্গে ডিমের আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী নেতাদের বৈঠকে ভোজ্যতেলের আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ এবং উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত সমুদয় মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়।

এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্যসচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। তবে শুল্ক ছাড় দিলে দাম বাড়বে না বলে জানিয়েছে পরিশোধনকারী মিল মালিকরা। বর্তমানে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৭ টাকায়। সেটি ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৫১ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে ১ লিটারের ১৬৭ টাকার বোতল ১৭২ টাকা, ৫ লিটারের ৮১৮ টাকার বোতল ৮৩০ টাকা, সুপার পাম ১৩৫ টাকার থেকে বাড়িয়ে ১৪৩ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোজ্যতেলের ওপর আরোপিত ভ্যাট ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিল ট্যারিফ কমিশন। এছাড়া আগামী ১ নভেম্বর থেকে খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি নিষিদ্ধ করে ৫০০ মিলিলিটার, ২ লিটার, ৩ লিটার, ৮ লিটার, ১৬ লিটারের টিন এবং পাউচ প্যাকের দাম নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

ট্যারিফ কমিশন জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে গত ১৮ এপ্রিল থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং আরবিডি পাম তেলের দাম ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক দর ও দেশের বাজারের বাস্তবতা বিবেচনায় সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি এক দশমিক ৪৭ থেকে ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং পাম তেল ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে মিল মালিকেরা ব্যাংক ঋণের সুদ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, বেতন ও পরিবহন খরচের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ করেছে।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি কমাতে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সমন্বয় না করে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ছাড় দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় না হলে আসন্ন রমজানের বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় স্পর্শকাতর এই পণ্যটির সরবরাহ সংকট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উপমহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে, তাই স্থানীয় বাজারেও দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম এখন এক হাজার ৩০ থেকে ১ হাজার ৪০ ডলার, যা এক মাস আগে ছিল ৯৫০ থেকে ৯৭০ ডলার। সরবরাহ ঘাটতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। খরার কারণে ব্রাজিলের অনেক সয়াবিন খেতে আগুন লাগায় উৎপাদন কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে।

তসলিম শাহরিয়ার আরো বলেন, বায়োডিজেলের চাহিদা বাড়ছে, এতে সয়াবিনের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে সয়াবিনের চাহিদা ও জোগানে ব্যবধান তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ২২ লাখ টন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ লাখ টন আমদানি করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close