নিজস্ব প্রতিবেদক
সিটি নির্বাচনে এমপিদের আচরণবিধি সংশোধন নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ইসি
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপি প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়ে আচরণ বিধিমালা সংশোধন নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালায় সংশোধনী আনার বিষয়ে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ-সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আচরণ বিধিমালায় কী ধরনের সংশোধনী আনা যায় তা পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিতে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে কমিশন দেখছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি জানান, বৈঠকে বিএনপির দাবিদাওয়া নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। গতকাল ইসিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে ইসির এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চার কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আচরণ বিধি সংশোধন প্রসঙ্গে কমিশন সভার আলোচনার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, আচরণ বিধিমালার সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কারা তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিটি করপোরেশন বড় এলাকা নিয়ে গঠিত। পৌরসভা ও ইউপি ছোট এলাকা নিয়ে গঠিত। অনেক সংসদ সদস্য সিটি এলাকায় বসবাস করে থাকেন, যাওয়া আসা করে থাকেন। স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনের তফসিল হলে তাদের নিজ এলাকায় যাওয়া আসাটা অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। আচরণ বিধিতে বলা আছে শুধু ভোটের দিন ভোট দিতে যেতে পারবেন। অন্য সময় যেতে পারবেন না। যার ফলে সংসদ সদস্যদের নিজের এলাকার বাইরে থাকতে হয়। সেদিক বিবেচনা করে আলোচনাটা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কবিতা খানমের নেতৃত্বে আইন ও বিধিমালা সংস্কাওে যে কমিটি রয়েছে, সেই কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেবেন। এরপরে বিষয়টি কমিশনে উত্থাপন করবেন। এ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, এমপিদের প্রচারের সুযোগ দিয়ে আচরণ বিধিমালা সংশোধনের পক্ষে একাধিক নির্বাচন কমিশনার ও ইসির কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন। তাদের কেউ কেউ এ বিধিমালাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও বৈঠকে মন্তব্য করেন। অপরদিকে, সংশোধনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে একজন কমিশনার বৈঠকে বলেন, এ পর্যায়ে বিধিমালা সংশোধন করা হলে কমিশনের ভাবমূর্তি নিয়ে কথা উঠবে।
আরেকজন কমিশনার বলেন, আচরণ বিধিমালায় আরো কয়েকটি জায়গায় অসংগতি রয়েছে, সংশোধন করলে সবজায়গায় একসঙ্গেই সংশোধন করা দরকার। বিধিমালা সংশোধন নিয়ে ইসি সচিব আরো বলেন, আচরণ বিধিতে কি কি সংশোধন আসতে পারে তা বিধি-সংস্কার কমিটি একটি প্রস্তাব দেবে। এজন্য কমিটিকে কোনো সময় বেধে দেওয়া হয়নি। দ্রুত এই প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের চাপে কি এই উদ্যোগ কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, চাপে না। যেকোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের স্টেক হোল্ডার। তাদের নিয়ে কাজ করতে হয়। তাদের নিয়ে পরামর্শ করে আলাপ আলোচনা করে তাদের সুবিধা অসুবিধাগুলো আমরা বিবেচনা করি। বিএনপির দেওয়া প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, কমিশন সভায় বিএনপির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়নি। তাদের প্রস্তাব নিয়ে কমিশন সভা হবে কি না তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হয়তো হতে পারে।
আজকের বৈঠকে এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। অপর এক প্রস্তাবের জবাবে সচিব বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে সংশোধিত আচরণ বিধিমালা প্রয়োগ হবে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ এপ্রিল ইসিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দিতে আচরণ বিধি সংশোধনের দাবি জানান।
"