ধর্ম
তাওবায় মুমিনের হৃদয় পবিত্র হয়
মাসউদুল কাদির
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। এই মানুষকেই আশরাফুল মাখলুকাত বলা হয়। সৃষ্টির সেরা বা শ্রেষ্ঠ হিসেবেই মানুষকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন। কেবল সৃষ্টিই করেননি, সঙ্গে দিয়েছেন কিছু বিধিবিধান, নিয়মশৃঙ্খলা। এই মানুষকে সৎ ও সুন্দর পথে পরিচালিত করতেই যুগে যুগে এসেছেন অসংখ্য নবী-রাসূল। মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার চূড়ান্ত সফলতার জন্য এসব নবী-রাসূলকে পাঠিয়ে বারবার সতর্ক করেছেন। এক লাখ বা দুই লাখ চব্বিশ হাজার পয়গম্বর দুনিয়ায় এসেছিলেন। তারা কেবল মানুষের কাছে পরকালীন সফলতার কথা তুলে ধরেছেন। মানুষের আত্মিক ও আত্মশুদ্ধির জন্য তারা মেহনত করেছেন। দুনিয়ার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষের পেছনে আষ্টেপৃষ্ঠে বড় ধরনের প্রতারক ও প্ররোচক হিসেবে কাজ করছে শয়তান। মাটির গুণই হলো ফিরে আসা। যতবার ওপরের দিকে নিক্ষেপ করা হয়, ততবারই মাটি নিচের দিকে ফিরে আসে, অমনমিত হয়। মানুষও মাটির সৃষ্টি। মানুষের মধ্যেও এই গুণটি রয়েছে। মানুষ ভুল করে, আবার সততার পথে ফিরে আসে। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিও এমনই। বার বার ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। ইসলাম উদারতার পথ, সহজতার পথ, চূড়ান্ত সফলতার পথ। বান্দার যখনই ফিরে আসার কথা মনে পড়বে, তখনই যেন সে ফিরে আসে। আর যেন বিলম্ব না করে।
মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ তায়ালার দরবারে বান্দার ফিরে আসাটা অধিক পছন্দনীয়। কোনো মানুষ অপরাধ করার পর যখন আল্লাহর কাছে তাওবা করে এবং তার দ্বারা সংঘটিত গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন আল্লাহ তাকে অত্যধিক পছন্দ করেন, তার তাওবা কবুল করেন এবং তাওবার মাধ্যমে বান্দাকে পবিত্র করেন। আল্লাহ তায়ালা নিজেই মুমিনদের তওবা করার নির্দেশ দিয়ে বলেনÑ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে তাওবা (প্রত্যাবর্তন) কর। নিশ্চয়ই তোমরা সফলকাম হবে।’ [সূরা নূর, আয়াত ৩১]
তাওবাকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন। তাকে তিনি সফল ব্যক্তি বলেছেন। তখন ওই ব্যক্তি যদি ইন্তেকাল করে, তবে সে-ই তো সফল। আখিরাতের অনন্ত শান্তির ¯িœগ্ধ আলোর ফোয়ারায় সে ভেসে বেড়াবে, পাখির মতো উড়ে বেড়াবে। আল্লাহ মালিক, প্রভু, প্রতিপালক। বান্দার প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর শাশ্বত-অফুরন্ত নিয়ামতের বারিধারায় সিক্ত। তাই বান্দাকে ফিরে আসতেই হবে অনন্ত সফলতা ও কল্যাণের জন্য।
আর যারা ফিরে আসে না, আল্লাহর অনন্ত নিয়ামত উপভোগ করেও তার পথ মাড়ায় না, তাদের মহান আল্লাহ তায়ালা জালিম হিসেবে অভিহিত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা তাওবা করবে না, তারাই অত্যাচারী।’ [সূরা হুজুরাত, আয়াত ১১]
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে মুমিনদের দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। এক. তাওবাকারী। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তারাই সফলকাম। দুই. যারা তাওবা করে না। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তারাই অত্যাচারী ও জালিম। এই দুই ভাগের মধ্যে কোনো তৃতীয় ভাগ নেই। তাই মুমিন সব সময়ই আল্লাহর কাছাকাছি থাকতে, আল্লাহকে ভালোবেসে এগিয়ে যেতে পছন্দ করে। কোনোভাবেই মুমিন জালিমের কাতারে, মুনাফিকের শিবিরে দাঁড়াতে চায় না। মুমিনের পথ মসৃণ, সুন্দর ও সুনির্ধারিত। ‘ইহ্দিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম’ (হে আল্লাহ, তুমি আমাকে সহজ-সরল পথ দেখাও)Ñআল্লাহর কাছে তো এই প্রার্থনাই থাকে মুমিনের।
আত্মভোলা বান্দা যখন আবার ফিরে আসে, অনন্তময়ের মহাসড়কে উঠে দাঁড়ায়, তখন আল্লাহ খুশি হন। প্রভু তার মুহাব্বাতের দরজা খুলে দেন, তার ভালোবাসার দ্বার উন্মুক্ত করে দেন, বান্দা যেন সতত সৌন্দর্যের পথে আনন্দ পায়, তৃপ্তি পায়। যেমন, হজরত বিলাল (রা.), খাব্বাব (রা.) ইমানের সেই স্বাদ পেয়েছিলেন, সেই তৃপ্তি পেয়েছিলেন।
আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় বান্দার তাওবায় ওই ব্যক্তির চেয়ে বেশি খুশি হন, যে ব্যক্তি তার বাহন সওয়ারি নিয়ে কোনো জনমানবশূন্য প্রান্তরে অবস্থান করছিল, হঠাৎ তার সওয়ারিটি পালিয়ে গেল। সওয়ারিটির সঙ্গে ছিল তার খাদ্য ও পানীয় বস্তু। লোকটি সওয়ারিটি খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তার ব্যাপারে হতাশ হয়ে একটি গাছের কাছে এসে তার ছায়ায় শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে উঠে সে দেখতে পেল, সওয়ারিটি তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে অধিক খুশিতে তার সওয়ারির লাগাম চেপে ধরে বলল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা এবং আমি তোমার রব! লোকটি অধিক খুশিতে উল্টাপাল্টা বলে ফেলল।’ [সহিহ মুসলিম শরিফ]
মুমিন সব সময় তাওবার মধ্যেই থাকেন। যদি সম্ভব হয়, প্রতিদিন একবার অথবা সপ্তাহে বা অথবা কমপক্ষে মাসে একবার তাওবা করে থাকেন। আমরা নিজেরা নিজেদের হিসাব করে নিতে পারি।
লেখক : ছড়াকার, কলামিস্ট ও ইকরা বাংলাদেশ হবিগঞ্জের প্রিন্সিপাল
"