reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ এপ্রিল, ২০২৪

শিশুদের দেশীয় খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে

বাংলাদেশের গ্রামগুলো একসময় ছিল ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড়। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মণ্ডিত। প্রায় গ্রামেই ছিল ছোট-বড় খেলার মাঠ ও গোচারণভূমি। প্রবল জনসংখ্যার চাপে খাদ্য সমস্যা মোকাবিলায় সুউচ্চ দালানকোঠা ও ধান চাষে মনোযোগী হওয়ায় এর অনিবার্য প্রভাব পড়েছে উদ্বৃত্ত জমি ও বাথানে। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎসহ প্রযুক্তি ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রামগুলোয়ও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। ফলে গোচারণ ভূমি এবং খেলার মাঠ বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয়ও।

সভ্যতার ক্রমবিকাশ আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। শৈশবে যেসব খেলাধুলা খেলেছিলেন আজকের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা, সেসব খেলার নামও এখন ভুলে গেছেন তারা। একসময় গ্রামের শিশু ও যুবক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলায় অভ্যস্ত ছিল। তারা অবসরে গ্রামের খোলা মাঠে দলবেঁধে খেলত। আর খেলাধুলার মাধ্যমে শৈশবে দুরন্তপনায় জড়িয়ে থাকত ছেলেমেয়েরা। কিন্তু মাঠ-বিল-ঝিল হারিয়ে যাওয়ায় আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে মহাকালের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব খেলা। গ্রামীণ খেলা আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতি। এসব খেলাধুলা একসময় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করত। বর্তমানে গ্রামীণ খেলা বিলুপ্ত হতে হতে আজ তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন।

২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সংসদে বাংলাদেশে ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) বিল-২০১৯ উত্থাপন করা হয়। এতে ৪২টি দেশীয় খেলা তালিকাভুক্ত হয়েছে। সেগুলো হলো- হাডুডু, ডাঙ্গুলি, গোল্লাছুট, সাতচাড়া, মোরগ লড়াই, বৌ-ছি, ইচিং বিচিং, কানামাছি ভোঁ ভোঁ, দাঁড়িয়াবান্ধা, এক্কা-দোক্কা, কুত কুত, রুমাল লুকানো, ওপেন টি বাইস্কোপ, ফুল টুকা, দড়িলাফ, বিস্কুট দৌড়, সুইসুতা দৌড়, তৈলাক্ত বাঁশ, কলাগাছে ওঠা, লাঠি খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, বালিশ যুদ্ধ, রশি টানাটানি, ষাঁড়ের লড়ই, গরুর গাড়ির দৌড়, ঘৌড় দৌড়, বস্তা দৌড়, বালিশ বদল, বলি খেলা, লুডু খেলা, পাঞ্জা লড়াই, লাটিম খেলা, গুলতি ছোড়া, ভেলা বাইচ, গুটি খেলা, তীর-ধনুক খেলা, চাকা দৌড়ানো, মার্বেল খেলা, কড়ি খেলা, হাড়ি ভাঙা, হাঁস খেলা, ব্যাঙ দৌড়। বিলে বলা হয়, বিকেএসপি এসব দেশীয় খেলাধুলার বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে।

সুস্থ জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষা আর খেলাধুলার ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুস্থ দেহ ও সতেজ মন ধরে রাখতে খেলাধুলা ও শারীরিক পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আশার কথা, সরকার ক্রিকেট ও ফুটবলের পাশাপাশি সব ধরনের খেলাধুলার প্রসারে সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও একজন ক্রীড়ামোদী। তিনি অন্য খেলার পাশাপাশি দেশীয় খেলাকেও সুযোগ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট’ ও ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট’র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের কিছু দেশীয় খেলা, সেই ডাংগুলি থেকে শুরু করে, বিভিন্ন খেলাধুলা আগে প্রচলিত ছিল। সেগুলো আমাদের আবার চালু করা উচিত। আমাদের নিজস্ব দেশীয় খেলা, হাডুডু থেকে শুরু করে সব খেলা সক্রিয় রাখতে উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরাসহ সবাই মিলে উদ্যোগ নেবেন যেন দেশীয় খেলাগুলো হারিয়ে না যায়।’

আমরা আশা করি, অন্য খেলার সঙ্গে দেশীয় খেলাকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে এবং খেলাধুলার প্রচার ও উপযুক্ত মাঠের ব্যবস্থা করে বর্তমান প্রজন্মকে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম হিসেবে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close