reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ মার্চ, ২০২৪

ডেঙ্গু প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হোক

ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুধু দেশেই নয়, দুই দশক ধরে বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, তা বিবেচনায় নিয়েই এর প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। জানা যায়, বিশ্বের বৃষ্টিপ্রবণ ও উষ্ণ অঞ্চলগুলোয় অতি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে এ রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, এডিসের বিস্তার রোধ করা না গেলে সামনের দিনগুলোয় হয়তো ডেঙ্গুকে মহামারি ঘোষণা করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। আশার কথা, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে ডেঙ্গুমুক্ত করতে জাতীয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল (২০২৪-৩০) গ্রহণ করেছে সরকার।

বলা সংগত, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ পরিকল্পনাটি গত মঙ্গলবার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার লক্ষ্য-২০৩০ সালের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ও এ রোগে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্য মতে, গত বছর ৩ লাখ ২১ হাজার জনেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ। সে হিসেবে মৃত্যুর হার ০.৫৩ শতাংশ। সাত বছরমেয়াদি এ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ কমিয়ে আনা হবে। আর এ রোগে মৃত্যুর হারও কমিয়ে আনা হবে ০.১ শতাংশে। অর্থাৎ প্রতি ১ হাজার রোগীর মধ্যে সর্বোচ্চ একজনের মৃত্যু। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল নেওয়া হচ্ছে। কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, অধিক জলাবদ্ধতা, বন্যা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও দেশের ঋতুতে অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়াসহ ডেঙ্গুর অন্যান্য ভেক্টরবাহিত রোগের সংক্রমণের জন্য বাংলাদেশের জলবায়ু পরিস্থিতি আরো অনুকূল হয়ে উঠছে। ডেঙ্গুর সংক্রমণ বর্ষাকালে শীর্ষে থাকে। মশার ঘনত্ব এবং বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুর সংক্রমণের হার। এতে আরো বলা হয়েছে, ডেঙ্গুর জন্য কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে সময়মতো রোগ শনাক্ত করা, গুরুতর ডেঙ্গু সংক্রমণের সতর্কতা চিহ্ন চিহ্নিত করা এবং উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা হলো মৃত্যুহার ১ শতাংশের কম করার মূল উপাদান। আমরা আশা করি, এ কৌশল বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অন্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করা হবে। চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো হবে, যাতে দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। একইসঙ্গে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা- যাতে কীটনাশক ও অন্যান্য পদ্ধতি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যায়।

বলাইবাহুল্য, ডেঙ্গু যেহেতু কীটবাহিত রোগ, সেহেতু এ রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে রোগ ও কীট দুটিকেই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। কাজেই যারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন, সেই দলে যদি কীটতত্ত্ববিদসহ অন্যান্য কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ না থাকেন, তাহলে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখে দিতে পারে। একসময় ডেঙ্গু রাজধানীতে সীমাবদ্ধ ছিল। তখন এ রোগটি নিয়ন্ত্রণ কিছুটা সহজ ছিল, এখন যা কঠিন হয়ে পড়েছে। যেহেতু এডিস মশা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, সেহেতু এখন এডিস নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। সারা দেশে ডেঙ্গু রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close