reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ মার্চ, ২০২৪

গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে সতর্কতা জরুরি

দেশের সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে। এতে গ্যাসের সুবিধা পাওয়া গেলেও সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় মানুষ শঙ্কিত। বিশেষত সাম্প্রতিককালে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ও গত ১৩ মার্চ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস বিস্ফোরণে নারী, শিশুসহ ৩৬ জন দগ্ধ হন। দগ্ধদের ১০ জনের মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১৮ শতাংশের উৎস ছিল চুলার আগুন থেকে। সংস্থাটির মতে, এগুলোর সিংহভাগেরই কারণ ছিল ব্যবহারকারীদের অসতর্কতা। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে গ্যাস-সংক্রান্ত দুর্ঘটনা ঘটেছে ২০৪টি। ২০২২ সালে তা ছিল ৯৪টি। গত বছর সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ২১০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর আগের বছরগুলোয়ও এ পরিসংখ্যান ছিল উদ্বেগজনক। এজন্য সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বলা সংগত, অনুমোদিত অনেক প্রতিষ্ঠান সিলিন্ডার তৈরি করে বাজারজাতের পাশাপাশি অলিগলির দোকানেও পুরোনো সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। আবার অনেকে অনুমোদন ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে তা বিক্রি করছেন। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে রং করে নতুন বলে তা বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। মানহীন এসব সিলিন্ডার বিক্রি হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বছরে একবার হলেও কোনো দপ্তর কিংবা সংস্থা তদারকিতে আসেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন গ্যাস লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ না করা, অবৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ নেওয়া, অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন কারণে গ্যাস বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটে থাকে। বর্তমানে বেশকিছু দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে লক্ষ করা গেছে, মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার ইনস্টল করার সময় অনেক ক্ষেত্রে লিকেজ থেকে যায়। এলপিজি গ্যাস যেহেতু বাতাসের তুলনায় ভারী, তাই সেগুলো রুমের মেঝেতে জমা হতে থাকে। এমন সময় আগুনের সংস্পর্শ পেলে বিস্ফোরণ ঘটে। যাকে আমরা বলি ‘ভ্যাপার ক্লাউড এক্সপ্লোশন’। এ ক্ষেত্রে প্রথমত, সিলিন্ডারে ভালোমানের যন্ত্রণাংশ ব্যবহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, রুমের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। রুম আবদ্ধ রাখার কারণে এবং গ্যাস সম্পর্কে অসচেতনার কারণে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও যান্ত্রিক ত্রুটি এড়াতে পারলেই অনেকাংশে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত ‘চারদিকে গ্যাসবোমা’ শীর্ষক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে বর্তমানে ৬০ লাখের বেশি এলপিজি ব্যবহারকারী রয়েছেন। এলপিজি সিলিন্ডার প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। ২০১০ সালে আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধের পর থেকে বাসাবাড়িতে এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার বাড়তে থাকে। কয়েক বছর ধরে গ্যাস সংকটের কারণে পাইপলাইনে গ্যাসের গ্রাহকদের অনেকেই এলপিজি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতি বছর চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে এলপিজি সিলিন্ডারের উৎপাদন জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। সে প্রসঙ্গে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতামত হচ্ছে, হাজার হাজার গ্যাস সিলিন্ডারের মান নিয়ন্ত্রণের মতো অবস্থা অধিদপ্তরের নেই। প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট আয়ু থাকে। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বাতিল করা খুবই জরুরি।

বলা বাহুল্য, যেকোনো সিলিন্ডারের মান নিয়ন্ত্রণের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বিস্ফোরণের ঘটনা এড়ানো সম্ভব। আবার যারা সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন, তাদের সচেতনতার বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য গ্যাস ও সিলিন্ডার বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের পরিপত্র জারি রয়েছে। এতে বলা হয়েছে- সিলিন্ডার রাখার জন্য নিরাপদ জায়গা নির্ধারণ করতে হবে, রান্না শুরুর আগে ও শেষ হওয়ার পর সতর্কতা এবং সিলিন্ডার রাখার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং রেগুলেটরসহ সিলিন্ডারের খুঁটিনাটি সব পরীক্ষাসহ রান্নাঘরে যথাযথভাবে বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close