reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

শিশুদের স্কুলমুখী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। মানুষ যেকোনো মাধ্যম থেকেই শিক্ষা অর্জন করতে পারে। তবে শিক্ষা অর্জনের প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যম স্কুল বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। এ মাধ্যমটিই একটি শিক্ষার্থীর জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে না পারে, তাহলে তারা বিদ্যালয়বিমুখ হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশের সরকারি স্কুলগুলোর চিত্র এমন যে, সেখানে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে লেখাপড়া করাতে ভরসা পান না। সেটা নানা কারণেই। অথচ সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হয় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পেছনে।

ঢাকা সিটিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৩৪২টি। এর মধ্যে অনেকগুলো টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি ছোট্ট ঘর। যেখানে কয়েকটি বেঞ্চ বসিয়ে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অনেক বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠ, কোনো কোনো বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই, নেই শৌচাগার। বর্ষাকালে স্কুলের মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। সমস্যা শুধু জরাজীর্ণ ভবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষার সার্বিক আয়োজনেই অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। শিক্ষানীতি অনুসারে বিদ্যালয়গুলোয় প্রতি ৩০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু গড়ে এ সংখ্যা ৪৫ জন, কোথাও কোথাও আরো বেশি। বিদ্যালয়গুলোয় সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত দপ্তরি, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া নেই। ব্যবস্থাপনা কমিটির বা স্থানীয় মানুষের অনুদানে সামান্য বেতনে কোনো কোনো বিদ্যালয়ে এ ধরনের কর্মী রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলো জরাজীর্ণ, মলিন ও অপরিচ্ছন্ন। মানে সর্বত্রই দারিদ্র্য আর অবহেলার ছাপ। বেশকিছু বিদ্যালয়ের জমি ও অবকাঠামো বেদখল হয়ে গেছে।

আশার কথা হলো, এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মহানগরীর ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নতুন রূপে সাজানো হবে। এতে করে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থীর শিশুবান্ধব শিক্ষাগ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিত হবে। এছাড়া উত্তরায় তিনটি ও পূর্বাচলে নতুনভাবে স্থাপন করা হবে ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সব বিদ্যালয়ে থাকবে খেলার মাঠ। প্রতিটি বিদ্যালয়কেই পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন গত সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এসব কার্যক্রম করতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১০০ কোটি টাকা। এরই মধ্যে সম্প্রসারিত ভবনের ডিপিপি প্রণয়ন ও নকশার (ডিজাইন) কাজ শেষ হয়েছে। আগের প্রতিমন্ত্রীর রেখে যাওয়া কাজ শেষ করতে তৎপর বর্তমান প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী। রাজধানীতে ৩৪২টি দৃষ্টিনন্দন সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয় নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। পুরোনো, জরাজীর্ণ এবং ভবনের পলেস্তারা খসে পড়া এসব ভবন সংস্কারের পাশাপাশি চলবে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ। এর মাধ্যমে ভবনগুলো হয়ে উঠবে পাঠযোগ্য।

জরজীর্ণ ও পড়ার অনুপযোগী হওয়ার কারণে রাজধানীর এ সরকারি বিদ্যাপীঠে বছরের পর বছর কমেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ফলে নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজাতে আকর্ষণীয় ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নির্মিত ভবনগুলোর কাজ এমনভাবে করা হচ্ছে, যেখানে থাকবে পরিমিত স্পেস, খেলাধুলার জন্য উপযোগী মাঠ ও পরিচ্ছন্ন শ্রেণিকক্ষ। দীর্ঘদিন পর হলেও শিক্ষাকে আনন্দময় এবং বিদ্যালয়কে শিশুর প্রিয় প্রাঙ্গণ হিসেবে গড়ে তুলতে এই যে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় সেটি হলো, শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলেই হবে না, শিক্ষার মান বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close