জেমাম আহমদ

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ওপেন এআই ‘সরা’

সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনে একটি বৈপ্লবিক অগ্রগতি

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির অন্যতম কর্ণধার হিসেবে বিশ্বের সেরা প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় বেশ শক্ত একটি জায়গা তৈরি করে নিয়েছে ওপেন এআই। চ্যাটজিপিটি দিয়ে প্রযুক্তিবিদ ও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের তালিকায় ধীরে ধীরে অগ্রসরমান পথেই আছে। তবে অত্যাধুনিক এও প্ল্যাটফরমটি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাসহায়ক সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। ওপেনএআই তাদের সর্বশেষ উদ্ভাবন উন্মোচন করেছে ‘SORA’। পরীক্ষামূলক থাকলেও বিশ্বব্যাপী তা সৃজনশীল শিল্পগুলোকে নতুন রূপ দিতে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েই নেমেছে। ঝঙজঅ, যার অর্থ ‘সিন্থেটিক ওপেন-এন্ডেড রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট’। অত্যাধুনিক মেশিন লার্নিং এলগরিদমের শক্তি ব্যবহার করে গবেষক, শিল্পী এবং নির্মাতাদের নতুন ধারণা এবং সমাধানের সন্ধানে সহায়তা করার জন্য এসেছে এই প্রযুক্তি। বর্তমানে প্রচলিত পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য দ্বারা প্রচলিত এআই মডেলগুলোর বিপরীতে ‘সরা’কে ওপেন-এন্ডেড সমস্যাগুলো খুঁজে বের করা এবং অন্তর্জালের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে অন্তর্দৃষ্টি তৈরি করে সমাধান করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ‘সরা’ বেশ কিছু মূল বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। মানুষের সঙ্গে চিন্তাভাবনা তৈরি করে তার সম্ভাবনাগুলো অন্বেষণ করে এর সৃজনশীল বাধাগুলো অতিক্রম করতে কাজ করে। মেশিন লার্নিং কৌশল ব্যবহার করে উন্নত ভাষা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ‘সরা’ একটি বিষয় অথবা নির্দেশনা বোঝে এবং অতি দ্রুত একটি প্রাসঙ্গিক পরামর্শ তৈরি করে এবং ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে নিজে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্প ও নকশাকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত পুনরাবৃত্তি করা ও জটিল সমস্যার সমাধান অন্বেষণ করার ক্ষমতা দিয়ে উদ্ভাবনের গতিকে ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়া বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পণ্যের যথাযথ বিকাশ বা শৈল্পিক অভিব্যাক্তকে অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে ‘সরা’ মানুষের সৃজনশীলতার সীমানার বাইরে গিয়েও অমূল্য সহায়তা প্রদান করে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার থেকে শুরু করে উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি ও আধুনিক নকশা তৈরিতে এর এপ্লিকেশনগুলো সীমাহীন ভূমিকা রাখতে সক্ষম। জটিল বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন অন্বেষণ, ব্যবসায়িক পণ্য উদ্ভাবন ও গ্রাহকের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা উন্নত করতে গবেষকরা এর ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারেন। ওপেনআইয়ের ‘সরা’র আগমন প্রযুক্তি বিশ্বে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন ও সমস্যা সমাধানের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যেহেতু ক্রমশ ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সহায়ক প্রযুক্তিগুলোকে আলিঙ্গন করে চলছে, তাই এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন সম্ভাবনার দরজা প্রসারিত করতে এবং বিশ্বে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ‘সরা’ একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে। এই প্রযুক্তি প্রাথমিকভাবে স্টক ফুটেজ কোম্পানিগুলোর প্রচলিত ভাবধারাকে ভেঙে দিয়ে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করবে, যেখানে বেশির ভাগ কাজ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে করিয়ে নেওয়া হবে। কী ধরনের বিজ্ঞাপন তৈরি করতে চান, তা শুধু লিখে দিলেই একটি বিজ্ঞাপন তৈরি হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে এআই জেনারেটেড বিজ্ঞাপনগুলো মূলধারায় পরিণত হবে। ওপেনএআই তাদের এই নতুন উদ্যোগকে আরো পরিমার্জিত এবং প্রসারিত করার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে এটি আরো আন্তঃসংযুক্ত প্রযুক্তি হিসেবে কাজ করানো যায়। এই কার্যক্রমের ফলে কীভাবে এই প্রযুক্তির অর্থায়ন হবে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থাকলেও বেশির ভাগ মানুষের চাকরি হারানোর সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। যদিও নৈতিক বিবেচনা এবং ব্যবহারকারী শিক্ষার মতো চ্যালেঞ্জগুলো রয়ে গেছে, তারপরও এর সম্ভাব্য সুবিধাগুলো বিশাল। এই প্রযুক্তির উন্নয়নে নৈতিক বিবেচনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে দায়িত্বশীল ব্যবহার ও পক্ষপাতমূলক পদক্ষেপগুলো প্রশমিত করার জন্য সুরক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছে। যেকোনো নৈতিক উদ্বেগের মূল্যায়ন ও সমাধান করার জন্য নির্দেশনা সরবরাহের মাধ্যমে তার স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা করে। ক্রমাগত গবেষণা এবং উন্নয়নের সঙ্গে, ‘সরা’ মানব- এআই সহযোগিতার একটি নতুন যুগ তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং এমন একটি ভবিষ্যতের সূচনা করে যেখানে সৃজনশীলতার কোনো সীমা নেই। তবে এমন কোনো তাত্ত্বিক অর্থনৈতিক মডেল কি আছে যেখানে সব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যায় এবং আমাদের সমাজ তাতে রূপান্তরিত হতে প্রস্তুত কি না- এই প্রশ্নের উত্তরটাও সমানভাবে খুঁজে বের করা উচিত।

লেখক : সফটওয়্যার প্রকৌশলী ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক গবেষক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close