ইমন হাওলাদার

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মুক্তমত

বিবাহবিচ্ছেদ আজ সমাজের মহামারি

বিয়ে একটা পবিত্র শব্দ। যার বৈধতা দিয়েছে প্রতিটি ধর্ম। কিন্তু বর্তমানে এ শব্দকে আমরা শিক্ষিতসমাজ কলুষিত করছি, যা বর্বর মানবসমাজও করেনি। বিয়ে শব্দটি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। মানুষের সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে বিবাহপ্রথার আবির্ভাব। যার মাধ্যমে সমাজের সবচেয়ে প্রাচীন প্রতিষ্ঠান পরিবারের উৎপত্তি। প্রাচীন সময়ে বিয়ে একটি সম্মানের বিষয় হলেও বর্তমানে হয়ে উঠেছে হাসি, ঠাট্টা আর তামাশার বিষয়। কেউ যেন বিয়ে শব্দটি সিরিয়াসভাবে নিচ্ছেন না। স্বামী বুঝতে চায় না স্ত্রীকে। মূল্য দেয় না তার মতামতকে। তেমনিভাবে অনুরূপ কার্যকলাপ সম্পাদন করে থাকেন একজন স্ত্রী। এটা বেশি করে থাকে চাকরিজীবী নারীসমাজ। পূর্বেকার সময়গুলোতে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় এবং পরিবারে একাধিক সন্তানের উপস্থিতি এক ধরনের বাধ্য করত মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দিত। দরিদ্র পরিবারগুলো ঠিকমতো তিনবেলা খাবার খেতে পাড়ত না। তাই মেয়েদের পড়ালেখা তো দূরের কথা, পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রচলন থাকার পড়ও ছেলেদেরও পড়াশোনা করাতে পাড়ত না। সমাজ ছিল অজ্ঞ আর খেটে খাওয়া মানুষে ভরা। তবুও এত বিবাহবিচ্ছেদ দেখা যায়নি তখন, যা অহরহ ঘটছে এখন। শ্বশুরবাড়ির শত অন্যায়, অত্যাচার সহ্য করে তারা সংসার ধর্ম পালন করতেন। অধিকাংশ মহিলারা সতীনের সংসার করতেন। তারপরও বিবাহবিচ্ছেদের মতো নিকৃষ্ট ঘটনা তারা ঘটাতেন না। তখন সমাজে এ রকম বিষয় প্রচলন ছিল যে, বিয়ের পরে স্বামীর বাড়ি সব বাবার বাড়ির কিছুই তার নয়। যদি শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন, অত্যাচারে মৃত্যু নিশ্চিত হয় তবুও বাবার বাড়ি ফেরা ছিল নিষেধ।

এমনকি মেয়েরাও সবকিছু চুপচাপ সহ্য করে সংসার ধর্ম পালন করতেন। কিন্তু বর্তমানে আমরা শিক্ষিত হয়েছি। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অবদান রাখছেন সমাজের প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজে। এখন আর নারীসমাজ পুরুষের অধীনে নয়। কারণ তারাও অর্থ উপার্জন করে, যা অনেক পরিবারে পুরুষের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। এর জন্য শ্বশুরবাড়ির কটুকথা, স্বামীর অযত্নের পরও সংসার ধর্ম পালন করার মতো ধৈর্য তাদের থাকে না। আমাদের মধ্য থেকে সেক্রিফাইজ জিনিসটার বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা অল্পতেই আধুনিক যুগে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছি, যা আমাদের সমাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সেক্রিফাইজ জিনিসটা খুবই দরকার। অনেক পরিবারে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় বাচ্চা নিতে চায় না। অনেক সময় স্বামী চায় স্ত্রী চায় না আবার অনেক সময় এর বিপরীত হয়ে থাকে, যা তাদের বিবাহবিচ্ছেদের দিকে ধাবিত করে। অন্যদিকে আছে পরকীয়া নামক মহামারি, যা যুবসমাজকে ধ্বংসের মুখে পতিত করছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে আধুনিক সমাজ হয়ে উঠছে আরো আধুনিক, তবে এটি বাহ্যিক দিক দিয়ে কিন্তু অভ্যন্তরে মনুষ্যত্বে ধরেছে পচন। তথ্যপ্রযুক্তির আশীর্বাদস্বরূপ একাধিক আবিষ্কারের মধ্যে একটা হলো মুঠোফোন, যা সর্বসাধারণের কাছে ব্যবহারযোগ্য করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে এখন আর বন্ধু পাতাতে মানুষের দ্বারপ্রান্ত হওয়ার দরকার পড়ে না। চাইলেন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইমু, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি

অনলাইন মাধ্যমে পছন্দমতো দেশ-বিদেশে বন্ধু বানিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। ছেলেমেয়ে উভয়েই তার জীবনসঙ্গীর ব্যস্ততায় অনলাইন বন্ধুর সঙ্গে মেতে উঠছে গল্প-গুজব, হাসি-ঠাট্টায়। দীর্ঘদিন কথা বলার একপর্যায়ে ভালো লাগা, দেখা করা, তারপর প্রেমের সম্পর্ক। পুরানকে বাদ দিয়ে নতুনের সন্ধানে ছুটে চলা, যা একজন নবজাতকের জন্য অন্ধকার ভবিষ্যৎ ডেকে আনে। অনেক পরিবার নিজেদের পারিবারিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে বা নিজেদের স্বার্থের বলি বানায় ছেলেমেয়েদের। অনেক ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে, ছেলেদের জন্ম একবার হলেও মেয়েদের জন্ম দুবার। তাদের প্রধান জন্ম স্বামীর সংসারে।

এর জন্য প্রত্যেক অভিভাবকদের উচিত বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের মতের গুরুত্ব দেওয়া। সন্তানদেন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো তাদের সঙ্গে শেয়ার করে নেওয়া। অনেক সময় দেখা যায়, ছেলেমেয়ের বয়সের পার্থক্য অধিক হওয়ায় দুজনের চিন্তাভাবনা, চলাফেরা, পছন্দণ্ডঅপছন্দ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পূর্ণ আলাদা। যার ফলে উভয়ের মধ্যে প্রায় সময় মনোমালিন্য লেগেই থাকে। এটা চলমান থাকার কারণে একপর্যায়ে তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায় বিচ্ছেদ। অভিভাবক শ্রেণির উচিত ছেলেমেয়েদের খারাপ সময়গুলোতে তাদের বেশি সময় দেওয়া। প্রতিটি শাশুড়ি যদি ছেলের বউকে নিজের মেয়ে ভাবতেন আর বউমা শাশুড়িকে নিজের মা, তাহলে হয়তো সংসারে এত ঝামেলা থাকত না, হতো না বিচ্ছেদ। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত শত ব্যস্ততার মধ্যেও একে অন্যকে সময় দেওয়া। উভয়ের মতকে গুরুত্ব দেওয়া। ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয়টা মাথায় রাখা। অন্ততপক্ষে মাসে একবার হলেও স্ত্রীকে নিয়ে বিনোদনমূলক স্থান পরিদর্শন করা।

আসুন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর জাতি উপহার দিতে আমরা একযোগে বিবাহবিচ্ছেদকে না বলি। প্রতিটি নবজাতকের বেড়ে ওঠা হোক মা-বাবাকে ঘিরে। অবহেলিত জীবন আর নয়। নিষ্পাপ শিশুকে দিই সুন্দর সকাল উপহার। যে সকালটা হবে মায়ের মুখ আর বাবার কোলে বসে। সোনার বাংলায় শিশু হাসবে তার অট্টহাসি। মায়ের কোলকে বড়ই ভালোবাসি।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা কলেজ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close