মেহেরাবুল ইসলাম
০৩ ডিসেম্বর, ২০২০
দৃষ্টিপাত
এইডস প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি

------
অসচেতনতা, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব, সুস্থ জীবনের অনুশীলন না করাটাই এ রোগের প্রধান ঝুঁকি। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু উপায়ে এইচআইভি ছড়াতে পারে। যেমন : এইচআইভি বা এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত বা রক্তজাত পদার্থ অন্য কোনো ব্যক্তির দেহে পরিসঞ্চালন করলে, আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত টুথব্রাশ, সুচ, সিরিঞ্জ, ছুরি, ব্লেড বা ডাক্তারি কাঁচি সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত না করে অন্য কোনো ব্যক্তি ব্যবহার করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির অঙ্গ অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে, এইচআইভি বা এইডস আক্রান্ত মায়ের মাধ্যমে (গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে বা সন্তানের মায়ের দুধ পানকালে), অনৈতিক ও অনিরাপদ বা কনডম ছাড়া যৌনমিলন করলে। সমকামী, বহুগামী ব্যক্তি এবং বাণিজ্যিক ও ভাসমান যৌনকর্মীর সঙ্গে অরক্ষিত যৌনমিলনের মাধ্যমে, যুবসমাজের মধ্যে নেশার আধিক্য এবং একই সিরিঞ্জের মাধ্যমে বারবার মাদকদ্রব্য গ্রহণ, এইচআইভি আক্রান্ত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিবিড় ভৌগোলিক অবস্থান, দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা এবং এভাবেই বিভিন্ন দেশে আসা-যাওয়ায় উপরোক্ত উপায়ে এইচআইভি ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। শ্রমিক অভিবাসন ও মানবপাচারের ফলে এইডস আক্রান্ত জনগণের দেশে গমনাগমন এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এইডসের ভাইরাস বহনকারী আক্রান্ত পুরুষের মাধ্যমে নিজেদের অজ্ঞতার কারণে নারীও এইচআইভি পজিটিভ হয়ে যায়। সর্বোপরি এইচআইভি সম্পর্কে সচেতনতা ও সঠিক তথ্যের অভাবে রোগটি ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে।
এইচআইভি এইডসে আক্রান্তদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণা ও বৈষম্য রয়েছে। তাদের এই কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণা ও বৈষম্য দূর করতে হবে। মানুষের ধারণা হয় আক্রান্ত মানুষের জীবনাচার ভালো নয়, ইসলামিক নয়। আর এজন্যই তিনি এইডসে আক্রান্ত হয়েছে। এ রকম ধারণা নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি চলছে। আর এটি দূর করার জন্য পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ইসলামিক প্রোগ্রামগুলোতে এইচআইভি এইডস সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে, কারণ জনসচেতনতা তৈরিতে মিডিয়ার অনেক ভূমিকা আছে। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আর কারও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে যেকোনো ইনফেকশনেই মৃত্যু হতে পারে। তাই ওষুধ দিয়ে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করা হয়। তবে সুসংবাদ এই যে, এইচআইভি ভাইরাস ছোঁয়াচে নয়। সুতরাং আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা করলে এ রোগ ছড়ায় না। বরং আমাদের উচিত আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা জানানো, যত্ন করা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা।
এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল করার লক্ষ্যে প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন কঠোরভাবে পালন করা উচিত। পারিবারিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ইতিবাচক মনোবৃত্তির পরিচর্যা, উন্নত মননশীলতা একান্তই জরুরি। যুবসমাজ এইডস প্রতিরোধে অসাধারণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা যদি অবাধ ও অনিরাপদ যৌনাচার থেকে বিরত থাকে, তাহলেই এইডস প্রতিরোধ সম্ভব। পড়ালেখার পাশাপাশি তরুণরা পল্লী এলাকার অশিক্ষিত জনগণদের এইডস প্রতিরোধে করণীয় দিক নিয়ে শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। যুবসমাজ এইডসে আক্রান্ত জনগণ ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে এইডস প্রতিরোধ-সংক্রান্ত উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। ‘সচেতন হও, এইডস থেকে বেঁচে যাও’ মূলমন্ত্র সামনে নিয়ে এ কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে। এইডসে আক্রান্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে দেশব্যাপী ছাত্রকল্যাণ তহবিল গঠন করা যেতে পারে।
এইডস প্রতিরোধ করতে দেশব্যাপী যুবসমাজ প্রতিটি জেলায় ‘এইডস প্রতিরোধে যুবসমাজ’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এইডস থেকে বেঁচে থাকার জন্য যুবসমাজসহ ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সব পর্যায়ে ব্যাপক জনসচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে মাদক ও এইডসের ভয়াবহতা এবং কুফল সম্পর্কে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর (যৌনকর্মী, হিজড়া, সমকামী, কয়েদি) মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিতে হবে ব্যাপক কর্মসূচি। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের ওপর এ হুমকি ও সংকটাবস্থার উত্তরণ ঘটানো সম্ভব বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কারণ বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রয়াসের মাধ্যমে ইতোমধ্যে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের হুমকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন করেছে। শুধু প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ এবং এর কার্যকর বাস্তবায়ন।
এইচআইভিকে প্রতিরোধ করতে হলে এইচআইভি কীভাবে ছড়ায়, কারা আক্রান্ত হয়, এইচআইভি থেকে নিজেকে কীভাবে মুক্ত রাখা যায় এ বিষয়গুলো সবাইকে জানতে হবে এবং সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। কার্যকর পদক্ষেপ ও সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই এইচআইভির সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
"