সোহেল নওরোজ
খবরগুলো ‘আলো’ হোক
জানালার ফাঁক গলে এক চিলতে মিঠে রোদ দেখতে রোজ ভোরে উদগ্রীব থাকি। এটাই যে সুন্দর সকালের স্মারক! চোখের সঙ্গে মন জুড়ানো সে আলোয় পবিত্র এক শিহরণ জাগে। একটা প্রত্যাশা ওই সদ্য প্রতিভাত আলোর মতোই চাউর হয়ে ওঠে মনের অন্দরেÑআজ দিনটা যেন ভালো যায়!
একটু ভালো খবরের জন্য নিত্যদিনের এই প্রার্থনা চলতেই থাকে। বেশির ভাগ দিনই হয়তো আশাহত হতে হয়। খারাপ খবরের খপ্পরে ভালো খবরগুলো হারিয়ে যায়। তখন আর অশ্রুতে আনন্দ খেলা করে না, মিশে থাকে কষ্ট-হাহাকার-হতাশা-ব্যথা। আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার নতুন ভোরের জন্য অপেক্ষা শুরু হয়। এ এক অদ্ভুত চক্র!
নতুন আলোতে ভালো কিছু অবলোকনের জন্য আমরা রোজ পত্রিকার পাতায় চোখ রাখি। ঠিক যেমন আস্থা আর ভালোবাসা খুঁজে পেতে প্রিয়জনের মায়াবী চোখের ভেতর দৃষ্টি পাততে হয়। সেখানেই পড়ে নেওয়া যায় ভাব-ভালোবাসার লুকানো খবর। প্রিয়জনের মতো লুকোচুরি খেলায় না গিয়ে সরল চোখে সব পড়ে নেওয়া যায় পত্রিকার পৃষ্ঠা থেকে। আমাদের প্রত্যাশাকে ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করার গুরু দায়িত্ব নিয়ে রোজ ভোরে দরজায় হাজির হওয়া কাগজগুলো এভাবে অজান্তেই কখন যেন আপন হয়ে ওঠে। তাকে ছেড়ে থাকাই যায় না। কোনো কারণে একদিন ব্যত্যয় হলেই তার তীব্র অভাব বোধ হয়। সংবাদপত্র তাই আমাদের দিনযাপনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
প্রযুক্তি সংবাদপত্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরো নিবিড় করে দিয়েছে। কাগজের ওপর ছাপার অক্ষরে দেখার আগেই মুঠোফোন কিংবা কম্পিউটারের পর্দায় পড়ে নেওয়া যায় পত্রিকার খবরগুলো। বিভূঁইয়ে থাকার দিনগুলোতেও তাই দেশটাকে চোখের সামনেই পাওয়া যায়। শতসহস্র মাইলের দূরত্বটা তখন তেমন কষ্টদায়ক হয় না। কষ্ট হয় কেবল অক্ষরগুলো বেদনার প্রতীক হয়ে উঠলে, মন্দকে জয়ী হতে দেখলে। এ খবরগুলো ধারণ করতে মানুষের মতো পত্রিকার পাতাগুলোরও নিশ্চয় কষ্ট হয়!
একেকটা বর্ষপূর্তি একেকটা সাফল্যের ইঙ্গিত বহন করে। যেনতেনভাবে চলতে থাকারা দ্রুতই ফুরিয়ে যায়। দিনশেষে যোগ্যরাই টিকে থাকে। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে এ কথা আরো বেশি সত্য। গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে এখানে টিকে থাকা অসম্ভব। প্রতিদিনের সংবাদ নিত্যদিনের হরেক রকম খবর বুকে নিয়ে আরেকটা বছর পার করায় অভিজ্ঞতা ও গ্রহণযোগ্যতায় আরেকটা পা সামনে বাড়াল এ কথা বলাই যায়। সুন্দরকে ধারণ করার আনন্দ এবং সত্যকে প্রকাশ করার প্রত্যয় নিয়ে এ পথচলা অব্যাহত থাকুক।
আমাদের চাওয়াগুলো মোটা দাগে অভিন্ন বলেই বলতে পারি, প্রত্যেকেই এমন দিনের স্বপ্ন দেখে যেদিন দুঃসংবাদে ভারী হবে না পত্রিকার পাতা। মন খারাপের অনুষঙ্গ থাকবে না কোথাও। উল্টো পত্রিকার পৃষ্ঠাগুলোই মন ভালো করে দেবে। সুন্দরের সঙ্গে সুন্দরের প্রতিযোগিতা হবে। ভোরের নিষ্কলুশ আলোর মতোই ভালো খবরগুলো আলো ছড়াবে। মন্দকে হারিয়ে দেওয়া খুশিতে আমরা হাসব, মিটিমিটি হাসবে কাগজে ছাপা হওয়া অক্ষরগুলোও।
"