আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৯ অক্টোবর, ২০১৮

ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প

নিখোঁজ ৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা

ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্প-সুনামিতে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৯৯৪ সরকারিভাবে ঘোষণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা এর তিন থেকে চারগুণ হতে পারে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ৫ হাজার মানুষের নিহতের আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। ভয়াবহ ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ১০ দিন পর এসে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়াদের মধ্যে আর কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেন না তারা। তবে কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবারের আগ পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান সমাপ্তির ঘোষণা দেবে না।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ওই ভূমিকম্প ও সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পালু, বালারোয়া ও পেতোবো এলাকা। এসব এলাকার নরম মাটি কাঁদায় পরিণত হয়। ভাসিয়ে নিয়ে যায় বাড়িঘর। আশঙ্কা করা হচ্ছে, শত শত মানুষ মাটির নিচে চাপা পড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘বালারোয়া ও পেতোবো এলাকার প্রধানদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সেখানে প্রায় ৫ হাজার মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

যদিও কর্মকর্তারা এখনও তথ্য সংগ্রহ করে এই সংখ্যা নিশ্চিতের চেষ্টা করছেন। ভূমিধ্স বা নরম কাদার নিচে যারা আটকা পড়েছেন তাদের সঠিক সংখ্যা জানা সহজ নয়।’

ঘটনার দশদিন পর ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকে পড়াদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। তবে বৃহস্পতিবারের আগে উদ্ধার অভিযান শেষ করার ঘোষণা দেবে না কর্তৃপক্ষ। তারপর নিখোঁজ থাকাদের মৃত বলে ধরে নেওয়া হবে।

বালারোয়ায় কয়েকশো পরিবার বসবাস করা একটি আবাসন এলাকা পুরো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ভূমিকম্প ও সুনামির পর মাটি কাঁদায় পরিণত হলে সেখানকার বাড়িগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। সেখানকার ধ্বংসাবশেষ ও কাঁদার নিচে কতজন চাপা পড়ে আছে তা জানা যায়নি।

ওই আবাসন এলাকার বাড়ি ছেড়ে নামাজ পড়তে বের হওয়ার সময়ই ৪০ বছর বয়সী মারুফ ভূমিকম্প শুরু বিষয়টি টের পান। স্ত্রী আর ছেলেমেয়েদের তিনি চিৎকার করে ডেকেছিলেন, ভূমিকম্প হচ্ছে, বাইরে আসো। তিনি বলেন, ‘আমরা বেরিয়ে আসার ১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই বাড়িটি টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

প্রায় একই অবস্থার বর্ণনা পাওয়া যায় পেতোবো এলাকাতেও। সেখানকার কয়েকটি গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ভূমিকম্পের আঘাতের পর সেখানকার মাটি চোরাবালির মতো হয়ে পড়ায় সেখানে অভিযান চালিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার উদ্ধারকারী সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ সাইয়াগু বলেছেন, এখন কাউকে জীবিত পাওয়া গেলে সেটা হবে আশ্চর্য ঘটনা। ইন্দোনেশিয়ার সরকার বলেছে, বৃহস্পতিবারের পর আক্রান্ত এলাকাকে গণকবর আখ্যা দিয়ে তল্লাশি অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এদিকে সুলাবেসি দ্বীপে দুই লাখ মানুষের ত্রাণ সামগ্রী প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভূমিকম্প কবলিত এসব মানুষের জন্য লাখ লাখ ডলারের ত্রাণ পাঠিয়েছে। তারপরও খাবার ও পানির ঘাটতি রয়েছে। রেড ক্রস জানিয়েছে, তারা প্রায় ১৮০০ মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে। রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় দুর্গত এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে ত্রাণ সামগ্রী ফেলা হচ্ছে।

এই সপ্তাহে কয়েকটি স্কুল খুলে দিয়ে ভূমিকম্পের পর ফিরে আসা মানুষের সংখ্যা গণনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। পালু শহরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল রশিদ বলেন, ক্লাস শুরু হয়নি। আমরা কেবল গুনে দেখছি কতজন শিক্ষার্থী নিরাপদে আছে। কিন্তু ৬৯৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সোমবার সকালে মাত্র ৫০ জনের দেখা পেয়েছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close