নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নৈশ্যপ্রহরীকে গ্যারেজে আটকে রেখে পিটিয়ে হত্যা
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় একটি গ্যারেজ থেকে অটোরিকশা চুরির ঘটনা কেন্দ্র করে সিরাজুল ইসলাম (৬৫) নামে এক নৈশ্যপ্রহরীকে তিন দিন আটকে রেখে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অটোরিকশা গ্যারেজ মালিক আক্তার হোসেন ও তার সহযোগীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নৈশ্যপ্রহরীর স্বজনরা।
গতকাল রবিবার সকালে উপজেলার জহরপুর এলাকায় অটোরিকশা গ্যারেজ থেকে সিরাজুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে কামতাল তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, আটকের বিষয়টি পুলিশকে জানালেও ঘটনাস্থল গিয়ে সিরাজুলকে উদ্ধার না করে চলে যায়। নৈশপ্রহরী সিরাজুল ইসলাম উপজেলার মুছাপুর গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি উপজেলা মুছাপুর ইউনিয়নের জহরপুর এলাকার আক্তার হোসেনের মালিকানাধীন অটোরিকশা গ্যারেজে নৈশ্যপ্রহরী হিসেবে কাজ করতেন। ওই এলাকায় গিয়ে গ্যারেজ মালিক আক্তার হোসেন ও তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর তারা গা-ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এর আগে বৃহস্পতিবার আক্তার ও তার লোকজন তাকে অটোরিকশা গ্যারেজে বেঁধে রাখে। এরপর থেকে নির্যাতন করে আসছেন বলে জানান তার স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, আটকের বিষয়টি থানায় জানানোর ঘটনাস্থল গিয়েও সিরাজুলকে উদ্ধার না করে চলে যায় পুলিশ। তারা যদি তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসত, তাহলে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে সিরাজের মৃত্যু হত না। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে পুলিশ বলছে, অভিযোগটি সত্য নয়। সিরাজুলের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার জহরপুর এলাকার আক্তার হোসেনের অটোরিকশা গ্যারেজে নৈশ্যপ্রহরী হিসেবে কাজ করতেন পাশের মুছাপুর গ্রামের বৃদ্ধ সিরাজুল। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই গ্যারেজ থেকে ৬টি অটোরিকশা নিয়ে সংঘবদ্ধ একটি চোরের দল। এ ঘটনার জেরে সিরাজকে তিন দিন ধরে গ্যারেজে আটক করে বেঁধে নির্যাতন চালায় গ্যারেজ মালিক আক্তার, তার ছেলে অর্ণপ, মহিন, রাজু ও ৬ অটোরিকশাচালক। নির্যাতনের একপর্যায়ে শনিবার রাত আড়াইটায় তার মৃত্যু হয়। এ খবর পেয়ে রবিবার সকালে কামতাল তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
সিরাজের ছেলে ইউসুফ ও মেয়ে শিল্পী জানান, চুরির ঘটনার পর গত শুক্রবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও গ্যারেজ মালিক আক্তার ও মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মঞ্জু মেম্বার বিচারের কথা বলে তাদের বাবাকে গ্যারেজে আটকে রাখেন। পরে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছেন তারা। রাত আড়াইটায় সিরাজুল তাদের সঙ্গে কথা বলবে বলে আক্তার বাড়িতে খবর পাঠায়। পরে উপস্থিত হয়ে দেখেন তাদের লাশ গ্যারেজের ভেতরে পড়ে আছে। পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার কারণে তাদের বাবাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তারা এ হত্যার বিচার চান।
দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, নৈশ্যপ্রহরী সিরাজের স্বজনদের অভিযোগ সত্য নয়। এর আগে আটকের ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগও করেননি। মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহালের সময় শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। ওসি আরো বলেন, সিরাজুল মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
"