প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
গণঅভ্যুত্থান গাথা
রেজাল্ট চাই না, আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই
শহীদ সবুজ মিয়ার মায়ের কান্না
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ সবুজ মিয়ার কলেজের স্যারদের কাছ থেকে যখন জানতে পারি আমার ছেলে সবুজ এইচএসসি পরীক্ষায় ভালোভাবেই পাস করছে। তখন আমি বলেছি, স্যার রেজাল্ট চাই না, আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। এই কথাগুলো বলেছেন শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ সবুজ মিয়ার মা সমেজা বেগম। এই পত্রহারা মা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৪ আগস্ট শেরপুর জেলা শহরের খরমপুর এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে শহীদ হন সবুজ মিয়া (১৯)। সবুজ শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের পূর্ব রূপারপাড়া গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে। তিনি চলতি বছর ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডের অধীন শ্রীবরদী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ১৫ অক্টোবর সবুজের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। সবুজ জিপিএ-৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
নিহত সবুজের বাবা আজাহার আলী পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত। কোনো কাজ করতে পারেন না। তিন সন্তানের মধ্যে সবুজই বড়। অন্য দুই ভাইবোন স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়ালেখা করে। পড়ালেখার পাশাপাশি সবুজ স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করত। ওই আয় দিয়ে কোনো রকমে পরিবার ও নিজের পড়ালেখার খরচ মেটাত। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সবুজের মৃত্যুতে পরিবারটি আর্থিকভাবে চরম সংকটে পড়েছে।
শ্রীবরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম আলিফ উল্লাহ আহসান জানান, সবুজ মিয়া অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। পরিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে রোজগার করতে হতো বিধায় এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৩৩ পেয়েছে। থানা সূত্রে জানা গেছে, সবুজ মিয়া নিহতের ঘটনায় সদর থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার বাদী সবুজের ভাই সাদ্দাম হোসেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ২৫ জন।
এসআই পুলক কুমার রায় জানান, এই মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন শেরপুর-১ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. ছানুয়ার হোসেন, শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ ডি এম শহীদুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান, আওয়ামী লীগের ২৫ নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩০০ থেকে ৪০০ জন। পুলিশ মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে।
"