যশোর প্রতিনিধি

  ২২ এপ্রিল, ২০২৪

নিয়ম ভেঙে ভৈরব নদে পাঁচ সেতু নির্মাণ

সংস্কার আন্দোলন কমিটির সংবাদ সম্মেলন কাজ বন্ধের দাবি

যশোরের ভৈরব নদে নিয়ম লঙ্ঘন করে পাঁচটি সেতুর নির্মাণকাজ অব্যাহত রয়েছে। এই নির্মাণ বন্ধসহ তিন দফা দাবিতে নির্মাণাধীন সেতুর পাদদেশে গতকাল রবিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটি।

ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আফসার আলীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন যশোরের উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু।

সংবাদ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে ভৈরবের ওপর এলজিইডির নির্মাণাধীন ৪টি সেতু (দায়তলা, ছাতিয়ানতলা, রাজারহাট, বসুন্দিয়া) এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্মাণাধীন নজরুল ইসলাম কলেজের পাশের সেতুর কাজ বন্ধের দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর ছাড়পত্র নিয়ে নৌচলাচল, নদী প্রবাহ এবং সেতুর উলম্ব ও প্রশস্ততা নিশ্চিত করা; নদীতট আইন লঙ্ঘনকারী ও প্রশ্রয়দাতা কর্তৃপক্ষের বিচার ও নদ খননে দুর্নীতির তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উজানে নদী সংযোগ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন ও ফারাক্কার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, নৌ-চলাচল ও প্রশস্ততা নিশ্চিত করে নদীর ওপর অবস্থিত সংকীর্ণ সেতু পুনর্নির্মাণ করার বিষয়টি যুক্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। এই সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করেছে এলজিইডি। বারবার বিআইডব্লিউটিএ আপত্তি করলেও তারা তা কর্ণপাত করেনি। শেষ পর্যন্ত তারা থানায় জিডি করেও এলজিইডিকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। তারা হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই দায়তলা, রাজারহাট, ছাতিয়ানতলা ও বসুন্দিয়ায় সংকীর্ণ সেতু নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে, যশোর-ঝিনাইদহ রোডে সাতমাইলে নজরুল ইসলাম কলেজের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিআইডব্লিউটিএর ছাড়পত্র ছাড়াই সেতু নির্মাণ করছে। ফলে নদী সংস্কারে সরকারের লক্ষ্য বানচাল হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশনায় যেসব নদীর কথা উল্লেখ আছে, তার মধ্যে এই নদের কথা উল্লেখ নেই। এজন্য অনুমোদন নেওয়া হয়নি। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএর নিয়ম মেনেই এসব সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।

তবে সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করা হয়, নীতিবহির্ভূত এসব সেতু নির্মাণে সরকার ঘোষিত নীতিমালা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কার্যকর ব্যবস্থা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর ওপর এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না। জেলা প্রশাসককে বারবার তাগিদ ও অনুরোধ করা সত্ত্বেও জেলা নদী রক্ষা কমিশনের সভাপতি ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে এই জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতায় ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

নেতারা উল্লেখ করেন, এ কারণে আমরা অবিলম্বে ওই তিন দফা বাস্তবায়নের দাবি তুলে ধরেছি। এই দাবিতে আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে ২৫ মে পর্যন্ত মাসব্যাপী নদী অববাহিকায় (নওয়াপাড়া, বসুন্দিয়া, ছাতিয়ানতলা, রূপদিয়া, দায়তলা, রাজারহাট, যশোর, চুড়ামনকাঠি, চৌগাছা, তাহেরপুর, মহেশপুর, খালিশপুর, জীবননগর ও দর্শনায় বিক্ষোভ সমাবেশ এবং এলজিইডি কার্যালয়, যশোর অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপরও দাবি মানা না হলে ২৬ মে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। নদী ধ্বংসের কার্যকলাপ বন্ধ না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য কর্তৃপক্ষই দায়ী থাকবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন যশোরের অন্যতম নেতা তসলিমণ্ডউর-রহমান, নাজিমউদ্দিন, মিজানুর রহমান (বসুন্দিয়া), নাসির উদ্দিন শেফার্ড, সুজন দত্ত লাণ্টু, মাস্টার অনিল বিশ্বাস (ভবদহ আন্দোলনের নেতা), সুখদেব মজুমদার (নীমতলী), আসাদুজ্জামান পিল্টু, পলাশ বিশ্বাস প্রমুখ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক আফসার আলী ও ইকবাল কবির জাহিদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close