নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

সংবাদ সম্মেলনে দাবি

ইউনূসের প্রতিষ্ঠান মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত

গ্রামীণ ব্যাংক কোনো ব্যক্তির না। এটার মালিক বলতে যা বোঝায় তা হলো ক্ষুদ্র গ্রাহকরা। সব কার্যক্রম পরিচালনা হয় তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। এ প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় সব দেখভাল করে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি। সম্প্রতি পর্ষদ সভার সিদ্ধান্তে গ্রামীণ ব্যাংকের সাতটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছি। যা ড. ইউনূস তার প্রতিষ্ঠান হিসাবে জবরদখলের অভিযোগ করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে। যদিও এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ড. ইউনূস দাবি করা অবৈধ। আর ড. ইউনূস দাবি করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ পাচার হয়েছে। যার কাগজপত্র ও প্রমাণাদি হাতে রয়েছে। তবে আরো উপযুক্ত প্রমাণের জন্য বাড়তি তদন্ত করা হচ্ছে। সামনে বিশেষ নিরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা হবে। এরপর জনসম্মুখে তুলে দরা হবে এই পাচারের তথ্য।

রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল শনিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ। মূলত গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মূলত ড. ইউনূস আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করেছে গ্রামীণ ব্যাংক এমন অভিযোগের জবাব দিতেই অনেকটা পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এ কে এম সাইফুল মজিদ বলেন, ‘ড. ইউনূস আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করলেও প্রকৃত সংখ্যা সাতটি। তা হলো গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ মৎস্য ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ উদ্যোগ, গ্রামীণ সামগ্রী ও গ্রামীণ শক্তি। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক মূলত গ্রামীণ ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন সাপেক্ষে সরকারের প্রচলিত আইন অনুযায়ী করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় এসব করা হয়েছে। এর মারিক গ্রামীণ ব্যাংকের ১ কোটি ৫ লাখ গ্রাহক। আর ড. ইউনূস একটি টাকাও দেননি। তার কোনো কাগজপত্র নেই। আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করেছি। কোথাও ড ইউনূসের মালিকানার কথা উল্লেখ নেই। দেরিতে হলেও এসব প্রতিষ্ঠানে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোনো জবরদখল করা হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু প্রমাণ ও কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। তা উদ্ধারের চেষ্টা চলমান রয়েছে। প্রয়োজনে ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে তথ্য-প্রমাণ উদ্ধার করা হবে।’

তিনি দাবি করে বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস মানি লন্ডারিং করেছেন- এমন প্রমাণ হাতে রয়েছে। গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ ফান্ড এসব প্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা সরিয়েছেন। গত সাত মাস নিরীক্ষা (অডিট) করে তারা এসব তথ্য পেয়েছেন। ড. ইউনূস ব্যবসার মুনাফা দিয়ে গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণসহ অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান করেননি। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। গ্রামীণ ব্যাংক ড. ইউনূসের কোনো প্রতিষ্ঠান জবরদখল করেনি। সবকিছু আইন মেনে করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ড. ইউনূসের নয়; বরং গ্রামীণ ব্যাংকের।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কত টাকা ও কীভাবে পাচার হয়েছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি জবাব দিতে পারেননি। তবে দাবি করেন যে অর্থ মানিলন্ডারিং হয়েছে। তার প্রমাণ রয়েছে। অধিকতর খোঁজখবর নিয়ে নিরীক্ষা করা হবে। এই মুহূর্তে বলা সম্ভব না। দেরিতে হলেও গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য চেষ্টা করছি।

চেয়ারম্যান হিসেবে আপনি দায় নিবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল মজিদ বলেন, এখানে আমি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান দখল না করে কেবল নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান লাভজনক নয়। লক্ষ্য কল্যাণকর। সরকার বা গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমতি না নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা দাবি করাটা ড ইউনূসের জন্য বেমানান। কেননা, তিনি তো কোন শেয়ার কিনেননি। তাহরে মালিক হওয়ার সুযোগ নেই। গ্রামীণ টেলিকম কেনা অর্থ গ্রামীণ ফোনের নামে বরাদ্দ। এর লভ্যাংশ পাবেন গ্রাহকরা। সেটা আজ দেরিতে হলেও পরিষ্কার করছি।

সাইফুল মজিদ বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪২তম সভায় কোম্পানি আইন মেনে ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ কল্যাণ গঠিত হয়। আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ৪৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংক গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিতে পারবে। গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৪৪৭ কোটি টাকা নিয়েছেন। গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েও ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২৪ কোটি টাকা অনুদান নিয়েছেন। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকম এ পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংককে সুদ ও লভ্যাংশ বাবদ কোনো টাকা দেয়নি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংকের ১৫৫তম বোর্ড সভায় সাতটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও নির্দিষ্টসংখ্যক পরিচালক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ গ্রামীণ ব্যাংকের সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন মেনে করা হয়েছে। এখানে কোনো বেআইনি বা নিয়মবহির্ভূত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মোহাম্মদ, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ জুবায়েদ, আইন উপদেষ্টা মাসুদ আক্তারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

গ্রামীণ টেলিকমসহ এই ৭ প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গ্রামীণ টেলিকমের মোট সম্পতির মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর গ্রামীণ কল্যাণের প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। সবকটি প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক সম্পদর মূল্য প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই টাকা হাতিয়ে নিতে গ্রামীণ ব্যাংকের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে জবরদখল করে তালা দেওয়া হয়েছে। যেকোনো সময় হাতছাড়া হতে পারে। এই অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ নেই। এর পেছনে বিশেষ গোষ্ঠী জড়িত।

উল্লেখ্য, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক সম্মেলনে দাবি করেন যে, তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের মতো গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণসহ আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করা হয়েছে। ঢাকার মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডে ‘টেলিকম ভবন’ নামে ১৩ তলা একটি ভবনে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close