মো. শাহ আলম, খুলনা

  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

খুলনায় অনিরাপদ ইজিবাইক

ইজিবাইকে কর্মসংস্থান হয়েছে খুলনার হাজারো যুবকের। সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যের যোগাযোগের বাহনটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় বহু বেকার যুবক একে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। কিন্তু সম্প্রতি একের পর এক ইজিবাইক ছিনতাই ও এর চালক খুনের ঘটনায় অনিরাপদ হয়ে উঠেছে এই পেশার লোকজন। ভুক্তভোগীদের কর্মসংস্থান পরিণত হচ্ছে তাদের পরিবারের কান্নায়, বাড়ছে স্বজনদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনায় এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক চালক। যাত্রীবেশে বিভিন্ন ছল-চাতুরির আশ্রয় নেয় দুর্বৃত্তরা। কিছু খাইয়ে বা স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে, আবার সরাসরি আক্রমণের মাধ্যমে অথবা রিজার্ভ টিপ নিয়ে নির্জন স্থানে গিয়ে ছিনিয়ে নিচ্ছে ইজিবাইক। বাধা দিলেই প্রাণনাশ করে লাশ গুম করার ঘটনা ঘটে।

গত ৫ জানুয়ারি চালক আবুল কালাম আজাদের ইজিবাইক রূপসা ঘাট থেকে রিজার্ভ ভাড়া করে একটি দুর্বৃত্ত চক্র আটরা-আফিল গেট এলাকায় নিয়ে যায়। পথে মশিয়ালি নামক স্থানে ইজিবাইক থামায় এবং চালককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে অন্ধকারে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর গত ৮ জানুয়ারি নিহত আজাদের স্ত্রী রানী বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। গত ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত বছরের ২৬ আগস্ট খালিশপুর ভাড়া বাসা থেকে ইজিবাইক নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হন মোরেলগঞ্জের বর্শিবাওয়া গ্রামের সেলিম হাওলাদারের ছেলে শাওন হাওলাদার ওরফে বাবু। পরের দিন ২৭ আগস্ট তার লাশ বটিয়াঘাটার ডেউয়াতলা কাজীবাছা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২৮ আগস্ট নিহতের বাবা সেলিম হাওলাদার থানায় মামলা করেন। ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় মোসলেম গাজী ও লবণচরা রূপসা ব্রিজ এলাকা থেকে আনিছুর রহমান ও নতুন বাজার থেকে রুহুল আমিনকে আটক করা হলেও আসামিরা এখনো অধরা রয়েছে।

এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় হরিণটানা থানা পুলিশের একটি টিম ইসলাম নগর রোডে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় খাজা হলের সামনে থেকে শরণখোলা গ্রামের মধ্য নলবুনিয়া এলাকার শাহ আলম হাওলাদারের ছেলে মো. রনি আমিন হাওলাদার ওরফে বায়জিদকে একটি চোরাই ইজিবাইকসহ গ্রেপ্তার করেন।

২০ আগস্ট রাত ১০টায় খুলনা ডায়াবেটিস হাসপাতাল রোড এলাকায় ইজিবাইক চালক রাসেল হোসেনকে রক্তাক্ত জখম ও মারধর করে তার ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এ সময় রাসেলের ডাক-চিৎকারে লোকজন ছুটে আসেন। তারা ধাওয়া দিয়ে বয়রা ক্লিনিকের সামনে থেকে শিববাড়ী টাইগার গার্ডেন এলাকার পাভেল সরদার ও শেখপাড়া বাগানবাড়ী এলাকার মো. নাঈমুরকে ইজিবাইকসহ আটক করে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশে সোপর্দ করে।

১৭ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় দৌলতপুর থানাধীন ডিসি রোডের ইস্পাহানী প্রেস হাউস পাট কোম্পানির সামনে চালক ইকবাল হোসেন টিপুকে গ্যারেজে নিয়ে শিকল দিয়ে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করেন মালিক দৌলতপুর হেলালের কলোনির মৃত কেয়ামত আলী হাওলাদারের ছেলে কামাল হাওলাদার।

তার আগে ৩ এপ্রিল বিকেলে নগরীর লবণচরা থানার ডেসটিনির পরিত্যক্ত মাঠ থেকে সাতক্ষীরা তালার তেতুলিয়া গ্রামের আজিজুলের ছেলে ইজিবাইক চালক মো. রাফি ইসলামের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার ইজিবাইক ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর পার্টস খুলে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে দেয়। সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের পর রাফি হত্যার জট খোলে।

এরপর ৩ জুলাই ইজিবাইক চালক মিরাজ কাজীকে দৌলতপুর স্টেশন রোড হেলাল জুট মিলের ভেতরে নিয়ে ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ভৈরব নদীতে ফেলে দেয়। এরপর ৫ জুলাই খালিশপুর নদীবন্দর ৭নং ঘাট সংলগ্ন ভৈরব নদীর কিনারা থেকে মিরাজের লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। পরে এ হত্যায় জড়িতরা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। তবে ইজিবাইকটির সন্ধান এখনো মেলেনি।

একের পর এক খুনের ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ইজিবাইক চালকরা ও তাদের পরিবার। কিস্তিতে কিংবা টাকা ধার করে ইজিবাইক কিনে আবার কেউ কেউ ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে পরিবারগুলো।

খালিশপুরে বসবাসরত ইজিবাইক চালক মো. হাসান জানান, কিছু দিন আগে আমার এক বন্ধুর ইজিবাইক ছিনতাই হয়। পরে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মালিককে টাকা বুঝিয়ে দিতে হয়।

ইজিবাইক চালক জসিম জানান, ইজিবাইক চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমরা শঙ্কায় আছি। আরেকজন চালক আবদুর রহমান জানান, দুর্বৃত্তরা ইজিবাইক ছিনতাই করে যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে দেয়।

এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক পিপিএম, বিপিএম (বার) বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে টহল জোরদার করা, ইজিবাইক চালক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা এবং যেসব পয়েন্টে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় সেসব পয়েন্টে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশের অবস্থান নিশ্চিদ্র করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close