আল-আমিন মিয়া, নরসিংদী

  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

পুরোনো ব্রহ্মপুত্র ভরাট করে কোম্পানির রাস্তা

নরসিংদীর পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ভরাট করে নিজস্ব রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এতে সরকারের পুনঃখননের পরও নদে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ওই এলাকার সরকারি সড়কে বেড়া দিয়ে বন্ধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে অনেকটা ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।

জেলার সদর উপজেলার শেখেরচর এলাকায় অবস্থিত পাকিজা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান পাকিজা কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় ভবন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম পাশে এবং কারখানা নদের পূর্ব পাশে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ তৈরি করতে প্রায় ৯০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি নদ-নদী পুনঃখনন করেছে পাউবো। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল নরসিংদীর আড়িয়াল খাঁ, হাড়িদোয়া, পাহাড়িয়া ও মেঘনা নদী এবং ব্রহ্মপুত্র ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র শাখা নদ পুনঃখনন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। ২০২৩ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।

এদিকে ওই প্রকল্পের অধীনে ভরাট হয়ে যাওয়া নদ-নদী পুনরুদ্ধার করে সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, বন্যায় ভাঙন থেকে তীর রক্ষা, নদীপথের নাব্যতা ফিরিয়ে নৌ-চলাচল, পানির গুণগতমান উন্নয়ন, পানিসম্পদ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষাসহ পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদর উপজেলার শেখেরচর এলাকায় অবস্থিত পাকিজা কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের কার্যালয় ভবন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম পাশে এবং কারখানা নদের পূর্ব পাশে। পরবর্তী সময়ে কার্যালয় ও কারখানায় যাতায়াতের জন নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি নদ পুনঃখননের সময় কারখানা কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সেতু রেখে দেওয়া হয়েছে। তবে খনন শেষ হওয়ার পর নিজেদের গাড়ি চলাচলের জন্য সেতুর কাছেই অবৈধভাবে নদে মাটি ভরাট করে সড়ক নির্মাণ করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য খালে দুটি কংক্রিটের তৈরি পাইপ দিয়ে পানি প্রবাহের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য নদের পাশের পাকা সড়কটি টিনের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে স্থানীয়রা বাধা দিলেও কোনো কর্ণপাত করেনি তারা। স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ মিয়া বলেন, ‘পাকিজা গ্রুপ নদটি দখল করতে করতে নালায় পরিণত করেছিল। পুনঃখননের ফলে পানি প্রবাহের সামান্য আশা সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু খনন শেষ হওয়ার পরই নদে মাটি ভরাট করে পাকিজা গ্রুপ। পরে পানি প্রবাহের জন্য সরু দুটি পাইপ বসিয়ে তাদের কারখানার গাড়ি চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করে। তারা এতটাই প্রভাবশালী যে, স্থানীয়রা বাধা দিলেও তা কানে তুলেনি।’

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে পাকিজা কটন স্পেনিং মিল লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) মো. মোসতাব আলী মুন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে পারি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কথা বলতে পারবেন।’ জানতে চাইলে নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবুল মুনসুর মোল্লা বলেন, ‘নদের ওপরে সেতু নির্মাণ করেছেন, এটা অবগত আছি। তবে বালু দিয়ে ভরাট করে রাস্তা বানিয়েছে, এমন তথ্য নেই। নদের জায়গা দখল করে থাকলে আমরাছ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।’ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। নরসিংদী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে প্রকল্প এলাকার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close