নাজমুল সাঈদ সোহেল, চকরিয়া (কক্সবাজার)

  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ধানের জমিতে তামাক খেত পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে ঝুঁকি

কক্সবাজারে চকরিয়ায় বোরো মৌসুমে মাঠের পর মাঠজুড়ে যেখানে দেখা যেত সবুজ ধানখেত, এসব ফসলের খেত এখন উচ্চফলনশীল তামাকের দখলে। উপজেলার অন্তত সাতটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমিতে চাষ হচ্ছে পরিবেশ বিনষ্টকারী তামাক। শুধু ফসলি জমিই নয়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সংরক্ষিত বনভূমির খাসজমি ও মাতামুহুরী নদীর দুই তীরে এখন তামাকের আগ্রাসন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তামাকের চাষাবাদে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়, পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন হয়, আর তৈরি হয় স্বাস্থ্যের ঝুঁকি। তাৎক্ষণিক অধিক লাভের আশায় তামাক চাষ করলেও এর পরিণতিতে কী হবে সে সম্পর্কে চাষিরা অবহিত নয়। কোনো নীতিমালা না থাকায় তামাক চাষ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। বেশি লাভের জন্য বনভূমি উজার করে কৃষিজমি প্রস্তুত করে সেখানে তামাক চাষ হচ্ছে। এতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর বিরূপ প্রভাব তৈরি করছে।

জানা গেছে, তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করার কোনো নীতিমালা নেই। তবে তামাক চাষে ঋণ প্রদান বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন, ভর্তুকি মূল্যের সার ব্যবহার বন্ধে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কিছু ক্ষুদ্র প্রয়াস রয়েছে। কিন্তু এর দুর্বল তদারকি এবং বহুজাতিক তামাক কোম্পানির লোভনীয় প্রস্তাবে তামাক চাষ বন্ধে এসব প্রয়াস কোনো প্রভাব ফেলছে না। তামাক চাষ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন দরকার বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।

জানা যায়, ১৯৮৪ সাল থেকে ব্রিটিশ আমেরিকা ট্যোবাকো, জাপান ট্যোবাকো, আকিজ ট্যোবাকো, ঢাকা ট্যোবাকো, আবুল খায়ের ও আলফা ট্যোবাকোসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি ওই এলাকায় তামাক চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছে। এসব কোম্পানি তামাক আবাদে দাদন হিসেবে চাষিদের আগাম টাকা দিয়ে থাকে আর তামাক পোড়ানোর সরঞ্জামও সরবরাহ করে। তামাক চাষে বোরো ও রবিশস্য উৎপাদনে ভাটা পড়ে।

তামাক চাষ বন্ধে যারা প্রচারণা চালান তারা বলছেন, তামাক চাষে কমছে আবাদি জমি। এভাবে চলতে থাকলে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দেবে। এ জন্য তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনকে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী, লক্ষ্যারচর, ফাঁসিয়াখালী ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নে ফসলি জমিতে তামাক আবাদ হচ্ছে। এছাড়া বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর ও কাকারা ইউনিয়নের বন বিভাগের জমিতে এবং মাতামুহুরী নদী তীরে জেগে উঠা চরের জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে।

চকরিয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি এমআর মাহমুদ বলেন, তামাক চাষের এলাকায়, বনাঞ্চলের আশপাশে এবং লোকালয়ে তৈরি হওয়া শত শত চুল্লিতে তামাক পোড়ানো হয়। এসব চুল্লির জ্বালানির জন্য বনাঞ্চল থেকে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। এতে উজার হচ্ছে বনজসম্পদ, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় এখন ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হচ্ছে।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ‘তামাক চাষ কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। চাষিরা বেশির ভাগ গরিব। তামাক কোম্পানির দাদনদের কাছে তারা জিম্মি। এতে তারা তামাক চাষ করে লাভবানও হচ্ছে না। তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসন, এনজিও ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সামাজিক আন্দোলন আরো জোরদার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে এনজিও ইপসা চকরিয়া প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ইবরাহিম শাকিল বলেন, আইন অমান্য করে চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে তামাক চাষ চলছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে তামাক চাষির পরিসংখ্যান নিয়ে লুকোচুরি চলছে। চাষিরা আটকে যাচ্ছেন তামাক কোম্পানিগুলোর বিপণন কৌশল ও নগদ প্রলোভনে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম নাসিম হোসেন বলেন, ‘তামাক চাষের কুফল সম্পর্কে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ১০৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়নি। সরকারিভাবে তামাক চাষ বন্ধে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। চাষিদের সচেতনা বাড়াতে নানা কর্মসূচি পালন করছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close