কনক দেব, শিবগঞ্জ (বগুড়া)

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

শত বাধা পেরিয়ে মিহির বিসিএস ক্যাডার

যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, তাহলে কোনো বাধাই সফলতার পথ আটকাতে পারে না। সেটাই প্রমাণ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী এম এ মোত্তালিব মিহির। সদ্য ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।

বগুড়া শিবগঞ্জের বড়তেলঘড়িয়া গ্রামে জন্ম এম এ মোত্তালিব মিহিরের। বাবা মাহবুল ইসলাম বর্গাচাষি। মা গৃহিণী। ছোটবেলা থেকে মিহির থাকতেন চাচার বাসায়। সেখান থেকেই এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। পরিবার থেকে পড়াশোনার খরচ দেওয়া সম্ভব হতো না। কলেজে পড়ার সময় মিহিরকে কাজ খুঁজতে হয়। একটি স্থানীয় কোম্পানিতে খণ্ডকালীন কাজও করেন।

মিহিরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১২ সালে এইচএসসির পর ঢাকায় আসেন তিনি। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেয়ে পেটের ভাত জোগাড় করা জরুরি হয়ে পড়ে। নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি নেন ইউরোভিজিল সিকিউরিটি কোম্পানিতে। বেতন ৪ হাজার ২০০ টাকা। একেক সময় একেক কোম্পানিতে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন মিহির। ব্যাংকের এটিএম বুথেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

মিহির বলেন, ‘বেসরকারি কোম্পানিতে সিকিউরিটিম্যানের চাকরি করতাম। ডিউটি ছিল ১৬ ঘণ্টা। জীবনের কঠিন সময় তখনই কেটেছে। তখন বসে থেকে সময় কাটত না, তাই মাঝে মাঝে বই পড়তাম। এক দিন ছুটি নিয়ে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করি। সে ঢাকায় এসেছে কোচিং করে অ্যাডমিশন দেবে। তার কাছেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সম্পর্কে জানি। পড়াশোনার উদ্দীপনা আবারও জাগে। সিকিউরিটি চাকরির বেতন থেকে কিছু টাকা জমিয়ে ভর্তি হয়ে যাই একটি কোচিংয়ে। অবশেষে চান্স পাই ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ভর্তি হই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।’

রাতে ডিউটি দিয়ে দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস করতেন। কর্মস্থলে রাতের খাবার পেতেন। কিছুটা খেয়ে বাকি ভাতটুকু পানি দিয়ে রেখে দিতেন। সকালে সেটা খেয়ে ছুটতেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোনো কোনো দিন সকাল ১০টায় ক্লাস শেষ হয়ে যেত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ৫টায়। দুপুর ২টা থেকে তার ডিউটি। তিনি বলেন, বাসভাড়া বাঁচানোর জন্য সদরঘাট থেকে হেঁটেই কর্মস্থল কলাবাগানে চলে আসতাম।

২০১৫ সাল পর্যন্ত নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি করেছেন মিহির। পরে টিউশনি করেছেন। ঢাকার একটি কোচিং সেন্টারে ক্লাসও নিয়েছেন। সিজিপিএ ৩.৪৩ পেয়ে স্নাতক এবং ৩.৭১ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। পরে শুরু করেন বিসিএসের প্রস্তুতি। মিহির সাধারণ জ্ঞান জগতের বিশ্বস্ত বই প্রকাশনী মিহির’স রিসার্চ ও পাবলিকেশনের প্রতিষ্ঠাতা। লিখেছেন মিহির’স জিকে। যা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পাঠকদের মন জয় করতে পেরেছে। মিহিরের মা-বাবা বিসিএস কী জিনিস, সেটা বোঝেন না। তবে সরকারি চাকরির অনেক সম্মান, সেটা জানেন। মিহির বলেন, মা-বাবা খুব খুশি। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন এসে তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ভবিষ্যতে অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়াব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close