রয়টার্স

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের ৩ বছর

প্রথমবার কোণঠাসা জান্তা প্রধান

মিয়ানমারের একটি ক্যান্টনমেন্ট শহরে গত মধ্য জানুয়ারিতে ছোট একটি জটলার সামনে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন কট্টর জান্তাপন্থি ভিক্ষু পাউক কোতাও। তিনি সেখানে বলেন, দেশটির জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং পদত্যাগ করবেন এবং তার উপপ্রধান দেশের শাসনভার গ্রহণ করবেন। তার এই কথায় উপস্থিত জনতা সম্মতি জানিয়ে হাততালি দিয়ে ওঠে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিয়ানমারের এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।

দেশটিতে সর্বশেষ সামরিক অভ্যুত্থান তৃতীয় বছরে পড়তে চলেছে। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চির দলকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে মিন অং হ্লাইং নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী।

যে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দেশটিতে গণবিক্ষোভ গড়ে উঠেছিল এবং জান্তা বাহিনীর দমনপীড়নে বহু বিক্ষোভকারী নিহত হয়। সু চির দলের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে আন্তর্জাতিক চাপও ছিল। কিন্তু সব চাপ উপেক্ষা করে দেশ শাসন করে যাচ্ছেন জান্তা প্রধান মিং অং হ্লাইং। কিন্তু গত কয়েক মাসে জান্তা শাসনবিরোধী মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সামরিক বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে দেশটির বেশ কয়েকটি এলাকার দখল নিয়েছে।

বিদ্রোহীদের জোটবদ্ধ সমন্বিত আক্রমণ কিছুতেই প্রতিহত করতে পারছে না মিয়ামনারের সামরিক বাহিনী। বরং একটু একটু করে এলাকা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। গত বছর অক্টোবর থেকে বিদ্রোহী জোট এই আক্রমণ শুরু করেছে। তারা এর নাম দিয়েছে ‘অপারেশন ১০২৭’।

এ পরিস্থিতিতে জান্তা শাসনপন্থিরাই হ্লাইংয়ের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনলাইনে জান্তাপন্থি সাংবাদিক এবং ব্লগাররাও ওপরের ভিক্ষুর মতো একই কথা বলছেন। এমনই একজন জান্তাপন্থি ইউটিউবার কো মাআং মাআং বলেন, ‘তার সেনাবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা উচিত।’ অথচ মাত্র কয়েক মাস আগেই জান্তা বাহিনীর নেতা এবং সেনাবাহিনীর প্রধান হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে জনসম্মুখে এ ধরনের কথা বলার সাহস কেউ দেখাত না।

মিয়ানমার পিচ মনিটরের তথ্যানুযায়ী, জান্তা বাহিনী গত অক্টোবরের পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৫টি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। যদিও বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির ফলে চীন সীমান্তের কাছে লড়াই থেমেছে। তবে দেশের অন্যান্য অংশে সংঘর্ষ চলছে। জান্তা বাহিনী তাদের হারের বিষয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য দিচ্ছে না। তবে এর আগ তারা স্বীকার করেছে, তারা দেশটির কয়েকটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একজন কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘সেখানে সামরিক বাহিনী গভীর হতাশার মধ্যে রয়েছে। যে হতাশা ব্যক্তিগতভাবে মিন অং হ্লাইংয়ের ভেতরও ছড়িয়েছে। কেউ কেউ তাই নিশ্চয়ই তার সরে যাওয়া দেখলে খুশি হবে।’

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে নতুন করে সেনা নিয়োগেও বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে তাদের বাধ্য হয়ে, নন-কমব্যাট সেনাসদস্যদেরও যুদ্ধের ময়দানে পাঠাতে হচ্ছে। এসব কিছুই মিন অং হ্লাইংয়ের জন্য বড় ধাক্কার কারণ হচ্ছে বলেও মনে করেন ওই কূটনীতিক। এ বিষয়ে জানতে রয়টার্স থেকে মিয়ানমার জান্তা সরকারের একজন মুখপাত্রকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি জান্তার পতনের কারণ নাও হতে পারে তবে জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংকে সরিয়ে তার জায়গায় কে স্থলাভিক্ত হবেন, এমনকি তার বর্তমান ডেপুটি সো ইউন হবেন কি না তাও নিশ্চিত নয়। যাই হোক না কেন এসব ঘটনা মিন অং হ্লাইং এবং সেদেশের সেনাবাহিনী উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে জাতিসংঘের।

এ ব্যাপারে ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমারবিষয়ক জ্যৈষ্ঠ উপদেষ্টা রিচার্ড হোর্সেই বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের দ্বারা জান্তাবাহিনীর দুর্বল অবস্থানকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। যা জনসম্মুখে জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং নেতৃত্বকে ব্যাপক সমালোচনা মুখে ফেলেছে। রয়টার্সের পর্যালোচনায় সম্প্রতি নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জান্তা নেতৃত্ব এবং এর সমর্থক সাংবাদিকরা কঠোর প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। মিয়ানমারে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্কট মার্সিয়েল বলেছেন, জোটবদ্ধ বিদ্রোহীদের চাপে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে গেছে, নেতৃত্বও দুর্বল হয়ে গেছে। হাতছাড়া হয়েছে দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা অনেকগুলো শহর।

অভ্যুত্থানের পর সামারিক জান্তা ঘোষণা করেছিল, ২০২৩ সালের আগস্টে তারা নির্বাচন দেবে। কিন্তু জন অসন্তোষ বাড়তে থাকে। সেনাবাহিনী তা সহিংস পথে দমনের চেষ্টা করে। আর দেশব্যাপী সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটায়। সেখানে দশক পুরাতন নানা সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী যোগ দেয়।

দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমারের সেনাশাসনে সেদেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে গেছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন রয়টার্সের স্টাফ রিপোর্টার দেবজট ঘোষাল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close