সিরাজগঞ্জের তাড়াশে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে তাড়াশ পৌরসভার বারোয়ারী বটতলা মহল্লার তিনতলা ভবনের দোতলার ফ্ল্যাট থেকে স্বামী, স্ত্রী ও মেয়ের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার রাত থেকে সোমবার দিনের কোনো একসময় দুর্বৃত্তরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। হত্যার পর দুর্বৃত্তরা ফ্ল্যাটের দরজায় তালা দিয়ে পালিয়ে যায়।

নিহতরা হলেন তাড়াশ পৌর এলাকার বটতলা মহল্লার কালিচরণ সরকারের ছোট ছেলে বিকাশ সরকার (৪৫), তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৪০) ও তাদের মেয়ে তাড়াশ পারমিতা সরকার তুষি (১৫)। তুষি স্থানীয় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

তাড়াশ থানার ওসি (তদন্ত) মো. নূরে আলম বলেন, স্বজনরা দুদিন ধরে বিকাশদের খোঁজ করছিলেন। মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন পান তারা। সোমবার রাত পর্যন্ত ফোন কল রিসিভ না হওয়ায় আত্মীয়স্বজন তার পৌর সদরের বারোয়ারী বটতলা তিনতলা ভবনের বিকাশ সরকারের ফ্ল্যাটে যান। সেখানে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্বজনরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় থানা-পুলিশকে খবর দেয়। সোমবার রাত ৪টার দিকে পুলিশ তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে মেঝেতে ও বিছানায় তিনজনের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শনিবার রাতে বিকাশ সরকারকে বাজারে দেখা গেছে।

ওসি (তদন্ত) মো. নূরে আলম আরো বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), ডিবি, র‌্যাব ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (পিবিআই) পুলিশের একাধিক টিম ঘটনা অনুসন্ধানে কাজ করছেন।’ অন্যদিকে নিহতদের মরদেহ সুরতহাল রিপোর্ট করে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি দ্রুত হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনসহ খুনিদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন।

এদিকে সকালে একই পরিবারের ৩ জনের হত্যাকাণ্ডের খবর জানাজানি হলে নিহতের স্বজন ও এলাকার উৎসুক জনতা ওই বাসার এলাকায় ভিড় জমান। স্থানীয়রা জানান, তাড়াশ পৌর এলাকার শোলাপাড়া মহল্লার মৃত কালিচরণ সরকারের দুই ছেলে। বড় ছেলে প্রকাশ সরকার। তিনি একসময়ে ঠিকাদারি করতেন। পাশাপাশি বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আর ছোট ছেলে বিকাশ সরকার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তাড়াশ উপজেলা শাাখার কোষাধ্যক্ষ ও তাড়াশ গোপাল জিউ বিগ্রহেরও কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তারা দুই ভাই প্রায় দুই যুগ যাবৎ তাড়াশ পৌর সদরের বারোয়ারী বটতলার বাসার তৃতীয়তলার আলাদা দুটি ফ্ল্যাটের বসবাস করতেন। সেই সঙ্গে বাসার প্রথম ও দোতলার তিনটি ফ্ল্যাটে আরো তিনজন ভাড়াটিয়া বসবাস করেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, একসময় বিকাশ ওষুধের ব্যবসা করলেও বর্তমানে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া প্রায় ৭০-৮০ বিঘার পুকুর ও ফসলি জমি ভাগাভাগি করে ভোগ দখল করে আসছেন। তবে ছোট ভাই ও বড় ভাইয়ের মধ্যে তেমন বনিবনা ছিল না। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহতের বড় ভাই প্রকাশ সরকার, ছেলে অঙ্কন সরকার ও ভাগনে রাজীব ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিকেলে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মাহবুবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

"