মো. সৈকত সোবহান, বদলগাছী (নওগাঁ)

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪

যোগাযোগ

আধুনিক সড়কে বদলাবে বিহার

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো স্বীকৃত দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঐতিহাসিক নিদর্শন নওগাঁর বদলগাছীর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার। শত বছরের ঐতিহাসিক এই নিদর্শন দর্শনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আসতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ সরু রাস্তা দিয়ে। এছাড়া মোড় ঘুরতে গিয়ে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এই অবস্থায় বিহারটিকে পর্যটকবান্ধব ও আধুনিক করতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে নওগাঁ সড়ক বিভাগ। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পর্যটকের সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি চাঙা হবে স্থানীয় অর্থনীতিও।

ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফজলুল করিম আরজু বলেন, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় বিহার পাহাড়পুর। আর এর আদি নাম সোমপুর বিহার। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি মূলত পাল রাজ্যত্বের রাজধানী। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। তাতে ভিক্ষুরা পড়ালেখা করতেন। সারা বছর দেশ-বিদেশ থেকে দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে এখানে। কিন্তু প্রধান সড়ক থেকে বৌদ্ধবিহারে আসতে আধুনিক সড়ক না থাকায় প্রতিনিয়তই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পর্যটকদের। প্রধান সড়ক থেকে পুরোনো একটি সরু আড়াই কিলোমিটারের যে রাস্তা রয়েছে সেই রাস্তার ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি বাঁকের কারণে বিভিন্ন উৎসবে যানজটের সৃষ্টি হলে যানবাহন অনেক দূরে রেখে পর্যটকদের হেঁটে আসতে হয় পাহাড়পুরে। এছাড়া মোড় ঘুরতে গিয়েও দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই পর্যটন খাতকে আরো এগিয়ে নিতে যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়নের বিকল্প নেই।

ফজলুল করিম আরজু জানান, প্রয়োজনের তাগিদ থেকেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ও নওগাঁ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল হকের একান্ত প্রচেষ্টায় নির্মাণ হতে যাচ্ছে একটি আধুনিকমানের সংযোগ সড়ক। এই সড়কটি নির্মিত হলে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারটি আরো বিকশিত হবে। দ্বিগুণ সংখ্যক পর্যটকদের আগমন ঘটবে এই বৌদ্ধ বিহারে আর সরকারের খাতায় যুক্ত হবে অধিক পরিমাণ রাজস্ব এবং নতুন করে চাঙা হয়ে উঠবে স্থানীয় অর্থনীতি।

নওগাঁ সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নূরে আলম সিদ্দিক বলেন, নওগাঁ-জয়পুরহাট মহাসড়ক থেকে বৌদ্ধ বিহারে আসার জন্য আধুনিক সড়ক নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নতুন সড়কটি প্রধান সড়ক থেকে বৌদ্ধ বিহারের পশ্চিমণ্ডউত্তর দিকে যুক্ত হবে। এই সড়কের মাধ্যমে পর্যটকরা বৌদ্ধ বিহারের শতাধিক বছরের আগের প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করে দর্শন করবেন বিহার। নতুন সড়কের সংযোগস্থলে থাকবে পর্যাপ্ত গাড়ি পাকিংয়ের সুব্যবস্থা, কাফেটোরিয়া, পর্যটকদের চলাচলের জন্য ফুটপাত, মার্কেট, চালকদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা, ভিআইপিদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থাসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সব কিছুই। এরই মধ্যে সড়ক নির্মাণের দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

নওগাঁ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক বলেন, এমন ঐতিহাসিক নিদর্শন স্থানে যেতে মরণফাঁদের মতো একটি রাস্তা পার হতে হয় সেটি আমার জানা ছিল না। প্রথম বৌদ্ধ বিহার দর্শন করতে গিয়ে বিষয়টি আমার নজরে আসে। তখনই আমি বৌদ্ধ বিহারে আসার জন্য একটি আধুনিক সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিই। এরপর বিহারের সহকারী পরিচালকের সহযোগিতা নিয়ে এরই মধ্যে প্রায় ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সড়ক নির্মাণের সব প্রক্রিয়া শেষ করেছি। সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের আবেদন জেলা প্রশাসন বরাবর দিয়েছি। যত দ্রুত জমি পাব, তত দ্রুত সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করব। আমি আশাবাদী সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের মধ্যেই আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে পারব ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুরকে।

জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বলেন, পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে হলে আধুনিক ও টেকসই যোগাযোগব্যবস্থার বিকল্প নেই। আমরা যদি দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক স্থানগুলো আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে পারি তাহলে সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতটি দেশের জন্য সোনার খনির উৎসের মতো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। আমি আশাবাদী দ্রুত সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে সড়ক বিভাগকে হস্তান্তর করতে পারব। এ কাজে সড়ক বিভাগকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close