কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪

স্বপ্নপূরণ

নিজের শিক্ষাস্বপ্ন স্ত্রীকে পড়িয়ে পূরণ

বিমল বলেন, ‘আমি উচ্চশিক্ষা অর্জন না করতে পারলেও, সেই ইচ্ছা স্ত্রীর মাধ্যমে পূরণ করেছি। এখন স্ত্রীর একটি চাকরির সুযোগ হলে দুজনে মিলে ভালোভাবে সংসার চালাব ও সন্তানকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেব।’

বিমল শব্দকর (৩০) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের দরিদ্র রিকশাচালক। কৃষক পুলীন শব্দকরের দুই ছেলের মধ্যে বিমল দ্বিতীয়। তার বড় ভাইও রিকশাচালক। টাকার অভাবে ২০০৭ সালে এসএসসির ফরম পূরণ করতে পারেননি বিমল। তারপর তিনি কুমিল্লায় প্রাণ আরএফএল কোম্পানির নিরাপত্তাকর্মীর চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৭ সালে জেলার কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের আশ্রয় গ্রামে সমিতা শব্দকরকে বিয়ে করেন। তাদের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে।

লেখাপড়া জানা সমিতাকে বিয়ে করায় নিজের উচ্চশিক্ষার আগ্রহ পূরণ করতে চান বিমল শব্দকর। স্বল্প বেতনে সংসার ও স্ত্রীর লেখাপড়ার খরচ চালাতে না পারায় নিরাপত্তাকর্মীর কাজ ছেড়ে গ্রামে ফিরে আবারও রিকশা চালানো শুরু করেন বিমল। রিকশা চালিয়ে আয় করা টাকা দিয়ে পরিবারের খরচ চালিয়ে বাড়তি আয় দিয়ে স্ত্রীর লেখাপড়া চালিয়ে যান বিমল। বিয়ের পর স্ত্রী সমিতা শব্দকরকে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে অর্থনীতি (অনার্স) বিষয়ে ভর্তি করান। বিমল শব্দকর বলেন, স্ত্রীর অর্থনীতি (অনার্স) ফাইনাল পরীক্ষার সময় তার বাচ্চার বয়স চার মাস। এ সময় ছেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে বাবা হিসেবে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে সার্বক্ষণিক ছেলের পাশে ছিলেন বিমল। পরীক্ষার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত হাসপাতালে ছেলের পাশে ছিলেন। যাতে স্ত্রীর পরীক্ষায় কোনো ব্যাঘাত হয়। এভাবে তিনি স্ত্রীকে সম্মান চূড়ান্ত পরীক্ষার সুযোগ করে দিয়েছেন। স্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালোভাবে অর্থনীতিতে সম্মান পাস করেছেন। এখন আশায় রয়েছেন একটি চাকরির।’

বিমল বলেন, ‘আমি পড়ালেখায় ভালো ছিলাম কিন্তু আর্থিক সমস্যায় আর পড়া হয়নি। পড়ালেখা করার জন্য এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারিনি টাকার অভাবে। এখন স্ত্রীর একটি চাকরির সুযোগ হলে দুজনে মিলে ভালোভাবে সংসার চালাবেন ও সন্তানকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেবেন।’ নিজে উচ্চশিক্ষা অর্জন না করতে পারলেও তার নিজের ইচ্ছা স্ত্রীর মাধ্যমে পূরণ করেছেন বিমল, তার এই মানবিক উদ্যোগ এলাকায় প্রশংসিত হয়েছে।

স্ত্রী সমিতা শব্দকর বলেন, ‘অর্থনীতিতে সম্মান পাস করার পর, কম্পিউটার সাক্ষরতা কর্মসূচির কোর্স সফলভাবে শেষ করেছি। তবে কোনো চাকরির সুযোগ হয়নি। সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরির পরীক্ষা দিলেও কোনো চাকরির সুযোগ হয়নি। তার এখন সরকারি বা বেসরকারি একটি চাকরি প্রয়োজন। তিনি বলেন, এত কষ্ট করে আমার স্বামী আমায় পড়াশোনা করিয়েছেন, যদি একটা চাকরি পাই, সেটা আমার স্বামীর কষ্ট ত্যাগের প্রাপ্তি ও পুরস্কার হিসেবে দেখব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close