লিটন ঘোষ জয়, মাগুরা

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪

বিস্ময়

দৃষ্টিহীন নিখিল ‘জীবন্ত ঘড়ি’

‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে। অন্তরে আজ দেখব যখন আলোক নাহি রে।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার মতোই বুকের ভেতরের গহীন দৃষ্টি দিয়েই যেন সবকিছু দেখতে পান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নিখিল বিশ্বাস। যিনি ‘নিখিল দা’ হিসেবেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। দিনের যেকোনো প্রহরে ঠিক সময় বলতে পারেন। এই অসাধারণ ক্ষমতার কারণে মাগুরার মানুষ তার নাম দিয়েছে ‘জীবন্ত ঘড়ি’। এ ছাড়া তার রয়েছে আরেকটি পরিচিতি। তা হচ্ছে, মান্না দের জনপ্রিয় বাংলা গান হুবহু পরিবেশনের কারণে। শহরের বিভিন্ন টি-স্টল আড্ডাখানায় যে কারণে তাকে প্রায়ই দেখা যায় এ ধরনের গানের আসর বসাতে। তার কণ্ঠে যখন অবিকল একই সুরে ‘তুমি অনেক যত্ন করে আমায় দুঃখ দিতে চেয়েছো/দিতে পারনি/কী তার জবার দেবে/যদি বলি আমিই কি হেরেছি/তুমিও কি একটুও হারোনি’ কিংবা ‘ললিতা গো/ওকে আজ চলে যেতে বল না/ও ঘাটে জল আনিতে যাব না যাব না।’ এ ধরনের অসংখ্য জনপ্রিয় গানে শ্রোতারা মুগ্ধ।

এই দুই কারণে মাগুরা শহরে নিখিল বিশ্বাসের রয়েছে অসংখ্য ভক্ত-শুভানুধ্যায়ী। যেকোনো সময় তার কাছ থেকে শখ কিংবা খেয়ালের বশে একটু সময় জেনে নেওয়া কিংবা পুরোনো দিনের গান শোনা তাদের কাছে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে। তাকে দেখলেই সময় জানতে চান না, এমন মানুষ খুবই কম। সেই সঙ্গে গান শোনার বিষয়টি তো রয়েছেই। অন্যদিকে তার কাছ থেকে পাওয়া এই বিনোদনের বিনিময়ে সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা তুলে দিতে কার্পণ্য করেন না কেউই। মানুষের সহায়তা নিয়ে নিখিল পার করে দিয়েছেন তার জীবনের ৬৫টি বছর।

নিখিল বিশ্বাসের বাড়ি সদর উপজেলার টেংগাখালী গ্রামে। মাত্র তিন বছর বয়সে গুঁটি বসন্ত রোগে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান। ছেলেবেলায়ই মাকে হারানোয় সৎমায়ের সংসারে অনাদর-অবহেলায় মানুষ হতে হয়েছে তাকে। এরপর যুবক বয়সেই অন্ধত্বকে পুঁজি করে মানুষের সাহায্যের প্রত্যাশায় বেরিয়ে পড়তে হয়েছে শহরের পথে।

নিখিল বিশ্বাস বলেন, ভিক্ষাবৃত্তির প্রয়োজনে বাড়ি থেকে সকালে বেরিয়ে আবার সন্ধ্যার আগেই ফিরে যাওয়ার তাগিদ থাকে। এ কারণে প্রায়ই মানুষের কাছে সময় জিজ্ঞেস করতে হতো। এই সময় জেনে নেওয়ার অভ্যাসটাই একসময় তার ভেতরে অন্যরকম ক্ষমতা এনে দেয়। যে কারণে এখন জিজ্ঞাসা না করেই আন্দাজ করে নিজেই বলে দিতে পারেন ঠিক সময়।

১৮ বছর বয়সে তার সময় বলে দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর থেকে তাকে দেখলেই মানুষ সময় জানতে চান। ও নিখিল দা... কয়টা বাজে? সঙ্গে সঙ্গে তার সঠিকভাবে সময় বলে দেওয়ার ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হন সবাই। নিখিল বিশ্বাস আরো বলেন, ছেলেবেলা থেকেই মান্না দের গান তার খুব ভালো লাগে। এ কারণে গান শুনতে শুনতে সেগুলো পুরোপুরি মুখস্থ হয়ে গেছে। এখন গানই তার জীবনের একমাত্র সঙ্গী। তাই তো পথে পথে তিনি গেয়ে বেড়ান- ‘আমি তার ঠিকানা রাখিনি/ছবিও আঁকিনি/কোথা সে জানি না/মন তবু তারই কথা বলে/তারই সাথে পথ চলে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close