নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ জানুয়ারি, ২০২৪

বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন

নিখোঁজদের খোঁজে মর্গে ঘুরছেন স্বজনরা

ঢাকার গোপীবাগে গত শুক্রবার রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার একদিন পর গতকাল শনিবারও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ট্রেনে থাকা রাজবাড়ীর চন্দ্রিমা চৌধুরীকে। বেনাপোল এক্সপ্রেসে ছিলেন তিনি। ট্রেনে আগুন লাগার আধ ঘণ্টা আগেও তার সঙ্গে কথা হয় পরিবারের। ট্রেনে আগুন লাগার পর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ।

চন্দ্রিমার চাচাতো ভাই অনিন্দ প্রামাণিক বলেন, আমার বোন শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার পর রাজবাড়ী থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় আসছিল। ট্রেনে থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয় পরিবারের। মাওয়া পার হওয়ার পর, ট্রেনে আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগেও চন্দ্রিমার সঙ্গে পরিবারের কথা হয়। ট্রেনে আগুন লাগার পর থেকে তার ফোন বন্ধ পাচ্ছি। অনিন্দ বলেন, শুক্রবার রাত থেকে ঢাকা মেডিকেল, মুগদা মেডিকেল, মিটফোর্ড, আনোয়ারা, ইসলামিয়া, গোপীবাগ সব হাসপাতালে খোঁজ নিছি, কিন্তু বোনকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। ঢাকা মেডিকেলের মর্গে খোঁজ নিলাম, এখানে (শেখ হাসিনা) নিলাম। মর্গে খুঁজতেছি। কোনো জায়গায় পাচ্ছি না।

এলিনা ইয়াসমিন। এলিনা ফরিদপুর রাজবাড়ী থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। তার সঙ্গে সন্তানরাসহ পরিবারের আরো দুই সদস্য ছিল। এলিনার সন্তান সৈয়দ আফরান হোসেন বর্তমানে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালে ভাগ্নেকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে বোনকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন ভাই পাপুল।

পাপুল বলেন, আমার দুই বোন বাচ্চাদের নিয়ে ফরিদপুর সদর থেকে ঢাকায় আসছিল। তারা শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় পর ট্রেনে উঠে। দুলাভাই তাদের আনতে স্টেশনে যায় রাতে। এর মধ্যে এই ঘটনা ঘটে গেছে। ট্রেনে আমার দুই বোন ও তাদের বাচ্চাসহ ছয়জন ছিল। তাদের মধ্যে আমার এক ভাগ্নে হাসপাতালে ভর্তি। অন্য চারজনও আছে। কিন্তু আমার বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এলিনা ইয়াসমিনের ভাই পাপুল জানান, কোনো হাসপাতাল আমার বোনের সন্ধান দিতে পারছে না। ঢাকা মেডিকেল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট, মুগদা মেডিকেলে গেছি; কোথাও বোনকে পাচ্ছি না। বার্নে ভর্তি ভাগ্নের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে মামা পাপুল জানান, ডাক্তার বলেছে বড় কোনো সমস্যা নাই। শ্বাসনালির সমস্যার কারণে পর্যবেক্ষণে রাখছে। ভাগ্নে যখন মাকে চাইবে, তাকে কি বলে সান্ত¡না দেব।

পাপুলের দেওয়া তথ্য মতে, এলিনা ইয়াসমিন (৪০) ঢাকার মিরপুরে থাকেন। শীতে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে বেড়াতে যান। এলিনা তিন সন্তানের মা। এলিনার ভাই ছাড়াও শেখ হাসিনা বার্নে সকাল ৯টা থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫টা) আগুন লাগা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকা স্বজনদের খুঁজে না পাওয়া তিন পরিবারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদককের।

ওই ট্রেনে থাকা নাশাতা জেসমিনকে খুঁজে পাচ্ছে না তার পরিবার। নাতাশার ভাই খুরশিদ জানান, আমার বোন বন্ধুদের সঙ্গে ফরিদপুর গিয়েছিল। ঢাকার আসার জন্য ভাঙ্গা থেকে ট্রেনে উঠে। তার সঙ্গে আরো দুজন ছিল। বোনের সঙ্গে যে দুজন ছিল তারা আগুন লাগার পর ট্রেন থেকে বের হয়েছে। কিন্তু আমার বোনটা পারেনি। তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। মর্গেও খুঁজলাম কিন্তু পাচ্ছি না। বেনাপোল থেকে যাত্রী নিয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেস কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছানোর আগে রাত ৯টার দিকে ট্রেনের চারটি কোচে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিখোঁজ ছেলের খোঁজে এসেছেন বাবা আবদুল হক। তিনি জানান, ফরিদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ট্রেনে উঠেন আবু তালহা। রাতে ট্রেনে আগুন দেওয়ার পর তার মোবাইল বন্ধ। আবদুল হক বলেন, ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়েছি কিন্তু সেখানে যায়নি। মুগদা শেখ হাসিনা এবং ঢাকা মেডিকেলের মর্গে খুঁজেও ছেলেকে পাচ্ছি না।

গোপীবাগে ট্রেনে আগুন লেগে আহত আটজন বর্তমানে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্নে ভর্তি রয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, তাদের কেউই ঝুঁকিমুক্ত নয়। তাদের শরীরের বাইরের অংশ দগ্ধ না হলেও ভেতরের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে এবং এসব রোগী ট্রমার মধ্যে আছে। ট্রমা থেকে বের হতে তাদের অনেক সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল। গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয়ে দুর্বৃত্তরা। আগুনে ট্রেনের তিনটি কোচ পুরোপুরি পুড়ে যায়। পরে একটি কোচ থেকে মা ও শিশুসহ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close