প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৬ অক্টোবর, ২০২২

শরতের পাখি বন খঞ্জন

রাজধানীর ঋতুহীন জীবনে শরৎ আসে কাশফুলের শুভ্রতা নিয়ে, আসে পাখির ডানায় ভর করে। শরতের এই ক্ষণিকের অতিথিটির নাম বন খঞ্জন; ইংরেজি নাম ‘ফরেস্ট ওয়াগটেইল’ একে একবার দেখলে কারো চিনতে কখনো ভুল হবে না। বিশ্বের সব খঞ্জন থেকে বন খঞ্জন আলাদা। সব খঞ্জনের একরঙা সাদামাটা দেহ; বন খঞ্জনের দেহে চমৎকার কালো ডোরা।

এরা লম্বায় ১৬-১৮ সেন্টিমিটার। ঘাড়ের দুপাশ জলপাই রঙা। বুক ও পেট সাদা। তার ওপর চওড়া কালো দুটি দাগ। ডানার প্রান্তের পালক ময়লা হলুদ। লেজ পাটকিলে কালো। তবে লেজের দুপাশের পালক সাদা। শরীরের তুলনায় লেজটা বড়। চোখ দুটো বেশ মায়াবি। চোখের ওপরে সাদা বাঁকানো টান। পা হালকা গোলাপি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে প্রায় একই রকম। সব ধরনের খঞ্জনই দেখতে সুন্দর। সে তুলনায় বন খঞ্জন একটু নিষ্প্রভ। তবে চেহারাটা মায়াবি।

বন খঞ্জন হিংসুটে কিংবা ঝগড়াটে নয়। বিচরণ করে একাকি। এরা পরিযায়ী পাখি। শীত শুরু হওয়ার আগেই উপমহাদেশে চলে আসে। থেকে যায় গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। অন্যসব খঞ্জন সাধারণত মাঠ-প্রান্তরে বিচরণ করলেও এরা বনে জঙ্গলে বেশি বিচরণ করে। তুলনামূলকভাবে ফাঁকা জঙ্গল এদের পছন্দ।

সাধারণত আমাদের দেশে প্রায় আট প্রজাতির খঞ্জন দেখা যায়। বন খঞ্জন, সাদা খঞ্জন, বড় পাকড়া খঞ্জন, পাকড়া খঞ্জন, ধূসর খঞ্জন, হলুদ খঞ্জন, হলদে মাথা খঞ্জন, কালো মাথা খঞ্জন। বড় পাকড়া খঞ্জন ছাড়া অন্যরা পরিযায়ী হয়ে আসে। কয়েক প্রজাতি এ দেশে ডিম বাচ্চাও ফোটায়। সব ধরনের খঞ্জনই চঞ্চল প্রকৃতির। স্থিরতা এদের মাঝে নেই বললেই চলে। নাচের ভঙ্গিতে লেজ দোলাতে থাকে সর্বক্ষণ। অবশ্য কোমরের গড়ন ভিন্নতার কারণে কোমরটা সারাক্ষণ কাঁপতে থাকে। ফলে মনে হয় এরা বুঝি সারা দিন নেচে বেড়ায়। প্রকৃতপক্ষে তা নয়।

সব ধরনের খঞ্জনের প্রিয় খাবার পোকামাকড়। বন খঞ্জনরাও তদ্রƒপ বনপ্রান্তরে ঘুরে ঘুরে পোকামাকড় খেয়ে থাকে। প্রজনন সময় মে-জুলাই। বাসা বাঁধে ঘাসবনে অথবা গাছের গোড়ার খোঁদলে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, নরম লতাপতা। বাসার আকৃতি লম্বাটে। ডিমের সংখ্যা ২-৫টি। ডিম ফুটতে সময় নেয় ১৭-১৯ দিন।

শরতের প্রচ্ছন্ন প্রভাতে নার্সারির স্যাঁতসেঁতে মাটিতে কোমর দুলিয়ে হেঁটে বেড়ায় বিরল এই পাখি। কখনো জোড়া বেঁধে আসে, কখনো সঙ্গীহীন। নার্সারির সোঁদা-মাটিতেই সম্ভবত তৈরি হয় এদের প্রাতরাশ। পরিযায়নের দীর্ঘ পথে তাই এখানেই এরা যাত্রাবিরতি করে। মাত্র দুই সপ্তাহ থাকে বাংলাদেশে। তারপর উড়াল দেয় দক্ষিণ-পানে। চলে যায় থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া অথবা শ্রীলংকা। সে দেশের শিশির-সিক্ত বনই এ পাখির হেমন্ত ও শীতের আশ্রয়। সেখানে শীতের প্রভাতেও সোঁদা-মাটিতে প্রস্তুত থাকে এদের প্রাতরাশ।

সব খঞ্জনই মাঠের পাখি; বন খঞ্জন বনের পাখি। ভয় পেলে সব খঞ্জন উড়ে গিয়ে মাটিতেই বসে; বন খঞ্জন গাছে পালায়। সব খঞ্জনই লেজ নাচায় ওপর-নিচে; বন খঞ্জন লেজ দোলায় ডানে-বাঁয়ে। বন খঞ্জন শুধু লেজ নয়, কোমরও দোলায়। কেন দোলায় তা কেউ জানে না। বিজ্ঞানীদের কাছে বন খঞ্জন এক বিস্ময়। বন খঞ্জন কিছুটা খঞ্জনের মতো, কিছুটা তুলিকার মতো। বিজ্ঞানীদের মাঝে বন খঞ্জন নিয়ে মেলা তর্ক আছে। খঞ্জন পরিবারের সদস্য বলে গণ্য হলেও অনেকে মনে করেন বন খঞ্জন একাই একটি পরিবার। শরৎ মানে বাংলাদেশের সোঁদা-মাটিতে কোমর দুলিয়ে কয়েকটি সকাল কাটানো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close