
প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
২৬ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
ঔষধি গুণের কালো মুরগি

------
বাংলাদেশে কালো মুরগি : কাদাকনাথ মুরগি প্রথম বাংলাদেশে আসে ২০১৬ সালে। নরসিংদী জেলার কামরুল ইসলাম মাসুদ সে বছর কাজের সূত্রে ভারতে গিয়ে কালো মুরগি খেয়ে চমৎকৃত হন। এরপর তিনি দেশে নিয়ে এসে উৎপাদন শুরু করেন।
বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘মাংসের স্বাদ দেশি মুরগির চেয়ে সুস্বাদু। যখন এর গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পারি তখনই আমি দেশে এর উৎপাদনের কথা ভাবি।’ শুরুতে ৩০০ মোরগ ও মুরগি নিয়ে এসেছিলেন কামরুল ইসলাম মাসুদ। এখন তার খামারে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার কালো মুরগির বাচ্চা ফোটে। সাধারণত এই মুরগি বা মোরগের ওজন দুই থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এই মুহূর্তে নরসিংদী ছাড়াও রাজশাহীর বাগমারায় বড় আকারে কালো মুরগির বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠেছে।
কামরুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে একজোড়া কালো মুরগি বা মোরগের দাম ৪ হাজার টাকা। কিন্তু ২০১৬ সালে একজোড়া মুরগি ও মোরগের দাম ছিল ১০ হাজার টাকা।
একটি পূর্ণ বয়স্ক মুরগির দাম আড়াই হাজার টাকা এবং মোরগের দাম দেড় হাজার টাকা। বছরে ১২০ থেকে ১৫০টি ডিম পাড়ে একেকটি মুরগি। তবে এই মুরগি ডিমে তা দেয় না। বাচ্চা ফোটাতে দেশি মুরগির নিচে তা দেওয়া হয়, কিংবা ইনকিউবেটরে কৃত্রিমভাবে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটানো হয়।
এক মাস বয়সের বাচ্চা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং দুই বয়সের মাস বয়সের বাচ্চা ১ হাজার ২০০ টাকা দামে বাজারে বিক্রি হয়। কামরুল ইসলাম বলেছেন, খাওয়ার জন্য মানুষ মোরগ বেশি কেনে।
কিন্তু তিনি বলেছেন, ‘এখনো শৌখিন হিসেবেই মানুষ খায়, এই মুরগি। কিন্তু দেশের ৬৪ জেলাতেই আমার কাছ থেকে বাচ্চা নিয়ে গেছে মানুষ, তারাও পালন করছেন, কেউ খায় কেউ আবার নতুন করে উৎপাদন করে।’
কালো মুরগির পুষ্টিগুণ : কালো মুরগি নানা ধরনের রোগ সারায় বলে মনে করেন অনেকে। এই কারণে মানুষ এই মুরগি কিনছেন বলে জানিয়েছেন কামরুল। ঔষধি গুণাগুণের জন্য এই মুরগির কদর অনেক বাংলাদেশে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাকসুদা বেগম বলেছেন, দেশি মুরগির চেয়ে এই মুরগির মাংসের স্বাদ বেশি। কালো মুরগির মাংসে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আয়রন রয়েছে। এছাড়া সাধারণ মুরগির তুলনায় এই মুরগির মাংসে কোলেস্টরেলের মাত্রাও অনেক কম থাকে। এই মুরগি রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এই মুরগির মাংসে ফ্যাটি অ্যাসিড উপাদান অনেক বেশি থাকে। কিন্তু প্রোটিনের মাত্রা অন্য সব মুরগির মাংস থেকে কয়েক গুণ বেশি।
জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা কতটা : শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাকসুদা বেগম বলেছেন, এর সম্ভাবনা প্রচুর, যদিও এই মুরগির সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা খুব ধীরে বাড়ছে।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, একটি মুরগি ডিম পাড়ার উপযোগী হতে ছয় মাসের মতো সময় লাগে, এ সময় পর্যন্ত খামারিকে এটি পালন করতে হয়, যেখানে অন্য ব্রয়লার বা সোনালি মুরগি হলে কয়েকবার ডিম দিত সেখানে এটির প্রজনন ক্ষমতা সীমিত।
তবে কাদাকনাথ মুরগির উৎপাদন ব্যয় কম এবং এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। যে কারণে খামারিরা এই মুরগির বাণিজ্যিক উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন।
এখন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং কৃষি বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের গবেষণা করছেন, যাতে দেশি কোনো জাতের মুরগির সঙ্গে এর কৃত্রিম প্রজনন ঘটানো যায় কিনা, যাতে এর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে। বিবিসি।
"