নিজস্ব প্রতিবেদক
সৌদিফেরত তিন নারী
না খাইয়ে রেখে কাজ করতে বাধ্য করা হতো
সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় নারীদের। সেখান থেকে পছন্দের গৃহকর্মী বেছে নেন সৌদি আরবের নাগরিকরা। বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চেহারা ও শারীরিক গঠন প্রাধান্য দেওয়া হয়। কিন্তু কাজে গেলেই কপালে জোটে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। না খাইয়ে রেখে কাজ করতে বাধ্য করা হয় দিনের পর দিন। এমন দুর্বিষহ যন্ত্রণার বর্ণনা দিলেন সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরা তিন নারী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সৌদি আরব থেকে দেশের মাটিতে ফিরে আসেন তারা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেই ছুটে আসেন সংবাদকর্মীদের কাছে।
ইফতারের পর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এসে সাংবাদিকদের জানান, তাদের ভয়ংকর দিনগুলোর কথা। জীবন ও জীবিকার তাগিদে সুদূর প্রবাসে গিয়ে নারীরা নানা সন্দেহ সংশয়ের মধ্যেও যখন একটু একটু করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন, ঠিক তখনই শুরু হয় ছন্দপতন।
ফিরে আসা এক নারী জানান, তাদেরকে সৌদি আরবের দাম্মামের একটি জায়গায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। মনে হয় এ যেন নারীর হাট! সৌদি আরবের লোকজন এসে নানাভাবে তাদের পছন্দ করেন। পছন্দ হলে চুমু খান। এরপর সঙ্গে করে নিয়ে যান। কিন্তু তিনি যে বাড়িতে কাজ পান সেখানে গিয়েই নানামুখী জটিলতায় পড়েন। ভাষা না জানাটা এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা।
নারী জানান, ওই বাড়িতে তাকে ঠিকমতো খেতে দিত না। প্রতিদিন মারধর করত। বাড়ি থেকে বের হয়ে ক্যাম্প অফিসে যেতে চাইলে শুরু হত অমানুষিক নির্যাতন। একদিন বাড়ির লোকজন তিন তলার সিঁড়ির ওপর থেকে তাকে লাথি মারেন। লাথি খেয়ে তিনি গড়াতে গড়াতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে পড়ে যান। একপর্যায়ে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যান ক্যাম্প অফিসে। কিন্তু সেখানে জনসন ও সাজিদ তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন ওই বাড়িতে কাজে ফেরত যেতে।
এরই মধ্যে কাজ থেকে পালিয়ে আসেন সাতক্ষীরা ও গাইবান্ধা জেলার দুই নারী। তারা যেতে রাজি না হওয়ায় ক্যাম্প অফিসেই তাদের মারধর করা হয়। এদের মধ্যে একজন খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দালাল মনিরের মাধ্যমে ও আরেকজন গাইবান্ধার দালাল তারেকের মাধ্যমে আল মনসুর ট্রাভেলস এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।
নওগাঁর বাড়িতে ওই নারীর দেড় বছর বয়েসী একটি ছেলে আছে। স্বামীর সঙ্গে তার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। সাতক্ষীরার আরেক নারীর বাড়িতে সাড়ে পাঁচ বছর বয়েসী একটি ছেলে ও ১১ বছর বয়েসী একটি মেয়ে আছে। তারও স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক নেই। আর গাইবান্ধার ওই নারী তার পরিবার সম্পর্কে কিছু জানাতে রাজি হননি।
"