নোয়াখালীতে আওয়ামীলীগ নেতাকে বাঁচাতে বিএনপি নেতা মরিয়া; বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল
বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতন, জায়গা দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে একাধিকবার অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া আওয়ামীলীগ নেতা হাফিজকে বাঁচাতে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দিদার হোসেন দিদারের একটি বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ওই বক্তব্যে দিদার হোসেন প্রকাশ্যে স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত দেওটি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজকে সমর্থনের ঘোষণা দেন। তার এই বক্তব্যে জেলাজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সোনাইমুড়ী উপজেলার নান্দিয়াপাড়া চৌরাস্তায় একটি সভায় বক্তব্য রাখছেন বিএনপি নেতা দিদার হোসেন। এ সময় উপস্থিত তার অনুগত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে দিদার হোসেন বলেন, মাইকে আমার এসব বলা ঠিক হচ্ছে না, তবুও তোমরা শুনো আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরে আমি ওনার (হাফিজ) থেকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা পেয়েছি। এখন সময় এসেছে আমার, উনাকে সহযোগিতা করার। কেউ যেন হাফিজের কোনো ক্ষতি না করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাফিজ উপজেলার দেওটি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামীলীগ আমলে বিএনপি নেতা-কর্মীসহ স্থানীয়দের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে নান্দিয়াপাড়া চৌরাস্তায় হাফিজের অত্যাচারে গত ১৬ বছর একসাথে দুইজন বিএনপি কর্মী চলতে পারেনি। সে সবসময় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করতো। এমনকি দুইবার অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শুরহলী গ্রামের পারভেজ নামে এক বিএনপি কর্মীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে বেদম মারধর করেন আওয়ামীলীগ নেতা হাফিজ। এতে গুরুতর আহত হয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতেও হয়। আরেক বিএনপি কর্মী আমেরিকা প্রবাসী জিয়াউল হকের নান্দিয়াপাড়া চৌরাস্তার জায়গা-জমি শেখ হাসিনার শাসনামলে দখল করে আওয়ামী লীগের অফিস তৈরি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই জায়গাটি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে দখল করে রাখে হাফিজ। এদিকে, দিদার হোসেনের ওই বক্তব্য স্থানীয় রাজনীতিতে এক ভয়াবহ সংকেত হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ দিদার হোসেন নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দিচ্ছেন। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় এক বিএনপি কর্মী বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আওয়ামীলীগের মতো স্থানীয় বিএনপিও বিপদে পড়তে পারে।
ভাইরাল ভিডিওটি নিজের বলে স্বীকার করে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দিদার হোসেন দিদার বলেন, ওই রাতে ১২টায় আমরা দলীয় অফিস উদ্বোধনকালে একটি সভা করি। সেখান থেকে হাফিজের বাড়ি ৩০০ গজের মধ্যে, আমার উপস্থিতিতে কেউ যাতে তার বাড়িতে হামলা না করে, তাই ওই বক্তব্য দিয়েছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি কে কল দিলে তিনি এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। অপরদিকে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের নজরে এসেছে। বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম এর নির্দেশে আমরা সরেজমিনে বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছি এবং তাকে ইতিমধ্যে শোকজ করা হয়েছে। আজকে (১৭ সেপ্টেম্বর) দিনের মধ্যে তাকে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক বলেন, দিদার যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে রয়েছে সে হিসেবে তাকে সব কাজ ও কথাবার্তায় আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো।
এর আগেও জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা অমান্য করে স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহন করে ভোট করার কারনে অনেককে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিলো। কিন্তু দিদার দলের সেই নির্দেশ অমান্য করে র্বিাচনে অংশগ্রহন করার পরও তাকে সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বানানো হয়েছে জেলা বিএনপির কোন এক অদৃশ্য শক্তির মধ্যেমে! এমন প্রশ্নের জবাবে এ্যাডভোকেট আবদুর রহমান বলেন, এটিও তার ঠিক হয়নি। এর জন্য সেই সময় দিদার কে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছিলো। তিনি বলেন, দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করে যারাই কোন অনিয়ম-অন্যায় কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে আমিও যদি দলের বাহিরে গিয়ে কোন অনিয়ম করি সেটার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
তবে নোয়খালী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অভিযুক্ত দিদার হোসেন দিদারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও তার বিরুদ্ধে দল কোন ব্যবস্থা নেবে! নাকি কোন অদৃশ্য শক্তির জোরে বেঁচে যাবে সেটাই এখন তৃনমুল বিএনপি নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দিদার হোসেন দিদার চেয়ারম্যান পদে লড়তে এবং তার দল ভারি করার জন্য আওয়ামীলীগের লোকজনকে কাজে লাগাতেই মূলত বর্তমানে আওয়ামীলীগকে বাঁচানোর জন্য এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন।