ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের দশম আসরের গ্র্যান্ড ফাইনালে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করতে বদ্ধপরিকর ফরচুন বরিশাল। তবে এখন দেখার বিষয় কুমিল্লার পঞ্চম শিরোপা নাকি বরিশালে প্রথম? আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস ও গাজী টেলিভিশন।

পঞ্চমবারের মতো বিপিএলের ফাইনাল খেলবে কুমিল্লা। এর আগে চারটি ফাইনালে খেলে সবই জিতেছে তারা। এমন দুর্দান্ত রেকর্ড ফাইনালের আগে কুমিল্লাকে মানসিকভাবে চাঙা রাখবে। দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্সকে ৬ উইকেটে হারানোর পেছনে বড় অবদান রাখেন বরিশালের সিনিয়র ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। তার দায়িত্বশীল ইনিংস ফাইনালে তুলে বরিশালকে।

ফাইনালে কুমিল্লাকে হারানোর ব্যাপারে আশাবাদী বরিশাল শিবির। মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘আমি কখনো বিপিএল ট্রফি জিততে পারিনি। যে কারণেই আমি এটি স্পর্শ করতে উদগ্রীব হয়ে আছি। আসলে ট্রফি জয়ের ইচ্ছা সবারই থাকে। আমরা এতদূর এসেছি, অবশ্যই জয়ের জন্য চেষ্টা করব। হ্যাঁ, কুমিল্লা কখনোই ফাইনালে হারের স্বাদ পায়নি, কিন্তু কে জানে এবারই হয়তো প্রথম ফাইনাল হারবে তারা।’

তৃতীয় আসর থেকে বিপিএলে নিয়মিত খেলছে কুমিল্লা। নিজেদের প্রথম আসরেই মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে শিরোপা জিতেছিল কুমিল্লা। পরের দুই আসরে বাজে পারফরম্যান্স করে কুমিল্লা। কিন্তু ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে আবারও ট্রফি জয়ের স্বাদ পায় দলটি। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি’ আসরে অংশ নেয়নি কুমিল্লা (করোনার কারণে ২০২০, ২০২১ বিপিএল অনুষ্ঠিত হয়নি)। কিন্তু আবার বিপিএল শুরু হওয়ার পর সর্বশেষ দুই আসরের শিরোপা জিতে হ্যাটট্রিক ট্রফি জয়ের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে কুমিল্লা। গত দুই মৌসুমে কায়েসের নেতৃত্বে শিরোপা জিতেছিল তারা। এবার কুমিল্লাকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন লিটন দাস। অধিনায়ক পরিবর্তন হলেও কুমিল্লার পারফরম্যান্সে আগের মতোই ধারালো আছে।

এদিকে তিনবার টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেললেও সবক’টিতে হেরেছে বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজি। বর্তমান ফ্র্যাঞ্চাইজির অধীনে ২০২২ সালে ফাইনালে উঠলেও রোমাঞ্চকর ম্যাচে কুমিল্লার কাছে মাত্র ১ রানে হেরে যায় বরিশাল। এর আগে ২০১২ সালে বিপিএলের প্রথম আসরে ফাইনালে উঠেছিল বরিশাল বার্নার্স নামে দলটি। কিন্তু ফাইনালে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কাছে ৮ উইকেটে হারে তারা। এরপর ২০১৫ সালে ফাইনাল উঠলেও কুমিল্লার কাছে ৩ উইকেটে হেরে শিরোপা জিততে পারেনি বরিশাল বুলস নামে খেলা দলটি। এবার লিগ পর্বে তৃতীয় স্থানে থেকে প্লে-অফের টিকিট পায় বরিশাল। প্লে-অফে এলিমিনেটর এবং দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ফাইনালে উঠে দক্ষিণ বাংলার দলটি। মুশফিকুর রহিমের মতে, প্লে-অফের দুটি জয় আত্মবিশ্বাস জোগাবে দলকে।

মুশফিক বলেন, ‘আমরা বুড়োদের দল এবং অনেক লোক আমাদের বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়ে বলেছে, এমন অভিজ্ঞতায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ট্রফি জিততে পারে না। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস ছিল, আমরা ফাইনাল খেলতে পারব।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর আমরা দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছি। শেষ একটি ম্যাচ আছে এবং আশা করি, আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলব।’ এবারের বিপিএলে টেবিলের তলানিতে থেকে আসর শেষ করা দুর্দান্ত ঢাকার কাছে হেরে যাত্রা শুরু করেছিল কুমিল্লা। এরপর ঘুরে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে থেকে প্লে-অফে ওঠে তারা। প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দল রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে প্রথম সুযোগেই ফাইনাল নিশ্চিত করে কুমিল্লা। হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তারা।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আহসান মঞ্জিলের সামনে বিপিএল ট্রফি নিয়ে ফটোশুটের কথা ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক লিটন দাস ও তামিম ইকবালের। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তাদের অনুপস্থিতিতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড)। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বরিশালের মেহেদী হাসান মিরাজ ও কুমিল্লার জাকের আলী অনিক ট্রফি নিয়ে ফটোশুটে অংশ নেন। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেও নানা অনিয়ম চলমান দশম বিপিএল মাঠে গড়ানোর আগেই নাটকীয়তার শুরু হয়েছিল। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ দিন আগেও অংশগ্রহণকারী ৭ দলের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি প্লেয়ারদের জার্সি দিতে পারেননি। এখানেই শেষ নয়, কোন দলের নেতৃত্ব কে দেবেন, তা জানা গেছে আসর শুরুর মাত্র দুদিন আগে।